ঢাকা ০১:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসকদের জন্য নিজের বাসভবন ছাড়ছেন ব্যারিস্টার সুমন

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও তার চুনারুঘাটের ডুপ্লেক্স বাসা (ফাইল ছবি)

স্টাফ রিপোর্টারঃ  প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান এই লকডাউন পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ সকল কর্মকর্তাদের জন্য চুনারুঘাটে নিজের ডুপ্লেক্স বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

শনিবার (১১ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যমকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সুমন।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, এর আগে আমার একটা গাড়ি দিয়েছিলাম, সেই গাড়িতে চিকিৎসকদের নিয়ে আসতে অনেক সমস্যা হয়। একটি গাড়িতে চিকিৎসকদের হচ্ছে না।

তাই তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে তারা আরও বেশি মানুষদের সেবা দিতে পারবেন। বর্তমানে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ সকল কর্মকর্তাদের (মোট ১৭ জন) সুবিধার্থে পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি চুনারুঘাটে নিজের ডুপ্লেক্স বাসা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সুমন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএ মুমিন উদ্দিন চৌধুরীর কাছে প্রস্তাব আকারে ইতোমধ্যেই তিনি বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। যে কোনো সময় চিকিৎসকরা তার বাসায় উঠতে পারবেন এবং করোনা ভাইরাসের এই সময়টাতে তারা তার বাসায় থাকতে পারবেন।

বাসা ছেড়ে দিলে আপনি কোথায় থাকবেন জানতে চাইলে সুমন বলেন, আমি অন্যত্র নিজের থাকার ব্যবস্থা করব। আমি চাই চিকিৎসকরা এই সময়টাতে মানুষদের নির্বিঘ্নে সেবা প্রদান করুক এবং নিশ্চিন্তে মানুষের জন্য কাজ করুক। কেবল বাসা ছেড়ে দেওয়া নয়। চিকিৎসকদের সুবিধার্থে আমার পক্ষে যা সম্ভব আমি তাই করব।

তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা যেহেতু নিউইয়র্কে বসবাস করেন, তাই এখন এই বাড়িতে আমি ছাড়া আমার পরিবারের কোনো সদস্য নেই। যুদ্ধ যেহেতু শুরু হয়েছে, মরলে শহীদ, বাঁচলে সবাইকে নিয়েই বাঁচব। তাই দেশের অন্যান্যদের উৎসাহিত করতে এই বাড়ি চিকিৎসকদের জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।

সেবা পেতে হলে চিকিৎসকদেরও তেমন সার্বিক সামগ্রী ও সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সুমন বলেন, চিকিৎসকদের বদনাম করে লাভ কী? তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নেবেন, কিন্তু তাদের সুবিধা দেবেন না এটা তো হতে পারে না। যেখানে আমেরিকায় চিকিৎসক-নার্সদের জন্য মানুষ রান্না করে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন, এখানে মানুষের সেবার জন্য তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করব না এটা তো হতে পারে না।

সুমন বলেন, চিকিৎসকরা বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করার কারণে রোগী দেখার জন্য আসতে সমস্যা হয়। যেহেতু লকডাউনে পুরো এলাকায় গাড়ি চলাচল কম করে চিকিৎসকদের হাসপাতাল আসার ইচ্ছে থাকলেও আসা হয়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, আমার উপজেলায় বড় কোনো হোটেল নেই। ভেবেছিলাম বড় হোটেল থাকলে সেটাই ভাড়া নেব। কিন্তু ভেবে দেখলাম আমার একটি বড় বাড়ি রয়েছে। যেখানে আমি একা আছি। এখন বাড়ি ছেড়ে আমি অন্য কোথাও অবস্থান করব।

গত ২৮ মার্চ নিজ চুনারুঘাট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িটি দিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন সুমন। এ সময় অন্য বিত্তবান ও নেতাদেরও দেশের ক্রান্তিলগ্নে এভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। গাড়িটি দেয়ার সময় সুমন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীও (পিপিই) দেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের।

পরে নিজের এলাকা চুনারুঘাটে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য তিনি পাঁচজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল টিমও গঠন করেন। সুমন তার প্রসিকিউটর পদের ৪১ দিনের বেতনের এক লাখ ৩০ হাজার টাকাও দেন অসহায়দের মাঝে।

