ঢাকা ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘যেখানেই যাই মানুষ বলে, কাল ওই ভিডিওটা দেখেছি’

কার্ডিফে আশরাফুলের সেঞ্চুরি উদযাপন

ক্রীড়া ডেস্কঃ  সেই দলটার অনেকেই থাকবেন সর্বকালের সেরা একাদশে। টানা তিনবার বিশ্বকাপ জেতা দল বলে কথা। ২০০৫ সালের রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কথা বলছিলাম।

সেই দলটাকেই ১৫ বছর আগে আজকের এই দিনে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল এখনো দিনটাকে স্মরণ করতে গেলে নিজেই অবাক হন।

ওই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ! তার নাকি এখনো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়, ওই সময়টাই ছিল অন্যরকম। সেই অস্ট্রেলিয়া দলের কথা চিন্তা করলেই এখনো অন্যরকম লাগে যে এই অস্ট্রেলিয়া দলকে আমরা হারিয়েছিলাম।

ভাগ্যে থাকলে ঠেকাবে কে বলুন। সেদিন ভাগ্য সহায় ছিল বাংলাদেশের। সেদিন কার্ডিফের সকালটা ছিল বোলারদের।

পন্টিং কী বুঝে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। সাত ব্যাটসম্যানের দল বলেই হয়তো পন্টিংয়ের এত আত্মবিশ্বাস ছিল।

আশরাফুল এখনো পন্টিংয়ের সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেন না, ভাগ্য লাগে সবকিছুতেই। সেদিন টস হারার পরও বল করি আমরা।

প্রথম ১৫ ওভার খুব কঠিন ছিল উইকেট। সেখানে আমরা ব্যাটিং করলে আমরা ৬০-৭০ রানে অলআউট হলেও অবাক হতাম না। উইকেট ওইরকমই ছিল। মাশরাফি, নাজমুল, তাপস ভাইরা খুবই ভালো বোলিং করেছিল প্রথম স্পেলে।

তবু দলটা অস্ট্রেলিয়া। সহজে হাল ছাড়ার পাত্র তারা নয়। শুরুতে ধাক্কা খেলেও সামলে ওঠে ঠিকই।

আর সেদিন কার্ডিফের উইকেট সময়ের সঙ্গে ভালো হতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লার্কের জোড়া ফিফটির পর শেষের-

দিকে দ্রুত কিছু রান যোগ করেন মাইক হাসি ও সাইমন ক্যাটিচ। শেষ পর্যন্ত ঠিকই ২৪৯ রান করে বসে অস্ট্রেলীয়রা। এই যুগে অস্ট্রেলিয়ার সেই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রানটা ৩৫০ রানের সমান।

ভয়ডরহীন তরুণ আশরাফুলের এতো কিসের চিন্তা। তিনি যেন খেলতে নামলেন পাড়ার কোন ক্রিকেট ম্যাচে।

গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, মাইকেল কাসপ্রোভিচ ও ব্র্যাড হগদের খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। বোলারদের নাম, যশ, খ্যাতি না দেখে দেখছিলেন সাদা কুকাবুরা বলটাকে।

তাঁর সেঞ্চুরিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ তুলির আঁচড়টা দেন আরেক তরুণ আফতাব আহমেদ।

রান তাড়া করার স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে আশরাফুল বলছিলেন, অস্ট্রেলিয়া দল বলেই সেই উইকেটে ওরা আড়াই শ রান করে। পরে উইকেট ভালো হয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া শেষ দশ ওভারে ৯০ রান করে। আর তখন আড়াই শ রান অনেক রান। অস্ট্রেলিয়া চিন্তাই করেনি আমরা এত রান করে ফেলব।

আর তখন আমরা রান তাড়া করতে গেলে ১৭০-১৮০ করতাম। ভাগ্য ছিল।

আমি ভালো নক খেলেছিলাম। সুমন ভাইর সঙ্গে ভালো জুটি হয়। ফিনিশিং দেয় আফতাব আর রফিক ভাই। বোলাররা ভালো করেছে। সবাই ভালো খেলেছি।

কার্ডিফ রূপকথার গল্প এখনো রোমন্থন করে বাংলাদেশি সমর্থকেরা। ইউটিউবে ‘আশরাফুল’ লিখলে প্রথমেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সেঞ্চুরি, সেই ম্যাচের হাইলাইটস চলে আসে।

১৫ বছর হয়ে গেল, এখনো স্মৃতি তরতাজা। বাংলাদেশ ক্রিকেট যত দিন থাকবে, তত দিন নিশ্চয়ই তরতাজা থাকবে কার্ডিফ।

আশরাফুল বলছিলেন, আমি এখনো যেখানেই যাই, মানুষ বলে, ভাই কাল আপনার ওই ইনিংসের ভিডিও দেখেছি। এখনো মানুষ ওই ম্যাচের কথা বলে, দেশে, দেশের বাইরে।

আমরা তো অনেকেই ক্রিকেট খেলেছি। এর মধ্যে কয়জনকেই মানুষ এভাবে মনে রাখতে পারে। আমার নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। মানুষ তো যার যার পেশায় এমন কিছু করতে চায় যেটা মানুষ মনে রাখবে।

