ক্রীড়া ডেক্স: ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের মৌসুমের শিরোপা জিতলো চেলসি। এটি ব্লুজদের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা থেকে এক পা দূরত্বে থামলো সিটিজেনদের দৌড়।
শনিবার রাতে পর্তুগালের ক্লাব পোর্তোর ঘরের মাঠ এস্তাদিও দো দ্রাগাওয়ে মুখোমুখি হয় দুই ইংলিশ জায়ান্ট। যদিও ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তুরস্কের ইস্তানবুলে।
কিন্তু করোনার কারণে তড়িঘড়ি করে ফাইনাল সরিয়ে আনা হয় পর্তুগিজ শহরে। ইউরোপের এলিট এই টুর্নামেন্টে তৃতীয়বারের মতো অল-ইংলিশ ফাইনাল এটি, যা আবার গত তিন বছরে দ্বিতীয়বার।
ম্যাচের শুরুতে চেলসির রক্ষণকে চেপে ধরেছিল সিটি। কিন্তু ক্রমেই সেই গেরো খুলতে থাকে ব্লুজরা। এমনকি চতুর্দশ মিনিটে এগিয়েও যেতে পারতো তারা। বেন চিলওয়েলের ক্রস সিটির রক্ষণে বাধা পেলেও বল পেয়ে যান কাই হাভের্টজ।
জার্মান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সতীর্থ আবার টিমো ভার্নারের দিকে বাড়িয়ে দেন, যিনি শেষ মুহূর্তে শট নিলেও বল সোজা এদারসনের হাতে চলে যায়।
পরের মিনিটে ভার্নার আবার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তার বাঁকানো শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও বাইরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেলসির হাত থেকে খেলার নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয় সিটি। প্রথমার্ধের বিরতির কিছুক্ষণ আগে চেলসি তাদের সেরা ডিফেন্ডারকে হারায়। চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা।
তার বদলি হিসেবে নামেন আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেন। আর এরপর খেলার মোড় ঘুরে যায়। প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় চেলসি।
৪২তম মিনিটে ম্যাসন মাউন্টের থ্রো বল ধরে গোলমুখের দিকে এগিয়ে যান হাভের্টজ আর তা দেখে এগিয়ে আসেন এদারসন। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষককে পাশ কাটিয়ে খালি জালে বল পাঠিয়ে দেন জার্মান মিডফিল্ডার।
বিরতির পর বড় ধাক্কা খায় সিটির শিবির। আন্তোনিও রুডিগারের সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন কেভিন ডি ব্রুইনা। বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডকে বাজেভাবে ফাউল করায় হলুদ কার্ড দেখেন চেলসির জার্মান ডিফেন্ডার।
ডি ব্রুইনার বদলে নামেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। এর কিছুক্ষণ পর বার্নান্দো সিলভাকে তুলে নিয়ে ফার্নান্দিনহোকে নামান গার্দিওলা। কিন্তু সিটির খেলায় তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
উল্টো ৭৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারতো চেলসি। হাভের্টজের বাড়ানো বলে এদারসনের মাথার উপর দিয়ে চিপ করেছিলেন পুলিসিচ। কিন্তু বল দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
কিছুতেই যখন কিছু হচ্ছে না, তখন ইংলিশ স্ট্রাইকার রহিম স্টার্লিংকে তুলে নিয়ে বিদায়ী স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোকে নামান গার্দিওলা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তবে যোগ করা সময়ে একবার সমতা ফেরানোর ভালো সুযোগ পেয়েছিল সিটি।
কাইল ওয়াকারের লম্বা থ্রো-ইন থামাতে হেড নেন পুলিসিচ, কিন্তু বল চলে যায় বক্সের কাছে থাকা রিয়াদ মাহরেজের পায়ে। মাহরেজ দারুণ ভলিতে মেন্ডিকে পরাস্তও করেছিলেন।
কিন্তু বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। বাকি সময়ে আঁটসাঁট রক্ষণে সিটিকে হতাশ করে চেলসি। এরপর শেষ বাঁশি বাজতেই উৎসবে মেতে ওঠে ব্লুজরা।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট পরলো চেলসি। এর আগে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার স্বাদ পায় রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচের মালিকানাধীন ক্লাবটি।
এবার জার্মান কোচ টমাস টুখেলের ছোঁয়ায় বদলে গেছে আগের মৌসুমেও ধুঁকতে থাকা চেলসি। যার ফল এলো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার মাধ্যমে। আর কোচ হিসেবেও টমাস টুখেলের এটি প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।
এর আগে গত মৌসুমে পিএসজিকে ফাইনালে তুলেছিলেন এই জার্মান।অন্যদিকে বার্সেলোনা ছাড়ার পর কাঙ্ক্ষিত এই শিরোপা জেতার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল গার্দিওলার।
কাতালান জায়ন্টদের কোচ হিসেবে ২০০৯ এবং ২০১১ সালের ফাইনাল জেতার স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। দুইবারই তার দল প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে।
এছাড়া তার অধীনে আরও দুইবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল বার্সা। কিন্তু এরপর বায়ার্ন মিউনিখে ৩ মৌসুম এবং সিটিতে পঞ্চম মৌসুমে এসেও শিরোপা হাতে তোলা হলো না তার।
এর আগের মৌসুমে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ছিল সিটির কোচ হিসেবে তার সেরা সাফল্য। এবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাই তার একমাত্র সান্ত্বনা হয়ে রইলো। অন্যদিকে তাদের লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসিতে এখন উৎসবের সময়।