শিক্ষা ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বের ১১০টি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ১০০ কোটি শিশু-কিশোর।
তালিকার শীর্ষে চীন। চীনে প্রায় ২৩ কোটি ৩০ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। অন্যদিকে তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লাখ শিশু শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন।
বুধবার (১৮ মার্চ) জাতিসংঘের দুর্যোগ বিষয়ক ওয়েবসাইট রিলিফ ওয়েব প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। তবে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) একটি প্রতিবেদন থেকে তারা এই তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুদের শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ইউনিসেফ। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বের ৭৩টি দেশের শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইউনিসেফ। বৈঠকে অনলাইন বা ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে এ সকল শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে চালিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে মন্ত্রীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব আকরাম-আল-হাসেন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর আমরা এখন চিন্তা করছি কীভাবে ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায়। ইতোমধ্যে আমরা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উদ্যোগ নিয়েছি। সংসদ টিভি চ্যানেলের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা যাতে শিশুদের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশের সব বাসায় টেলিভিশন নেই, ফলে যাদের বাসায় টেলিভিশন আছে এবং যাদের নেই, তাদের মধ্যে একটি বৈষম্য তৈরি হতে পারে। সেই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছি।’
অন্যদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া নিয়ে আরেক ধরনের উদ্বেগের কথা বলছে। সংস্থাটির ভাষ্যমতে বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের দরিদ্র শিশুদের স্কুলে বিনা মূল্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্কুলগুলো বন্ধ থাকলে শিশুরা উন্নত খাবার থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে তাদের পড়াশোনার আগ্রহ কমে গিয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
ইউনিসেফ থেকে অনলাইনে শিক্ষা প্রদানের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের শিশুরা ইন্টারনেটের সুবিধা পাচ্ছে না। মূলত ধনী ও সচ্ছল পরিবারের শিশুরা এই সুযোগ সবচেয়ে বেশি পায়। ফলে করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়টাতে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা চালু হলে তা শিক্ষার ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য আরও বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় এমনিতেই মূল ধারা, ধর্মীয় ও ইংরেজি মাধ্যম নামের তিনটি ধারা তৈরি হয়ে আছে। আবার আমাদের শিশুদের বেশিরভাগ এখনো স্কুলে খাবার পায় না। যুক্তরাজ্য মিড–ডে মিল বা স্কুলে দুপুরের খাবার বাসায় ভাউচারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের করোনা মোকাবিলায় যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে শিশুরা বাসায় বসে যাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য–সুবিধা পায়, সে পরিকল্পনা নিতে হবে।’