বানিজ্য ডেক্স: দেশের তিনটি প্রধান স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। আজ সোমবার ওই সব স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কার্যত বন্ধ ছিল। তবে কেউ আনুষ্ঠানিক কোনো কারণ বলতে পারছেন না।
ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধের আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা জারি করেনি বলে বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া এ ধরনের নির্দেশনা ভারতীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার দপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি বন্ধ করা হলে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়।
ভারত থেকে মূলত সাতক্ষীরার ভোমরা, দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। আজ বিকেলে বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার কল্যাণ মিত্র চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, সকালে এক ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। তারপর আর আসেনি। ভারতের রপ্তানি বন্ধের কোনো নির্দেশনার খবর তিনি জানেন না।
ভোমরা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার পারভেজ আমানও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানি কেন হচ্ছে না, তা কেউ তাঁকে কিছু বলেনি।
অবশ্য ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি শুনেছেন রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর জন্য রপ্তানিকারকেরা আপাতত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন।
হিলি স্থলবন্দরের কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল আলম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রোববার পর্যন্ত ভারত থেকে ১২৯টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা পরিমাণে প্রায় ৮০০ টন। সোমবার সারা দিন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, দুপুরের পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা তাদের সংকটের কথা জানিয়েছেন। তারা নিজ দেশেও (ভারত) পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছেন।
বাংলাদেশে যতটুকু পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। ভারতে দুই সপ্তাহ আগে দাম বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাংলাদেশেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
ঢাকার বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ জাত ও আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। দেশে গত বছর নভেম্বরে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মূল্যবৃদ্ধির শুরুটা হয়েছিল ভারত থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানিই নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে তিন শ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তখন আকাশ পথেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
ভারত গত মার্চ মাসে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সদস্য আবু রায়হান আলবেরুনী প্রথম আলোকে বলেন, দেশে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় এখন পেঁয়াজের চাহিদা কম। দেশে যা মজুত আছে, তা দিয়ে ভালোভাবেই চলবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মনিরুল ইসলাম, যশোর, রাজিউল ইসলাম, দিনাজপুর ও কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা।