হবিগঞ্জ, প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ছালেমা বেগমকে (৪৫) গলা কেটে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ছোট মেয়ে আর সৌদিপ্রবাসী বড় মেয়ের জামাতার অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পরে এ ঘটনা ডাকাতি বলে প্রচারণার চেষ্টা চালানো হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান শ্যালিকা ও দুলাভাই।
বুধবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা।
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসপি মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, উপজেলার করগাঁও গ্রামের হিরন মিয়ার স্ত্রী ছালেমা বেগম সাত সন্তানের জননী।
স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করেন। মেয়ে সেজমিন আক্তার শান্তিকে নিয়ে একই গ্রামের ভাগনে আব্দুর রহমানের বাসায় বসবাস করেন ছালেমা।
বড় মেয়ে জেসমিন আক্তারকে একই গ্রামের মোগল মিয়ার কাছে বিয়ে দেন। বিয়ের কিছুদিন পর জেসমিন সৌদি আরবে চলে যান।
তখন থেকে মোগল মিয়া শাশুড়ির সঙ্গে বসবাস করেন। এর মধ্যেই শ্যালিকা সেজমিন আক্তার শান্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন মোগল মিয়া।
বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের একাধিকবার সতর্ক করেন ছালেমা বেগম। ঈদুল আজহার দিনগত রাত দেড়টার দিকে সবাই ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে শ্যালিকার রুমে যান মোগল মিয়া।
সেখানে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন তারা। ঘুম ভেঙে গেলে ছোট মেয়ের ঘরে গিয়ে মেয়ে ও জামাইকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান ছালেমা।
এ সময় তিনি চিৎকার করেন। তাৎক্ষণিক ছালেমা বেগমের মুখ চেপে ধরেন তারা। এতেও দমাতে না পেরে ঘরে থাকা দা দিয়ে শাশুড়ির গলা, বুক ও ঘাড়ে একাধিক কোপ দেন মোগল মিয়া।
এ সময় মেয়ে শান্তি মায়ের পা চেপে ধরেন। মৃত্যু নিশ্চিত করে মোগল মিয়া শ্যালিকাকে বলেন আমি চলে যাওয়ার পর ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দেবে।
এরপর প্রতিবেশী আব্দুল মুমিন ওরফে রুমান এবং নোমান এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়ে দেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শান্তি নিজের রক্তমাখা জামা বদলে তাই করেন।
তার চিৎকারে লোকজন ছুটে আসেন। পরদিন মেয়ের বক্তব্য শোনে মুমিন ও রুমানের নামে মামলা করেন নিহতের স্বামী। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা-
নিযুক্ত হন নবীগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মো. আবু সাঈদ। তিনি ঘরে তল্লাশি চালিয়ে মোগল মিয়া ও শান্তির রক্তমাখা জামা-কাপড় উদ্ধার করেন।
পরবর্তীতে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন শ্যালিকা ও দুলাভাই। মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের সিনিয়র-
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। এ সময় হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন শ্যালিকা ও দুলাভাই।