ঢাকা ০১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ সেই ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত

ছবি: সংগৃহিত

ক্রীড়া ডেক্স: ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই দিনটি বিশেষ এক কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। অনেকে আবার দিনটিকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে কালো রাত্রি বলে চিহ্নিত করেছেন।

প্রশ্ন উঠতে পারে কী এমন ঘটেছিল যে, দিনটিকে কালো রাত্রি বা ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর বলা যেতে পারে? 

১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মোহামেডান-আবাহনীর ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সেই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল। সেবার সন্ধ্যায় সুপার লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল মুখোমুখি হয়। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থেকে সেবার মোহামেডান আগেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছিল। কিন্তু মর্যাদার লড়াই বলে দুই দলের সমর্থকদের কাছে ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অনেক। এখন ফুটবলে দর্শক সমাগম না হলেও তখন দুই দলের খেলা মানেই দুপুরের আগেই গ্যালারি ভরে যাওয়া। সেই ম্যাচে কোহিনূরের গোলে প্রথমার্ধে মোহামেডান এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকে পুরো ম্যাচ আবাহনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সমতা ফেরাতে পারছিল না। খেলা শেষ হতে যখন ১০ মিনিট বাকি ছিল তখনই হট্টগোলের সূত্রপাত ঘটে। আবাহনীর খোরশেদ বাবুল ডি-বক্সে বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শর্ট নেন মোহামেডানের পোস্টে। গোলরক্ষক মহসিন দৃঢ়তার সঙ্গে সে শর্ট রুখে দেন।

কিন্তু আবাহনীর দাবি ছিল, বল ধরলেও মহসিন টাচলাইন ক্রশ করেছেন। অর্থাৎ গোল। সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলালরা তাৎক্ষণিক ছুটে যান লাইসম্যান মহিউদ্দিনের কাছে। রেফারি মুনির হোসেনও তার কাছে জানতে চান মহসিন টাচলাইন ক্রশ করেছিল কিনা। মহিউদ্দিন যখন না করে দেন তখনই দুই দলের সমর্থকদের মাঝে ভয়ঙ্কর হট্টগোল বেধে যায়। আবাহনীও গোলের দাবিতে বাকি সময়ে খেলতে আপত্তি করলে ম্যাচটি পণ্ড হয়ে যায়। এরপর গণ্ডগোল স্টেডিয়ামের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

ফুটবলে এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। বিশেষ করে দুই প্রধান দলের ম্যাচে হট্টগোল হওয়াটা তখন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ সে দিনের ঘটনার জন্য আবাহনীকে দায়ী করে তাদের ফুটবলারদের সারা রাত রমনায় অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্পে রাখা হয়।

ওই সময় দেশে ছিল সামরিক শাসন। তাই আবাহনীর পক্ষে কেউ কথা বলতে সাহস পাননি। ২২ সেপ্টেম্বর সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অধিনায়ক আনোয়ার, কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও গোলাম রব্বানী হেলাল_ এ চার তারকা ফুটবলারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা করা হয়। সে দিনই সামরিক আদালতে রায় দিয়ে তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুপুরের দিকে ট্রেনযোগে হেলাল, আনোয়ারকে রাজশাহী এবং সালাউদ্দিন ও চুন্নুকে যশোর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ তো বটেই, খেলার মাঠে হট্টগোলের জন্য ফুটবলারদের জেলে পাঠানোর ঘটনা পৃথিবীতেও তেমন নজির নেই। তাই সামরিক শাসন থাকলেও চার ফুটবলারকে জেলে নেওয়ার পরই সারা দেশে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে।

শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিনাশর্তে চার ফুটবলারের মুক্তির দাবি জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এ ভয়ে চার ফুটবলারকে বেশি দিন আর জেলে রাখতে পারেনি। দুই সপ্তাহ পরই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

এ ঘটনা চার ফুটবলারের মনে যেমন দাগ কেটেছে, তেমনি এখনও তা মেনে নিতে পারছেন না ক্রীড়ামোদীরা। অনেকের কাছে তাই ২১ সেপ্টেম্বর দিনটি ফুটবলে কালো রাত্রি বা ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর বলেই চিহ্নিত হয়ে আছে। কেউ কেউ আবার দিনটিকে বিভীষিকার রাত বলে স্মরণ করেন।

ট্যাগস

আজ সেই ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত

আপডেট সময় ০১:৪১:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

ক্রীড়া ডেক্স: ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই দিনটি বিশেষ এক কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। অনেকে আবার দিনটিকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে কালো রাত্রি বলে চিহ্নিত করেছেন।

প্রশ্ন উঠতে পারে কী এমন ঘটেছিল যে, দিনটিকে কালো রাত্রি বা ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর বলা যেতে পারে? 

