ঢাকা ১২:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে ১১ বাংলাদেশি মৃত্যু

গতকাল একদিনেই রেকর্ড ২ হাজার ১০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন

আন্তর্যুজাতিক ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে একদিনেই ১১ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই মারা গেছে ১০ জন। এ নিয়ে করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১২২ জন বাংলাদেশি মারা গেলেন।

 

এছাড়া দেশটিতে কমপক্ষে আরও তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নিউইয়র্কের বাসিন্দা।

জানা গেছে, শনিবার নিউইয়র্ক শহরেই করোনাভাইরাসে দুই নারীসহ সাত বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তারা হলেন- পুলিশের ক্যাপ্টেন খন্দকার আব্দুল্লাহর বাবা খন্দকার সাদেক, নিউইয়র্ক ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জয়দেব সরকার (৫৫), শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা খন্দকার মোসাদ্দেক আলী, আসাদুজ্জামান লালা, দেওয়ান আফজাল চৌধুরী, শারমীন আহমেদ চৌধুরী নীলা (৫২), ষাটোর্ধ্ব আজিজুন্নেসা।

এ ছাড়া নিউইয়র্কের আপস্টেট বাফেলো সিটিতে মারা গেছেন আরও দুজন। তারা হলেন- মোহাম্মদ জাকির (৩৮) ও সামসুস জহির (৪০)। অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটির পাশের শহর লং আইল্যান্ডের বাসিন্দা সিলেটের একটি চা বাগানের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার এ জামান (৭০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একইদিন নিউইয়র্কের বাইরে মেরিল্যান্ডে প্রথম করোনায় মারা যান এক বাংলাদেশি চিকিৎসক। নাম ডা. আব্দুল মান্নান (৮০)।

নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এক বাংলাদেশি বলেন, হাসপাতালটিতে এখন যত রোগী ভর্তি আছে, তার ৯৫ শতাংশই হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। প্রচুর রোগী মারা যাচ্ছে সেখানে। হাসপাতালটির চারপাশে প্রায় ১০ মাইল ব্যাসার্ধের এলাকার অধিকাংশই অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। বেশিরভাগ অভিবাসী সম্প্রদায়ের। তাদের জীবনযাপন বা চলাফেরা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের নতুন বসতি আপস্টেটের বাফেলো সিটিতে করোনা আক্রান্ত দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় মসজিদে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে এসে আক্রান্ত হন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় মহামারি করোনাভাইরোসে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এখন ৫ লাখ ১ হাজার ৬১৫। আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেনে এই সংখ্যাটা ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ হাজার ৭৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশটির সব অঙ্গরাজ্য এবং অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য।

নিউইয়র্ক মহানগরীতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে এতবেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানে এমন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে যে, নিরুপায় হয়ে লাশগুলোকে গণকবর দেয়া হচ্ছে।

মহামারি করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল একদিনেই রেকর্ড ২ হাজার ১০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান শহর থেকে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া করোনাভাইরাস গত সাড়ে তিন মাস সময়ের মধ্যে কোনো দেশে একদিনে এত মানুষ মারা যায়নি।

শুধু নিউইয়র্কে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের কোনো দেশে এত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। আজকের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যায় সবার উপরে থাকা ইতালিকেও (১৮ হাজার ৮৪৯) ছাড়িয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

করোনা মোকাবিলায় হোয়াইট হাউসে গঠিত টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ড. ডেবোরাহ বার্ক্স বলেছেন, ‘সংক্রমণের হার স্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ মিললেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো আক্রান্তের ‘সর্বোচ্চ শিখরে’ পৌঁছায়নি।’ অর্থাৎ সেখানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে ১১ বাংলাদেশি মৃত্যু

আপডেট সময় ০৯:৪২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০

আন্তর্যুজাতিক ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে একদিনেই ১১ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই মারা গেছে ১০ জন। এ নিয়ে করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১২২ জন বাংলাদেশি মারা গেলেন।

 

এছাড়া দেশটিতে কমপক্ষে আরও তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নিউইয়র্কের বাসিন্দা।

জানা গেছে, শনিবার নিউইয়র্ক শহরেই করোনাভাইরাসে দুই নারীসহ সাত বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তারা হলেন- পুলিশের ক্যাপ্টেন খন্দকার আব্দুল্লাহর বাবা খন্দকার সাদেক, নিউইয়র্ক ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জয়দেব সরকার (৫৫), শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা খন্দকার মোসাদ্দেক আলী, আসাদুজ্জামান লালা, দেওয়ান আফজাল চৌধুরী, শারমীন আহমেদ চৌধুরী নীলা (৫২), ষাটোর্ধ্ব আজিজুন্নেসা।

এ ছাড়া নিউইয়র্কের আপস্টেট বাফেলো সিটিতে মারা গেছেন আরও দুজন। তারা হলেন- মোহাম্মদ জাকির (৩৮) ও সামসুস জহির (৪০)। অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটির পাশের শহর লং আইল্যান্ডের বাসিন্দা সিলেটের একটি চা বাগানের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার এ জামান (৭০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একইদিন নিউইয়র্কের বাইরে মেরিল্যান্ডে প্রথম করোনায় মারা যান এক বাংলাদেশি চিকিৎসক। নাম ডা. আব্দুল মান্নান (৮০)।

নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এক বাংলাদেশি বলেন, হাসপাতালটিতে এখন যত রোগী ভর্তি আছে, তার ৯৫ শতাংশই হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। প্রচুর রোগী মারা যাচ্ছে সেখানে। হাসপাতালটির চারপাশে প্রায় ১০ মাইল ব্যাসার্ধের এলাকার অধিকাংশই অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। বেশিরভাগ অভিবাসী সম্প্রদায়ের। তাদের জীবনযাপন বা চলাফেরা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের নতুন বসতি আপস্টেটের বাফেলো সিটিতে করোনা আক্রান্ত দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় মসজিদে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে এসে আক্রান্ত হন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় মহামারি করোনাভাইরোসে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এখন ৫ লাখ ১ হাজার ৬১৫। আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেনে এই সংখ্যাটা ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ হাজার ৭৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশটির সব অঙ্গরাজ্য এবং অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য।

নিউইয়র্ক মহানগরীতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে এতবেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানে এমন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে যে, নিরুপায় হয়ে লাশগুলোকে গণকবর দেয়া হচ্ছে।

মহামারি করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল একদিনেই রেকর্ড ২ হাজার ১০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান শহর থেকে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া করোনাভাইরাস গত সাড়ে তিন মাস সময়ের মধ্যে কোনো দেশে একদিনে এত মানুষ মারা যায়নি।

শুধু নিউইয়র্কে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের কোনো দেশে এত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। আজকের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যায় সবার উপরে থাকা ইতালিকেও (১৮ হাজার ৮৪৯) ছাড়িয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

করোনা মোকাবিলায় হোয়াইট হাউসে গঠিত টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ড. ডেবোরাহ বার্ক্স বলেছেন, ‘সংক্রমণের হার স্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ মিললেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো আক্রান্তের ‘সর্বোচ্চ শিখরে’ পৌঁছায়নি।’ অর্থাৎ সেখানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।