ঢাকা ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নওগাঁয় ফজলুর রহমান হত্যা মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন Logo জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের আদেশ আটকে দিলেন আদালত Logo বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে হাজারো মানুষের ঢল, নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনাবাহিনী Logo শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালালে ভারতকে দায় নিতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা Logo নতুন দুই বিভাগ ও দেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের Logo নওগাঁ সীমান্ত থেকে ১ যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ Logo গাজীপুরে পিকআপভ্যান খাদে পড়ে তিন জন নিহত Logo নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে গাজা দখলের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প Logo মাকে মারধর করছিল ছেলে, শাসন করতে গিয়ে মামা খুন Logo পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই আ. লীগ নেতা গ্রেফতার

জয়পুরহাটের লতি চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না

কচুর লতি

কৃষি ডেস্কঃ  সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার লতি চাষিরা। বছরের পর বছর আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট লতির বাজার দখল করে রেখেছে।

এতে প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। জানা গেছে, জয়পুরহাটের কচুর লতি এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে।

আর এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বরং এখন জয়পুরহাটের পরিচয় বহনে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বুকেও বেশ ভূমিকা রাখছে কচুর লতি। অর্থকরী ফসল হিসেবে মর্যাদা লাভ করায় লতি এখন জেলা ব্র্যান্ডিং করছে।

তবে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ ফসল চাষে বেশি আগ্রহী হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সরেজমিন পাঁচবিবি উপজেলার বটতলীতে কচুর লতির বাজারে দেখা গেছে, সেই কাক ডাকা ভোর থেকেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা বাইসাইকেল, ভ্যান ও ভাঁড়ে সাজিয়ে লতি নিয়ে বাজারে আসছেন।

আর আসার পরপরই আগে থেকেই স্থায়ীভাবে বসা সেই আট-১০টি আড়তে তারা তাদের লতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের দাম দরের সুযোগ নেই।

জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে এ বাজারে বাবু, শামীম, রাজ্জাক, আমীর, মিজান, শান্টু, চঞ্চলসহ আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট পাইকার গ্রুপ রয়েছে।

যারা আগের দিন সন্ধ্যায় বসে ঠিক করেন পরদিন কী দামে লতি কিনবেন। আর এ সিন্ডিকেটের মূল হোতার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচবিবি পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক লতি ব্যবসায়ী।

অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে লতি কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।

এ বাজারে বাইরের কোনো পাইকারদের লতি কিনতে দেন না তারা। আর এ কারণে উপায় না পেয়ে তাদের কাছেই লতি তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

স্থানীয় হোটেল মালিক, চা বিক্রেতা, মুদি দোকানদার ও বেশ কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকটা আক্ষেপ করে জানালেন, শুধুমাত্র সহজ-সরল কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেই একেক জন দুই থেকে পাঁচটি করে ট্রাকের মালিক বনে গেছেন। যাদের এক সময় একটি করে ভালোমানের মোটরসাইকেল কেনারও অর্থ ছিল না।

বছরের পর বছর ধরে এ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে তাদের সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি কেজি সরু লতি কিনতে দেখা গেছে ২৭-২৮ টাকা দরে এবং মোটা লতির দাম দেওয়া হচ্ছিল ২৪-২৫ টাকা।

অথচ রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে সেদিন সরু লতি ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে এবং মোটা লতি ৪৫-৪৭ টাকা দরে পাইকারি কেনা-বেচা হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় পাইকার শান্টু ও শামীম বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে প্রতি কেজি লতি পাঠাতে কেনা দামের তুলনায় আট টাকার মতো বেশি খরচ হয়। আর সে কারণেই কম দামে কিনতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিন্ডিকেট দলের স্থানীয় কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিন্ডিকেটের দিন শেষ।

এসব অভিযোগ মিথ্যা। আর আমি এ লতি কেনা-বেচার সঙ্গে আগে জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখন সময় স্বল্পতার কারণে এ ব্যবসা করছি না।

এ ব্যাপারে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মাঝে মধ্যে আমিও এসব অভিযোগ শুনি। কিন্তু এর সত্যতা কেউ নিশ্চিত করেন না।