১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মোহামেডান-আবাহনীর ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সেই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল। সেবার সন্ধ্যায় সুপার লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল মুখোমুখি হয়। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থেকে সেবার মোহামেডান আগেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছিল। কিন্তু মর্যাদার লড়াই বলে দুই দলের সমর্থকদের কাছে ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অনেক। এখন ফুটবলে দর্শক সমাগম না হলেও তখন দুই দলের খেলা মানেই দুপুরের আগেই গ্যালারি ভরে যাওয়া। সেই ম্যাচে কোহিনূরের গোলে প্রথমার্ধে মোহামেডান এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকে পুরো ম্যাচ আবাহনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সমতা ফেরাতে পারছিল না। খেলা শেষ হতে যখন ১০ মিনিট বাকি ছিল তখনই হট্টগোলের সূত্রপাত ঘটে। আবাহনীর খোরশেদ বাবুল ডি-বক্সে বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শর্ট নেন মোহামেডানের পোস্টে। গোলরক্ষক মহসিন দৃঢ়তার সঙ্গে সে শর্ট রুখে দেন।

কিন্তু আবাহনীর দাবি ছিল, বল ধরলেও মহসিন টাচলাইন ক্রশ করেছেন। অর্থাৎ গোল। সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলালরা তাৎক্ষণিক ছুটে যান লাইসম্যান মহিউদ্দিনের কাছে। রেফারি মুনির হোসেনও তার কাছে জানতে চান মহসিন টাচলাইন ক্রশ করেছিল কিনা। মহিউদ্দিন যখন না করে দেন তখনই দুই দলের সমর্থকদের মাঝে ভয়ঙ্কর হট্টগোল বেধে যায়। আবাহনীও গোলের দাবিতে বাকি সময়ে খেলতে আপত্তি করলে ম্যাচটি পণ্ড হয়ে যায়। এরপর গণ্ডগোল স্টেডিয়ামের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

ফুটবলে এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। বিশেষ করে দুই প্রধান দলের ম্যাচে হট্টগোল হওয়াটা তখন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ সে দিনের ঘটনার জন্য আবাহনীকে দায়ী করে তাদের ফুটবলারদের সারা রাত রমনায় অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্পে রাখা হয়।

ওই সময় দেশে ছিল সামরিক শাসন। তাই আবাহনীর পক্ষে কেউ কথা বলতে সাহস পাননি। ২২ সেপ্টেম্বর সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অধিনায়ক আনোয়ার, কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও গোলাম রব্বানী হেলাল_ এ চার তারকা ফুটবলারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা করা হয়। সে দিনই সামরিক আদালতে রায় দিয়ে তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুপুরের দিকে ট্রেনযোগে হেলাল, আনোয়ারকে রাজশাহী এবং সালাউদ্দিন ও চুন্নুকে যশোর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ তো বটেই, খেলার মাঠে হট্টগোলের জন্য ফুটবলারদের জেলে পাঠানোর ঘটনা পৃথিবীতেও তেমন নজির নেই। তাই সামরিক শাসন থাকলেও চার ফুটবলারকে জেলে নেওয়ার পরই সারা দেশে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে।

শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিনাশর্তে চার ফুটবলারের মুক্তির দাবি জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এ ভয়ে চার ফুটবলারকে বেশি দিন আর জেলে রাখতে পারেনি। দুই সপ্তাহ পরই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

এ ঘটনা চার ফুটবলারের মনে যেমন দাগ কেটেছে, তেমনি এখনও তা মেনে নিতে পারছেন না ক্রীড়ামোদীরা। অনেকের কাছে তাই ২১ সেপ্টেম্বর দিনটি ফুটবলে কালো রাত্রি বা ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর বলেই চিহ্নিত হয়ে আছে। কেউ কেউ আবার দিনটিকে বিভীষিকার রাত বলে স্মরণ করেন।