 

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

‘যেখানেই যাই মানুষ বলে, কাল ওই ভিডিওটা দেখেছি’

আপডেট সময় ০৭:৫৩:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০

ক্রীড়া ডেস্কঃ  সেই দলটার অনেকেই থাকবেন সর্বকালের সেরা একাদশে। টানা তিনবার বিশ্বকাপ জেতা দল বলে কথা। ২০০৫ সালের রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কথা বলছিলাম।

সেই দলটাকেই ১৫ বছর আগে আজকের এই দিনে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল এখনো দিনটাকে স্মরণ করতে গেলে নিজেই অবাক হন।

ওই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ! তার নাকি এখনো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়, ওই সময়টাই ছিল অন্যরকম। সেই অস্ট্রেলিয়া দলের কথা চিন্তা করলেই এখনো অন্যরকম লাগে যে এই অস্ট্রেলিয়া দলকে আমরা হারিয়েছিলাম।

ভাগ্যে থাকলে ঠেকাবে কে বলুন। সেদিন ভাগ্য সহায় ছিল বাংলাদেশের। সেদিন কার্ডিফের সকালটা ছিল বোলারদের।

পন্টিং কী বুঝে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। সাত ব্যাটসম্যানের দল বলেই হয়তো পন্টিংয়ের এত আত্মবিশ্বাস ছিল।

আশরাফুল এখনো পন্টিংয়ের সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেন না, ভাগ্য লাগে সবকিছুতেই। সেদিন টস হারার পরও বল করি আমরা।

প্রথম ১৫ ওভার খুব কঠিন ছিল উইকেট। সেখানে আমরা ব্যাটিং করলে আমরা ৬০-৭০ রানে অলআউট হলেও অবাক হতাম না। উইকেট ওইরকমই ছিল। মাশরাফি, নাজমুল, তাপস ভাইরা খুবই ভালো বোলিং করেছিল প্রথম স্পেলে।

তবু দলটা অস্ট্রেলিয়া। সহজে হাল ছাড়ার পাত্র তারা নয়। শুরুতে ধাক্কা খেলেও সামলে ওঠে ঠিকই।

আর সেদিন কার্ডিফের উইকেট সময়ের সঙ্গে ভালো হতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লার্কের জোড়া ফিফটির পর শেষের-

দিকে দ্রুত কিছু রান যোগ করেন মাইক হাসি ও সাইমন ক্যাটিচ। শেষ পর্যন্ত ঠিকই ২৪৯ রান করে বসে অস্ট্রেলীয়রা। এই যুগে অস্ট্রেলিয়ার সেই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রানটা ৩৫০ রানের সমান।

ভয়ডরহীন তরুণ আশরাফুলের এতো কিসের চিন্তা। তিনি যেন খেলতে নামলেন পাড়ার কোন ক্রিকেট ম্যাচে।

গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, মাইকেল কাসপ্রোভিচ ও ব্র্যাড হগদের খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। বোলারদের নাম, যশ, খ্যাতি না দেখে দেখছিলেন সাদা কুকাবুরা বলটাকে।

তাঁর সেঞ্চুরিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ তুলির আঁচড়টা দেন আরেক তরুণ আফতাব আহমেদ।

রান তাড়া করার স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে আশরাফুল বলছিলেন, অস্ট্রেলিয়া দল বলেই সেই উইকেটে ওরা আড়াই শ রান করে। পরে উইকেট ভালো হয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া শেষ দশ ওভারে ৯০ রান করে। আর তখন আড়াই শ রান অনেক রান। অস্ট্রেলিয়া চিন্তাই করেনি আমরা এত রান করে ফেলব।

আর তখন আমরা রান তাড়া করতে গেলে ১৭০-১৮০ করতাম। ভাগ্য ছিল।

আমি ভালো নক খেলেছিলাম। সুমন ভাইর সঙ্গে ভালো জুটি হয়। ফিনিশিং দেয় আফতাব আর রফিক ভাই। বোলাররা ভালো করেছে। সবাই ভালো খেলেছি।

কার্ডিফ রূপকথার গল্প এখনো রোমন্থন করে বাংলাদেশি সমর্থকেরা। ইউটিউবে ‘আশরাফুল’ লিখলে প্রথমেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সেঞ্চুরি, সেই ম্যাচের হাইলাইটস চলে আসে।

১৫ বছর হয়ে গেল, এখনো স্মৃতি তরতাজা। বাংলাদেশ ক্রিকেট যত দিন থাকবে, তত দিন নিশ্চয়ই তরতাজা থাকবে কার্ডিফ।

আশরাফুল বলছিলেন, আমি এখনো যেখানেই যাই, মানুষ বলে, ভাই কাল আপনার ওই ইনিংসের ভিডিও দেখেছি। এখনো মানুষ ওই ম্যাচের কথা বলে, দেশে, দেশের বাইরে।

আমরা তো অনেকেই ক্রিকেট খেলেছি। এর মধ্যে কয়জনকেই মানুষ এভাবে মনে রাখতে পারে। আমার নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। মানুষ তো যার যার পেশায় এমন কিছু করতে চায় যেটা মানুষ মনে রাখবে।