এছাড়া অভিযুক্ত কাউন্সিলরও বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে যাই হোক, কৃষকদের বৃহৎ স্বার্থে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরমান হোসেন বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়অ হবে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শুধুমাত্র পাঁচবিবি উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে ৫শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ হচ্ছে। আর শীত মৌসুমে ৮শ’-৯শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ করেন কৃষকরা।

ট্যাগস

নওগাঁয় ফজলুর রহমান হত্যা মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন

জয়পুরহাটের লতি চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না

আপডেট সময় ১২:১০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কৃষি ডেস্কঃ  সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার লতি চাষিরা। বছরের পর বছর আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট লতির বাজার দখল করে রেখেছে।

এতে প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। জানা গেছে, জয়পুরহাটের কচুর লতি এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে।

আর এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বরং এখন জয়পুরহাটের পরিচয় বহনে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বুকেও বেশ ভূমিকা রাখছে কচুর লতি। অর্থকরী ফসল হিসেবে মর্যাদা লাভ করায় লতি এখন জেলা ব্র্যান্ডিং করছে।

তবে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ ফসল চাষে বেশি আগ্রহী হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সরেজমিন পাঁচবিবি উপজেলার বটতলীতে কচুর লতির বাজারে দেখা গেছে, সেই কাক ডাকা ভোর থেকেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা বাইসাইকেল, ভ্যান ও ভাঁড়ে সাজিয়ে লতি নিয়ে বাজারে আসছেন।

আর আসার পরপরই আগে থেকেই স্থায়ীভাবে বসা সেই আট-১০টি আড়তে তারা তাদের লতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের দাম দরের সুযোগ নেই।

জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে এ বাজারে বাবু, শামীম, রাজ্জাক, আমীর, মিজান, শান্টু, চঞ্চলসহ আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট পাইকার গ্রুপ রয়েছে।

যারা আগের দিন সন্ধ্যায় বসে ঠিক করেন পরদিন কী দামে লতি কিনবেন। আর এ সিন্ডিকেটের মূল হোতার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচবিবি পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক লতি ব্যবসায়ী।

অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে লতি কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।

এ বাজারে বাইরের কোনো পাইকারদের লতি কিনতে দেন না তারা। আর এ কারণে উপায় না পেয়ে তাদের কাছেই লতি তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

স্থানীয় হোটেল মালিক, চা বিক্রেতা, মুদি দোকানদার ও বেশ কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকটা আক্ষেপ করে জানালেন, শুধুমাত্র সহজ-সরল কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেই একেক জন দুই থেকে পাঁচটি করে ট্রাকের মালিক বনে গেছেন। যাদের এক সময় একটি করে ভালোমানের মোটরসাইকেল কেনারও অর্থ ছিল না।

বছরের পর বছর ধরে এ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে তাদের সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি কেজি সরু লতি কিনতে দেখা গেছে ২৭-২৮ টাকা দরে এবং মোটা লতির দাম দেওয়া হচ্ছিল ২৪-২৫ টাকা।

অথচ রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে সেদিন সরু লতি ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে এবং মোটা লতি ৪৫-৪৭ টাকা দরে পাইকারি কেনা-বেচা হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় পাইকার শান্টু ও শামীম বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে প্রতি কেজি লতি পাঠাতে কেনা দামের তুলনায় আট টাকার মতো বেশি খরচ হয়। আর সে কারণেই কম দামে কিনতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিন্ডিকেট দলের স্থানীয় কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিন্ডিকেটের দিন শেষ।

এসব অভিযোগ মিথ্যা। আর আমি এ লতি কেনা-বেচার সঙ্গে আগে জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখন সময় স্বল্পতার কারণে এ ব্যবসা করছি না।

এ ব্যাপারে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মাঝে মধ্যে আমিও এসব অভিযোগ শুনি। কিন্তু এর সত্যতা কেউ নিশ্চিত করেন না।

এছাড়া অভিযুক্ত কাউন্সিলরও বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে যাই হোক, কৃষকদের বৃহৎ স্বার্থে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরমান হোসেন বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়অ হবে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শুধুমাত্র পাঁচবিবি উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে ৫শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ হচ্ছে। আর শীত মৌসুমে ৮শ’-৯শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ করেন কৃষকরা।