ঢাকা ০৩:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ

জয়পুরহাটের লতি চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না

কচুর লতি

কৃষি ডেস্কঃ  সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার লতি চাষিরা। বছরের পর বছর আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট লতির বাজার দখল করে রেখেছে।

এতে প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। জানা গেছে, জয়পুরহাটের কচুর লতি এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে।

আর এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বরং এখন জয়পুরহাটের পরিচয় বহনে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বুকেও বেশ ভূমিকা রাখছে কচুর লতি। অর্থকরী ফসল হিসেবে মর্যাদা লাভ করায় লতি এখন জেলা ব্র্যান্ডিং করছে।

তবে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ ফসল চাষে বেশি আগ্রহী হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সরেজমিন পাঁচবিবি উপজেলার বটতলীতে কচুর লতির বাজারে দেখা গেছে, সেই কাক ডাকা ভোর থেকেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা বাইসাইকেল, ভ্যান ও ভাঁড়ে সাজিয়ে লতি নিয়ে বাজারে আসছেন।

আর আসার পরপরই আগে থেকেই স্থায়ীভাবে বসা সেই আট-১০টি আড়তে তারা তাদের লতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের দাম দরের সুযোগ নেই।

জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে এ বাজারে বাবু, শামীম, রাজ্জাক, আমীর, মিজান, শান্টু, চঞ্চলসহ আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট পাইকার গ্রুপ রয়েছে।

যারা আগের দিন সন্ধ্যায় বসে ঠিক করেন পরদিন কী দামে লতি কিনবেন। আর এ সিন্ডিকেটের মূল হোতার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচবিবি পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক লতি ব্যবসায়ী।

অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে লতি কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।

এ বাজারে বাইরের কোনো পাইকারদের লতি কিনতে দেন না তারা। আর এ কারণে উপায় না পেয়ে তাদের কাছেই লতি তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

স্থানীয় হোটেল মালিক, চা বিক্রেতা, মুদি দোকানদার ও বেশ কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকটা আক্ষেপ করে জানালেন, শুধুমাত্র সহজ-সরল কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেই একেক জন দুই থেকে পাঁচটি করে ট্রাকের মালিক বনে গেছেন। যাদের এক সময় একটি করে ভালোমানের মোটরসাইকেল কেনারও অর্থ ছিল না।

বছরের পর বছর ধরে এ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে তাদের সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি কেজি সরু লতি কিনতে দেখা গেছে ২৭-২৮ টাকা দরে এবং মোটা লতির দাম দেওয়া হচ্ছিল ২৪-২৫ টাকা।

অথচ রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে সেদিন সরু লতি ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে এবং মোটা লতি ৪৫-৪৭ টাকা দরে পাইকারি কেনা-বেচা হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় পাইকার শান্টু ও শামীম বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে প্রতি কেজি লতি পাঠাতে কেনা দামের তুলনায় আট টাকার মতো বেশি খরচ হয়। আর সে কারণেই কম দামে কিনতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিন্ডিকেট দলের স্থানীয় কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিন্ডিকেটের দিন শেষ।

এসব অভিযোগ মিথ্যা। আর আমি এ লতি কেনা-বেচার সঙ্গে আগে জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখন সময় স্বল্পতার কারণে এ ব্যবসা করছি না।

এ ব্যাপারে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মাঝে মধ্যে আমিও এসব অভিযোগ শুনি। কিন্তু এর সত্যতা কেউ নিশ্চিত করেন না।

এছাড়া অভিযুক্ত কাউন্সিলরও বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে যাই হোক, কৃষকদের বৃহৎ স্বার্থে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরমান হোসেন বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়অ হবে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শুধুমাত্র পাঁচবিবি উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে ৫শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ হচ্ছে। আর শীত মৌসুমে ৮শ’-৯শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ করেন কৃষকরা।

ট্যাগস

আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

জয়পুরহাটের লতি চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না

আপডেট সময় ১২:১০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কৃষি ডেস্কঃ  সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার লতি চাষিরা। বছরের পর বছর আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট লতির বাজার দখল করে রেখেছে।

এতে প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। জানা গেছে, জয়পুরহাটের কচুর লতি এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে।

আর এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বরং এখন জয়পুরহাটের পরিচয় বহনে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বুকেও বেশ ভূমিকা রাখছে কচুর লতি। অর্থকরী ফসল হিসেবে মর্যাদা লাভ করায় লতি এখন জেলা ব্র্যান্ডিং করছে।

তবে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ ফসল চাষে বেশি আগ্রহী হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সরেজমিন পাঁচবিবি উপজেলার বটতলীতে কচুর লতির বাজারে দেখা গেছে, সেই কাক ডাকা ভোর থেকেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা বাইসাইকেল, ভ্যান ও ভাঁড়ে সাজিয়ে লতি নিয়ে বাজারে আসছেন।

আর আসার পরপরই আগে থেকেই স্থায়ীভাবে বসা সেই আট-১০টি আড়তে তারা তাদের লতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের দাম দরের সুযোগ নেই।

জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে এ বাজারে বাবু, শামীম, রাজ্জাক, আমীর, মিজান, শান্টু, চঞ্চলসহ আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট পাইকার গ্রুপ রয়েছে।

যারা আগের দিন সন্ধ্যায় বসে ঠিক করেন পরদিন কী দামে লতি কিনবেন। আর এ সিন্ডিকেটের মূল হোতার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচবিবি পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক লতি ব্যবসায়ী।

অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে লতি কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।

এ বাজারে বাইরের কোনো পাইকারদের লতি কিনতে দেন না তারা। আর এ কারণে উপায় না পেয়ে তাদের কাছেই লতি তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

স্থানীয় হোটেল মালিক, চা বিক্রেতা, মুদি দোকানদার ও বেশ কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকটা আক্ষেপ করে জানালেন, শুধুমাত্র সহজ-সরল কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেই একেক জন দুই থেকে পাঁচটি করে ট্রাকের মালিক বনে গেছেন। যাদের এক সময় একটি করে ভালোমানের মোটরসাইকেল কেনারও অর্থ ছিল না।

বছরের পর বছর ধরে এ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে তাদের সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি কেজি সরু লতি কিনতে দেখা গেছে ২৭-২৮ টাকা দরে এবং মোটা লতির দাম দেওয়া হচ্ছিল ২৪-২৫ টাকা।

অথচ রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে সেদিন সরু লতি ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে এবং মোটা লতি ৪৫-৪৭ টাকা দরে পাইকারি কেনা-বেচা হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় পাইকার শান্টু ও শামীম বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে প্রতি কেজি লতি পাঠাতে কেনা দামের তুলনায় আট টাকার মতো বেশি খরচ হয়। আর সে কারণেই কম দামে কিনতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিন্ডিকেট দলের স্থানীয় কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিন্ডিকেটের দিন শেষ।

এসব অভিযোগ মিথ্যা। আর আমি এ লতি কেনা-বেচার সঙ্গে আগে জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখন সময় স্বল্পতার কারণে এ ব্যবসা করছি না।

এ ব্যাপারে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মাঝে মধ্যে আমিও এসব অভিযোগ শুনি। কিন্তু এর সত্যতা কেউ নিশ্চিত করেন না।

এছাড়া অভিযুক্ত কাউন্সিলরও বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে যাই হোক, কৃষকদের বৃহৎ স্বার্থে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরমান হোসেন বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়অ হবে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শুধুমাত্র পাঁচবিবি উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে ৫শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ হচ্ছে। আর শীত মৌসুমে ৮শ’-৯শ’ হেক্টর জমিতে লতি চাষ করেন কৃষকরা।