ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পোশাক কারখানা খুলেছে কিন্ত আন্দোলন থামেনি

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বন্ধ হওয়া অধিকাংশ পোশাক কারখানা গতকাল শনিবার খুলেছে। তবে আন্দোলন পুরোপুরি থামেনি। এ কারণে গতকালও ২৯টি কারখানায় ছুটি ছিল।

সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা ও গাজীপুর সদরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় গতকালও শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। দুই জায়গায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে আটজন আহত হন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কয়েকটি কারখানার ফটক ভাঙচুর করেন। এদিকে মালিকপক্ষ নতুন করে কত টাকার মজুরি প্রস্তাব দেবে, সেটি তারা এখনো চূড়ান্ত করেনি। জানা গেছে, মজুরিসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগামী মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডের পরবর্তী সভা হবে। সেই সভায় শ্রমিকদের মজুরি চূড়ান্ত হবে। তবে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গতকাল শনিবার রাত নয়টা পর্যন্ত পরের সভার কোনো নোটিশ জারি করেনি।বিষয়টি নিশ্চিত করে মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পরবর্তী সভার নোটিশ জারি করেনি বোর্ড। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, মজুরির বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বিজিএমইএ নেতাদের আলোচনার পর মজুরি বোর্ডের সভা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই সভাতেই মজুরি চূড়ান্ত হবে।

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়।

পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভারেও শ্রম অসন্তোষ ছড়ায়। গত সোমবার গাজীপুরে দুজন শ্রমিক নিহত হন। তার পরদিন আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠলে মালিকেরা পর্যায়ক্রমে কারখানা বন্ধ করেন। গত বৃহস্পতিবার মিরপুর ও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে ছয় শ পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তার মধ্যে ছিল মিরপুরের ২৩৫টি, আশুলিয়ায় ৩৫টি এবং গাজীপুরের ৩৮৬টি কারখানা।

এমন পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ ঘোষণা দেয়, শ্রমিকেরা কাজ না করলে এবং ভাঙচুর হলে ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকনেতারা জানান, গতকাল আশুলিয়া ও গাজীপুরের ২৯ কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাকি সব কারখানা চলছে। ঢাকায় শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কোনো কারখানা বন্ধ ছিল না। এই তিন শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

আশুলিয়ার জামগড়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় কয়েক পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে ভ্যানচালক আমির হোসেন, সাভারের পোশাকশ্রমিক মো. শামিম ও তাঁর খালাতো ভাই মো. তাজউদ্দীন আহত হন। তাঁদের প্রথমে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমির হোসেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও বাকি দুজনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয় ভট্টাচার্য। সকালে গিয়ে দেখা যায়, জামগড়ার বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে জড়ো হয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দিচ্ছে। বেশ কয়েকটি কারখানার ফটকের সামনে পড়ে আছে কাচের ভাঙা টুকরা। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আশুলিয়ার ২৭টি কারখানা কাজ শুরুর পর আজ (গতকাল) ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কারখানা বন্ধ ঘোষণার খবর পাইনি আমরা। এ দিকে গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল ছিল অনেকটাই শান্ত। এই জেলার অধিকাংশ পোশাক কারখানাই চালু হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুর সদরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন শ্রমিকেরা। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় একজন নারী শ্রমিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পোশাকশ্রমিক রাশিদা খাতুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও দুই শ্রমিককে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। আর শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুল ইসলাম এবং পুলিশ পরিদর্শক আ. নুর আহত হয়েছেন।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় তুসুকা গ্রুপের একসঙ্গে সাতটি কারখানা রয়েছে। তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল কারখানাগুলোর উৎপাদন চলেছে বলে নিশ্চিত করেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর পরিচালক আরশাদ জামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ থামাতে যত দ্রুত সম্ভব মজুরির বিষয়টি সমাধান করা দরকার। শিল্পে একধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। বর্তমানে অনেক ধরনের সংকটও আছে। কারখানাগুলো সক্ষমতার চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম ক্রয়াদেশে চলছে। ফলে মজুরি নির্ধারণে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মালিকপক্ষের নতুন মজুরি প্রস্তাব দেওয়ার আশ্বাসের পরও শ্রমিক অসন্তোষ থামছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, মালিকেরা আগেও কথা দিয়ে কথা রাখেননি। সেই আশঙ্কা থেকেই শ্রমিকেরা শান্ত হচ্ছেন না।

তাসলিমা আখতার আরও বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও মালিকদের সক্ষমতা আছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে মজুরি নির্ধারণ করা দরকার। গত এক বছরে ডলারের দাম যতটা বেড়েছে, তা দিয়ে মালিকেরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে পারেন। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, মালিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নতি হয়নি। তাঁরা যাতে খেয়ে–পরে বাঁচতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

