ঢাকা ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘বাজার করতে এসে মিলছেনা হিসাবই

পাবনার পেঁয়াজের পাইকারি হাটে ৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে দাম কমেছে গড়ে দুই হাজার টাকা। আর একদিনের ব্যবধানে কমেছে মণপ্রতি হাজার টাকা। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বনগ্রাম হাটে নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ২৬০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর পুরোনো হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ গড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

এর আগে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) পুরোনো হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ সাত হাজার টাকা দরে। আর নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতিমণ পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দরে। মূলত পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় দাম কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার সকালে পাবনার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি। নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ প্রচুর পরিমাণে উঠেছে। পুরাতন পেঁয়াজের আমদানিও বেশি। হাটে জায়গা না পেয়ে অনেক চাষি রাস্তার ওপরই পেঁয়াজের বস্তা নামিয়ে বিক্রি করেন। মোকামে দাম কম হওয়ায় হাটের ব্যাপারিরাও কম দামে পেঁয়াজ কেনেন।

পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের বাড়তি দরের কথা জেনেই তারা হাটে পেঁয়াজ নিয়ে এসে দেখেন দাম পড়ে গেছে। এতে তারা হতাশ বলেও জানান। চাষিরা জানান, গত তিন দিনের ব্যবধানে উভয় রকম (পুরাতন হালি ও নুতন মূলকাটা) পেঁয়াজের দাম কমেছে মণপ্রতি দু’ হাজার টাকা। আর একদিনের ব্যবধানে কমেছে মণপ্রতি প্রায় সাতশো থেকে এক হাজার টাকা।

তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে পেঁয়াজের দাম কমলো দুই হাজার । তারা জানান, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সুজানগর উপজেলার চিনাখড়া হাটে প্রতিমণ মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৪০০-৪২০০ টাকা দরে। আর পুরাতন হালি পেঁয়াজের দর ছিল সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা মণ। অথচ মঙ্গলবার মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হলো ২৬০০ থেকে ৩৫০০ টাকা মণ দরে। আর হালি পেঁয়াজের গড় দর ৫ হাজার টাকা মণ। পেঁয়াজ ব্যাপারি ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণার পর থেকে দ্রুত দাম বেড়ে যায়। এর উপর বৃষ্টির কারণে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে না পারায় হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ খুব কম ছিল। এজন্য দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এখন আবার বিদেশ থেকে আমদানির খবরে পেঁয়াজের বাজার কমেছে।

আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যাপারি জানান, হাটে সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। সরবরাহ বেশি হলে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। তারা ইচ্ছা করে দাম বাড়াতে পারেন না। এটা চাহিদা ও আমদানির ওপর নির্ভর করে। মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজের মৌসুম পুরোদমে শুরু হলে দাম এমনিতেই কমে আসে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতেগোনা কিছু চাষি ও বাধাইকারকদের ঘরে এখনও ভালো পরিমাণে পুরোনো পেঁয়াজ মজুত আছে। এরইমধ্যে মুড়ি বা মূলকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। মুড়ি বা মূলকাটা পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠলে আমদানি ছাড়াই দেশি পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। সদর উপজেলার কোলচুরি গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ আমদানি করে দাম কমিয়ে দেওয়ায় তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আগের হাটে (শনিবার) যে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি সাত হাজার টাকা মণ, আজ (মঙ্গলবার) সেই পেঁয়াজের দাম বলছে পাঁচ হাজার টাকারও কম।

তিনি জানান, আগের দিন সোমবার (১১ ডিসেম্বর) চিনাখড়া হাটে হালি ও মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে যে দরে তার চেয়েও গড়ে হাজার টাকা কমে গেছে। পাবনার চাষি সংগঠক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ জানান, সাধারণ চাষিদের লাভবান করতে হলে মৌসুমেও ভালো দাম নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা লাভের অংশ অনেকাংশে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে চলে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, এবার আবহাওয়া ভালো। কৃষির মাঠকর্মীরা চাষিদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। চাষিরা নায্যদাম পাবেন বলে তারা আশাবাদী।

