ক্রীড়া ডেস্ক: কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে শতরানের জয় মানেই বিশাল এক ব্যাপার। যেকোনো দলের জন্য যা বড় কৃতিত্ব। আর সেটা যদি বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে হয়, তবে তো জয় পাওয়া দলটির খেলোয়াড়রা দিনটিকে স্বর্ণাক্ষরে মনের মণিকোঠায় বাধিয়ে রাখতে চাইবেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে শতরানের ব্যবধানে জয়ের ম্যাচগুলো:-
১। ১৪ সেপ্টেম্বর,২০০৭; ভেন্যু: ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম, জোহানসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা
শ্রীলঙ্কা: ২৬০/৬(২০)
কেনিয়া: ৮৮/১০ (১৯.৩ ওভার)
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ১৭২ রানে জয়ী
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে রানের হিসাবে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। বিশ্বকাপের প্রথম আসরের ওই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। ওপেনার সনাথ জয়সুরিয়া (৪৪ বলে ৮৮ রান) ও অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনের (২৭ বলে ৬৫) সাইক্লোন এবং শেষের দিকে জেহান মুবারকের টর্নেডো ইনিংসে (১৩ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৬*) বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৬১ রানের পাহাড় গড়ে লঙ্কানরা। আর এভারেস্টসম সেই লক্ষ্য টপকাতে গিয়ে লঙ্কান বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩ বল আগেই ৮৮ রানে গুটিয়ে যায় কেনিয়ানরা।
২। ৭ জুন, ২০০৯; ভেন্যু: দ্য ওভাল, লন্ডন, ইংল্যান্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২১১/৫(২০ ওভার)
স্কটল্যান্ড: ৮১/১০ (১৫.৪ ওভার)
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩০ রানে জয়ী
দ্বিতীয় বিশ্বকাপে আবার কোনো দলকে শতরানের ব্যবধানে জয় পেতে দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। এবার স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই চড়াও হন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। এবি ডি ভিলিয়ার্স করেন ৩৪ বলে ৭৯ রান। তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২১২ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে কাইল কোয়েটজার একপ্রান্ত ধরে খেলছিলেন ঠিকই। তারপরও শতরানের কোটা পার করতে পারেনি স্কটিশরা।
৩। ২৫ অক্টোবর,২০২১; ভেন্যু: শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত
আফগানিস্তান: ১৯০/৪ (২০ ওভার)
স্কটল্যান্ড: ৬০/১০(১০.২ ওভার)
ফলাফল: আফগানিস্তান ১৩০ রানে জয়ী।
লন্ডন থেকে শারজাহ, মাঝে কেটে গেছে এক যুগ। স্কটিশরা হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে লজ্জার হারের স্মৃতি ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমানরা কাইল কোয়েটজারের দলকে ‘টাইম মেশিনে’ চড়িয়ে লন্ডনে ঘুরিয়ে আনলেন! কাল টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান দলপতি মোহাম্মদ নবি। তার সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে ওপেনাররা শুরু থেকেই স্কটিশ বোলারদের ওপর চড়াও হন। একের পর এক চার, ছয়ে স্কটিশ বোলাররা হচ্ছিলেন কচুকাটা।
আফগানদের দেওয়া ১৯১ রানের লক্ষ্যে তিন ওভারে ২৭ রান করে দুই স্কটিশ ওপেনার লক্ষ্যের দিকে ভালোই এগোচ্ছিলেন। তবে চতুর্থ ওভার থেকেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া শুরু করে স্কটল্যান্ডের ইনিংস। মুজিবের ফাইফার (৪-০-২০-৫) ও রশিদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে (২.২-০-৯-৪) ৬২ বলে ৬০ রানে বন্ধ হয়ে যায় স্কটিশদের রানের চাকা।
৪। ২১ সেপ্টেম্বর,২০১২; ভেন্যু: প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম, কলম্বো, শ্রীলঙ্কা
ইংল্যান্ড:১৯৬/৫ (২০ ওভার)
আফগানিস্তান: ৮০/১০ (১৭.২ ওভার)
ফলাফল: ইংল্যান্ড ১১৬ রানে জয়ী।
৯ বছর আগে ২০১২ বিশ্বকাপে লজ্জার হারের ভুক্তভোগী হয়েছিল খোদ আফগানরাই। নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামা আফগানিস্তান টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমেই পায় সাফল্য। ক্রেগ কিসওয়েটারকে বোল্ড করে শাপুর জাদরানের উইকেট মেডেন ওভার আফগান সমর্থকদের অন্য স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করছিল। তবে লুক রাইট সেদিন তাদের জন্য ‘দু:স্বপ্ন’ হয়ে ধরা দেন। ওয়ান ডাউনে নেমে ডানহাতি এই ইংলিশ ব্যাটার একটুর জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও ৫৫ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেছিলেন ৯৯ রানের এক ঝড়ো ইনিংস। ফলে ইংল্যান্ড পায় ১৯৬ সালের বড় সংগ্রহ।
ইংলিশদের দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আফগানরা ৯ ওভারেই ২৬ রানে হারায় ৮টি উইকেট। ৫০ রানের আগেই যখন গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা, তখন ইংলিশ বোলারদের সামনে ঢাল হয়ে লড়ছিলেন গুলবদিন নাইব। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নাইব (৩২ বলে ৪৪ রান) আউট হলে ১৬ বল আগেই ৮০ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। যেখানে নাইব ছাড়া সতীর্থদের ইনিংসগুলো ছিল মোবাইল নম্বরের ডিজিটের মতো।