পোশাক কারখানা খুলেছে কিন্ত আন্দোলন থামেনি

আপডেট সময় ১১:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বন্ধ হওয়া অধিকাংশ পোশাক কারখানা গতকাল শনিবার খুলেছে। তবে আন্দোলন পুরোপুরি থামেনি। এ কারণে গতকালও ২৯টি কারখানায় ছুটি ছিল।

সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা ও গাজীপুর সদরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় গতকালও শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। দুই জায়গায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে আটজন আহত হন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কয়েকটি কারখানার ফটক ভাঙচুর করেন। এদিকে মালিকপক্ষ নতুন করে কত টাকার মজুরি প্রস্তাব দেবে, সেটি তারা এখনো চূড়ান্ত করেনি। জানা গেছে, মজুরিসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগামী মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডের পরবর্তী সভা হবে। সেই সভায় শ্রমিকদের মজুরি চূড়ান্ত হবে। তবে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গতকাল শনিবার রাত নয়টা পর্যন্ত পরের সভার কোনো নোটিশ জারি করেনি।বিষয়টি নিশ্চিত করে মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পরবর্তী সভার নোটিশ জারি করেনি বোর্ড। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, মজুরির বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বিজিএমইএ নেতাদের আলোচনার পর মজুরি বোর্ডের সভা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই সভাতেই মজুরি চূড়ান্ত হবে।

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়।

পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভারেও শ্রম অসন্তোষ ছড়ায়। গত সোমবার গাজীপুরে দুজন শ্রমিক নিহত হন। তার পরদিন আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠলে মালিকেরা পর্যায়ক্রমে কারখানা বন্ধ করেন। গত বৃহস্পতিবার মিরপুর ও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে ছয় শ পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তার মধ্যে ছিল মিরপুরের ২৩৫টি, আশুলিয়ায় ৩৫টি এবং গাজীপুরের ৩৮৬টি কারখানা।

এমন পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ ঘোষণা দেয়, শ্রমিকেরা কাজ না করলে এবং ভাঙচুর হলে ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকনেতারা জানান, গতকাল আশুলিয়া ও গাজীপুরের ২৯ কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাকি সব কারখানা চলছে। ঢাকায় শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কোনো কারখানা বন্ধ ছিল না। এই তিন শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

আশুলিয়ার জামগড়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় কয়েক পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে ভ্যানচালক আমির হোসেন, সাভারের পোশাকশ্রমিক মো. শামিম ও তাঁর খালাতো ভাই মো. তাজউদ্দীন আহত হন। তাঁদের প্রথমে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমির হোসেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও বাকি দুজনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয় ভট্টাচার্য। সকালে গিয়ে দেখা যায়, জামগড়ার বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে জড়ো হয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দিচ্ছে। বেশ কয়েকটি কারখানার ফটকের সামনে পড়ে আছে কাচের ভাঙা টুকরা। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আশুলিয়ার ২৭টি কারখানা কাজ শুরুর পর আজ (গতকাল) ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কারখানা বন্ধ ঘোষণার খবর পাইনি আমরা। এ দিকে গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল ছিল অনেকটাই শান্ত। এই জেলার অধিকাংশ পোশাক কারখানাই চালু হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুর সদরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন শ্রমিকেরা। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় একজন নারী শ্রমিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পোশাকশ্রমিক রাশিদা খাতুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও দুই শ্রমিককে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। আর শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুল ইসলাম এবং পুলিশ পরিদর্শক আ. নুর আহত হয়েছেন।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় তুসুকা গ্রুপের একসঙ্গে সাতটি কারখানা রয়েছে। তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল কারখানাগুলোর উৎপাদন চলেছে বলে নিশ্চিত করেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর পরিচালক আরশাদ জামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ থামাতে যত দ্রুত সম্ভব মজুরির বিষয়টি সমাধান করা দরকার। শিল্পে একধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। বর্তমানে অনেক ধরনের সংকটও আছে। কারখানাগুলো সক্ষমতার চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম ক্রয়াদেশে চলছে। ফলে মজুরি নির্ধারণে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মালিকপক্ষের নতুন মজুরি প্রস্তাব দেওয়ার আশ্বাসের পরও শ্রমিক অসন্তোষ থামছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, মালিকেরা আগেও কথা দিয়ে কথা রাখেননি। সেই আশঙ্কা থেকেই শ্রমিকেরা শান্ত হচ্ছেন না।

তাসলিমা আখতার আরও বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও মালিকদের সক্ষমতা আছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে মজুরি নির্ধারণ করা দরকার। গত এক বছরে ডলারের দাম যতটা বেড়েছে, তা দিয়ে মালিকেরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে পারেন। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, মালিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নতি হয়নি। তাঁরা যাতে খেয়ে–পরে বাঁচতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471