ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে পিছিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন

আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণেই যথা সময়ে নির্বাচন হচ্ছে না। খবর বিবিসির।

দেশটিতে গত সপ্তাহেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। তার কারাদণ্ড হওয়ায় তিনি ৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য হয়ে গেছেন। ইমরান খান প্রকাশ্যে দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং বলেছিলেন সামরিক বাহিনী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী বুধবার সংসদ ভেঙে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার পর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও তার সরকারের হাতে নতুন অন্তর্বর্তী নেতার নাম চূড়ান্ত করার জন্য তিনদিন সময় আছে।

নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এজন্য চার মাস সময় দরকার হবে। ফলে নির্বাচন আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।

শাহবাজ শরীফও সাংবাদিকদের সম্প্রতি বলেছিলেন যে, চলতি বছর নির্বাচন নাও হতে পারে। যদিও দেশটিতে এমন আলোচনা চলছে যে, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ হলো ইমরান খানের জনপ্রিয়তা। তার কারণেই ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) জোট নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। পাশাপাশি আইএমএফ-এর সহযোগিতা সত্ত্বেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে সেখানে।

এক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ইমরান খান এমনভাবে সেনাবাহিনীর বিরোধে জড়িয়েছেন যা তার আগে কোনো রাজনীতিক করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাসুল বখশ রাইস মনে করেন যে, গ্রেফতারের কারণে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

এর আগে গত মে মাসে ইমরান খানের গ্রেফতার নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। এতে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়। এছাড়া সামরিক কিছু স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়।

৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দাবি করেছিলেন যে, সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য হলো তাকে বন্দী রেখে তার দলকে ধ্বংস করে দেওয়া। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যেই চ্যালেঞ্জ করুক তাকেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নজির বেশ পুরোনো। এমনকি ইমরান খানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।

১৯৭০ সাল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে এবং এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলেন ইমরান খান। সাবেক সিনেটর আফরাসিয়াব খাত্তাক বিবিসিকে বলেন, এখানে সমান্তরালভাবে দুটি সরকার কাজ করে। অনুমোদনহীন ডি ফ্যাক্টো ফোর্স সবসময় সংসদীয় প্রক্রিয়ার ওপর খবরদারি করতে চায়।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সবসময়ই ক্ষমতাবান। কিন্তু তারা আরও ক্ষমতা চায় যাতে করে তাদের অনুমোদিত কর্মকাণ্ড কেউ চ্যালেঞ্জ না করে সেটা রাজনীতিক, অধিকার কর্মী কিংবা সাংবাদিক যেই হোক না কেন।

গত সপ্তাহে সংসদে দুটি ড্রাকোনিয়ান ল’ উপস্থাপন করা হয়। এর উদ্দেশ্যেই হলো সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো।

শতাব্দীর প্রাচীন অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-এর দুটি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটা দাগে এটা আইএসআই এবং আইবি (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) অফিশিয়াল সিক্রেটস লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেবে।

ট্যাগস

পাকিস্তানে পিছিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন

আপডেট সময় ১২:৫৭:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণেই যথা সময়ে নির্বাচন হচ্ছে না। খবর বিবিসির।

দেশটিতে গত সপ্তাহেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। তার কারাদণ্ড হওয়ায় তিনি ৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য হয়ে গেছেন। ইমরান খান প্রকাশ্যে দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং বলেছিলেন সামরিক বাহিনী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী বুধবার সংসদ ভেঙে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার পর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও তার সরকারের হাতে নতুন অন্তর্বর্তী নেতার নাম চূড়ান্ত করার জন্য তিনদিন সময় আছে।

নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এজন্য চার মাস সময় দরকার হবে। ফলে নির্বাচন আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।

শাহবাজ শরীফও সাংবাদিকদের সম্প্রতি বলেছিলেন যে, চলতি বছর নির্বাচন নাও হতে পারে। যদিও দেশটিতে এমন আলোচনা চলছে যে, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ হলো ইমরান খানের জনপ্রিয়তা। তার কারণেই ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) জোট নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। পাশাপাশি আইএমএফ-এর সহযোগিতা সত্ত্বেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে সেখানে।

এক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ইমরান খান এমনভাবে সেনাবাহিনীর বিরোধে জড়িয়েছেন যা তার আগে কোনো রাজনীতিক করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাসুল বখশ রাইস মনে করেন যে, গ্রেফতারের কারণে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

এর আগে গত মে মাসে ইমরান খানের গ্রেফতার নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। এতে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়। এছাড়া সামরিক কিছু স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়।

৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দাবি করেছিলেন যে, সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য হলো তাকে বন্দী রেখে তার দলকে ধ্বংস করে দেওয়া। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যেই চ্যালেঞ্জ করুক তাকেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নজির বেশ পুরোনো। এমনকি ইমরান খানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।

১৯৭০ সাল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে এবং এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলেন ইমরান খান। সাবেক সিনেটর আফরাসিয়াব খাত্তাক বিবিসিকে বলেন, এখানে সমান্তরালভাবে দুটি সরকার কাজ করে। অনুমোদনহীন ডি ফ্যাক্টো ফোর্স সবসময় সংসদীয় প্রক্রিয়ার ওপর খবরদারি করতে চায়।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সবসময়ই ক্ষমতাবান। কিন্তু তারা আরও ক্ষমতা চায় যাতে করে তাদের অনুমোদিত কর্মকাণ্ড কেউ চ্যালেঞ্জ না করে সেটা রাজনীতিক, অধিকার কর্মী কিংবা সাংবাদিক যেই হোক না কেন।

গত সপ্তাহে সংসদে দুটি ড্রাকোনিয়ান ল’ উপস্থাপন করা হয়। এর উদ্দেশ্যেই হলো সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো।

শতাব্দীর প্রাচীন অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-এর দুটি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটা দাগে এটা আইএসআই এবং আইবি (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) অফিশিয়াল সিক্রেটস লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেবে।