পঞ্চগড় প্রতিনিধি: হিমালয় কন্যা খ্যাত উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। গত চার দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
দিনে রোদ আর গরমের রেশ থাকলেও রাত গভীর হতে না হতেই শুরু হয় শীতের তীব্রতা।
ঘন কুয়াশা নেই। তবে ভোরে হালকা কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়। মধ্যবৃত্ত আর নিম্ন মধ্যবৃত্তদের কাঁথা-কম্বল দিয়ে শুরু হয়েছে শীত নিবারণের আগাম প্রস্তুতি।
পঞ্চগড়ে সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে শীতের পদধ্বনি শুরু হয় এবং নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়। কিন্তু চলতি শীত মৌসুমে নভেম্বরের শুরু থেকে শীত শুরু হয়।
মঙ্গলবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। তবে সকালের পর থেকে সর্বত্র তীব্র রোদ দেখা গেছে।
গত শনিবার থেকে তিন দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে শুরু হয়েছে স্থানীয় লেপ-তোষক দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা। স্থানীয় বাজারে শীতের পোশাকের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শীতের কাপড়ের মজুদ বৃদ্ধি করছে।
এদিকে জেলার হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে শীত নিয়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তীব্র শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে তাদের কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, গত কয়েকদিন ধরে দিনে গরম আর রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। এমন বৈরি আবহাওয়ায় বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত নানা রোগ। শীত থেকে বাঁচতে রাতে মোটরবাইক চালকরা বিকেল থেকে গরম কাপড় পড়ছেন।
জেলা শহরের রাজনগর এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার ভাতিজার সর্দি শুরু হয়েছে। রাতে শীতের কারণেই মূলত এমন অবস্থা বলে চিকিৎসক জানায়। বর্তমানে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে নেবুলাইজার (গ্যাস) দেয়া হচ্ছে।
মসজিদ পাড়া মহল্লার রিকশাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি নিয়মিত ভোরের দিকে রিকশা নিয়ে বের হই।
কয়েকদিন ধরে বেশ ঠাণ্ডা শুরু হয়েছে। এমনিতেই শীতের সময় আমাদের ইনকাম কমে যায়। দুই বেলা খাবার টাকাই আয় করা যায় না।
শীতের কারণে মানুষজন রিকশায় উঠতে চায় না। এবার মনে হয় শীত আগের চেয়ে বেশি হবে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি। বর্তমানে আগের তুলনায় কম আয় হচ্ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে শিশুদের নানান সমস্যা দেখা দেয়।
বর্তমানে দিনে গরম এবং রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। এজন্য শিশুরা সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হতে পারে। তাদের ঠাণ্ডা থেকে সাবধান থাকাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে তেঁতুলিয়ায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত চারদিন ধরেই দেশের মধ্যে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অন্য এলাকার তুলনায় পঞ্চগড় একটি শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এখানের প্রতি বছর শীত মৌসুমের অধিকাংশ সময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। আমরা গত বছরও এখানকার শীত মোকাবেলা করেছি।
এখনও সেভাবে শীতের তীব্রতা শুরু হয়নি। তবে এবারও আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে। দ্রুত সময়ে দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটির সভা আহ্বান করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।