‘বাজার করতে এসে মিলছেনা হিসাবই

আপডেট সময় ০৪:১১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

পাবনার পেঁয়াজের পাইকারি হাটে ৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে দাম কমেছে গড়ে দুই হাজার টাকা। আর একদিনের ব্যবধানে কমেছে মণপ্রতি হাজার টাকা। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বনগ্রাম হাটে নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ২৬০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর পুরোনো হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ গড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

এর আগে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) পুরোনো হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ সাত হাজার টাকা দরে। আর নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতিমণ পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দরে। মূলত পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় দাম কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার সকালে পাবনার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি। নতুন মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ প্রচুর পরিমাণে উঠেছে। পুরাতন পেঁয়াজের আমদানিও বেশি। হাটে জায়গা না পেয়ে অনেক চাষি রাস্তার ওপরই পেঁয়াজের বস্তা নামিয়ে বিক্রি করেন। মোকামে দাম কম হওয়ায় হাটের ব্যাপারিরাও কম দামে পেঁয়াজ কেনেন।

পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের বাড়তি দরের কথা জেনেই তারা হাটে পেঁয়াজ নিয়ে এসে দেখেন দাম পড়ে গেছে। এতে তারা হতাশ বলেও জানান। চাষিরা জানান, গত তিন দিনের ব্যবধানে উভয় রকম (পুরাতন হালি ও নুতন মূলকাটা) পেঁয়াজের দাম কমেছে মণপ্রতি দু’ হাজার টাকা। আর একদিনের ব্যবধানে কমেছে মণপ্রতি প্রায় সাতশো থেকে এক হাজার টাকা।

তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে পেঁয়াজের দাম কমলো দুই হাজার । তারা জানান, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সুজানগর উপজেলার চিনাখড়া হাটে প্রতিমণ মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৪০০-৪২০০ টাকা দরে। আর পুরাতন হালি পেঁয়াজের দর ছিল সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা মণ। অথচ মঙ্গলবার মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হলো ২৬০০ থেকে ৩৫০০ টাকা মণ দরে। আর হালি পেঁয়াজের গড় দর ৫ হাজার টাকা মণ। পেঁয়াজ ব্যাপারি ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণার পর থেকে দ্রুত দাম বেড়ে যায়। এর উপর বৃষ্টির কারণে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে না পারায় হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ খুব কম ছিল। এজন্য দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এখন আবার বিদেশ থেকে আমদানির খবরে পেঁয়াজের বাজার কমেছে।

আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যাপারি জানান, হাটে সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। সরবরাহ বেশি হলে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। তারা ইচ্ছা করে দাম বাড়াতে পারেন না। এটা চাহিদা ও আমদানির ওপর নির্ভর করে। মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজের মৌসুম পুরোদমে শুরু হলে দাম এমনিতেই কমে আসে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতেগোনা কিছু চাষি ও বাধাইকারকদের ঘরে এখনও ভালো পরিমাণে পুরোনো পেঁয়াজ মজুত আছে। এরইমধ্যে মুড়ি বা মূলকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। মুড়ি বা মূলকাটা পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠলে আমদানি ছাড়াই দেশি পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। সদর উপজেলার কোলচুরি গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ আমদানি করে দাম কমিয়ে দেওয়ায় তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আগের হাটে (শনিবার) যে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি সাত হাজার টাকা মণ, আজ (মঙ্গলবার) সেই পেঁয়াজের দাম বলছে পাঁচ হাজার টাকারও কম।

তিনি জানান, আগের দিন সোমবার (১১ ডিসেম্বর) চিনাখড়া হাটে হালি ও মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে যে দরে তার চেয়েও গড়ে হাজার টাকা কমে গেছে। পাবনার চাষি সংগঠক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ জানান, সাধারণ চাষিদের লাভবান করতে হলে মৌসুমেও ভালো দাম নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা লাভের অংশ অনেকাংশে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে চলে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, এবার আবহাওয়া ভালো। কৃষির মাঠকর্মীরা চাষিদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। চাষিরা নায্যদাম পাবেন বলে তারা আশাবাদী।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471