খুলনা প্রতিনিধিঃ ত্রাণ না পেয়ে ক্ষোভে দুঃখে ঋণ করে উল্টে ত্রাণ দিলেন খুলনার দাকোপের এক দরিদ্র হোটেল শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে।
সূত্রে জানা যায় উক্ত ওয়ার্ডের পিযূশ কুমার সাহা, চালনার গাজী হোটেলের একজন কর্মচারী। তার স্ত্রী ইলা রানী সাহা ঘরে বসে সামান্য দর্জি কাজ করেন।
কিন্তু চারিদিকে সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েন। দৈনিকের খাবার জোগাড় করাই তাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকার কাজ হারানো মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
এ কাজে এগিয়ে এসেছেন সমাজের অনেক বিত্তবান ও রাজনৈতিক নেতারা। সরকারের পাশাপাশি তারাও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে গরীব মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। তারই অংশ হিসাবে চালনার ৬ নং ওয়ার্ডে সরকারি ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। সেখানে পিযূষের পরিবারের নাম লেখা হয়নি।
তারপর দাকোপ উপজেলা আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতা নিজের তহবিল থেকে ত্রাণ দেন। তার উদ্দেশ্য ছিল অত্যন্ত মহৎ। কিন্তু তিনি এই ত্রাণ বিতরণের জন্য এক যুবলীগ নেতা ও জনৈক এক ব্যবসায়ী কে দায়িত্ব দেন।
তারা উক্ত মানবহিতৈশীর কথা না শুনে নিজেদের ইচ্ছামত মুখ চিনে নিজেদের লোকজনদের তালিকাভুক্ত করে। এই তালিকায় অনেক বিত্তবানদের নামও চলে আসে।
পিযূষ সাহা আশা করেছিলেন অন্তত এই আওয়ামী লীগ নেতার ত্রাণটি তিনি পাবেন। কিন্তু সেখানেও তিনি বঞ্চিত হন। বঞ্চিত হয় আরও অনেক দুঃস্থ, অসহায় মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে তার স্ত্রী ইলা রানী সাহা উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিসে জানাতে গেলে এক প্রবীণ নেতা তাকে তিরস্কার করে তাড়িয়ে দেয়। তখন ইলা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসে এবং তার স্বামীকে সব কথা খুলে বলেন।
তখন পিযূশ হতবাক হয়ে যান এবং বলেন, “আমরা গরীব বলে আমাদের কি সম্মান থাকতে নেই”। তারপর পীযূশ সাহা তার পাড়ার অনেক অসহায়, ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেন।
স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সে বিগত ১১ এপ্রিল থেকে চালনা শহীদ মিনার এলাকার অতি দরিদ্র বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
ত্রাণ প্রাপ্তদের ভিতরে ওবায়দুল শেখ, শ্যামল মণ্ডল ও সাগর বলেন, এই দুঃসময়ে পিযূষ সাহা নিজে খেতে পারেনা অথচ ঋণ করে আমাদের ত্রাণ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তার এই নিঃস্বার্থ দানের কথা কোনদিন ভুলব না। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।