ট্যাগস

চিকিৎসকদের জন্য নিজের বাসভবন ছাড়ছেন ব্যারিস্টার সুমন

আপডেট সময় ০৫:২৩:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০

স্টাফ রিপোর্টারঃ  প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান এই লকডাউন পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ সকল কর্মকর্তাদের জন্য চুনারুঘাটে নিজের ডুপ্লেক্স বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

শনিবার (১১ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যমকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সুমন।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, এর আগে আমার একটা গাড়ি দিয়েছিলাম, সেই গাড়িতে চিকিৎসকদের নিয়ে আসতে অনেক সমস্যা হয়। একটি গাড়িতে চিকিৎসকদের হচ্ছে না।

তাই তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে তারা আরও বেশি মানুষদের সেবা দিতে পারবেন। বর্তমানে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ সকল কর্মকর্তাদের (মোট ১৭ জন) সুবিধার্থে পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি চুনারুঘাটে নিজের ডুপ্লেক্স বাসা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সুমন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএ মুমিন উদ্দিন চৌধুরীর কাছে প্রস্তাব আকারে ইতোমধ্যেই তিনি বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। যে কোনো সময় চিকিৎসকরা তার বাসায় উঠতে পারবেন এবং করোনা ভাইরাসের এই সময়টাতে তারা তার বাসায় থাকতে পারবেন।

বাসা ছেড়ে দিলে আপনি কোথায় থাকবেন জানতে চাইলে সুমন বলেন, আমি অন্যত্র নিজের থাকার ব্যবস্থা করব। আমি চাই চিকিৎসকরা এই সময়টাতে মানুষদের নির্বিঘ্নে সেবা প্রদান করুক এবং নিশ্চিন্তে মানুষের জন্য কাজ করুক। কেবল বাসা ছেড়ে দেওয়া নয়। চিকিৎসকদের সুবিধার্থে আমার পক্ষে যা সম্ভব আমি তাই করব।

তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা যেহেতু নিউইয়র্কে বসবাস করেন, তাই এখন এই বাড়িতে আমি ছাড়া আমার পরিবারের কোনো সদস্য নেই। যুদ্ধ যেহেতু শুরু হয়েছে, মরলে শহীদ, বাঁচলে সবাইকে নিয়েই বাঁচব। তাই দেশের অন্যান্যদের উৎসাহিত করতে এই বাড়ি চিকিৎসকদের জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।

সেবা পেতে হলে চিকিৎসকদেরও তেমন সার্বিক সামগ্রী ও সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সুমন বলেন, চিকিৎসকদের বদনাম করে লাভ কী? তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নেবেন, কিন্তু তাদের সুবিধা দেবেন না এটা তো হতে পারে না। যেখানে আমেরিকায় চিকিৎসক-নার্সদের জন্য মানুষ রান্না করে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন, এখানে মানুষের সেবার জন্য তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করব না এটা তো হতে পারে না।

সুমন বলেন, চিকিৎসকরা বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করার কারণে রোগী দেখার জন্য আসতে সমস্যা হয়। যেহেতু লকডাউনে পুরো এলাকায় গাড়ি চলাচল কম করে চিকিৎসকদের হাসপাতাল আসার ইচ্ছে থাকলেও আসা হয়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, আমার উপজেলায় বড় কোনো হোটেল নেই। ভেবেছিলাম বড় হোটেল থাকলে সেটাই ভাড়া নেব। কিন্তু ভেবে দেখলাম আমার একটি বড় বাড়ি রয়েছে। যেখানে আমি একা আছি। এখন বাড়ি ছেড়ে আমি অন্য কোথাও অবস্থান করব।

গত ২৮ মার্চ নিজ চুনারুঘাট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িটি দিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন সুমন। এ সময় অন্য বিত্তবান ও নেতাদেরও দেশের ক্রান্তিলগ্নে এভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। গাড়িটি দেয়ার সময় সুমন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীও (পিপিই) দেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের।

পরে নিজের এলাকা চুনারুঘাটে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য তিনি পাঁচজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল টিমও গঠন করেন। সুমন তার প্রসিকিউটর পদের ৪১ দিনের বেতনের এক লাখ ৩০ হাজার টাকাও দেন অসহায়দের মাঝে।