ঢাকা ০৬:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo ডিবিসির সাংবাদিক সাজুর উপর হামলাকারী কনক কে ১০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ Logo ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৫৮০ Logo পৃথিবীর কোনো শক্তি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব Logo নওগাঁ ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে মারধর Logo পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা Logo ৫ বছর পর দেশে এসেছেন শাবানা Logo নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার Logo মার্কিন বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে মিত্র দেশগুলো, ট্রাম্পের নতুন আদেশ Logo বরগুনায় নিজ বসতঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo ১৪, ১৮ ও ২৪’র নির্বাচন মাথা থেকে মুছে ফেলতে হবে

সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘুস দাবির অডিও ফাঁস

রংপুর প্রতিনিধি :নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার তদন্তের জন্য বাদীর কাছে ঘুস দাবির অভিযোগ উঠেছে রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

৪৪ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটি  =হাতে এসেছে। এতে একজন পুরুষ ভুক্তভোগীর পরিচয় দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট কবে দেবেন জানতে চান। অপরপাশে একজন নারীকণ্ঠে বলছেন, যত তাড়াতাড়ি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাবেন।

একই অডিওতে পুরুষ কণ্ঠে আবার বলা হয়, যে ১০ হাজার দিয়েছি, তা দিয়েই কাজটা করে দেন। তখন নারী কণ্ঠে বলা হয়, দেখি অফিসে গিয়ে আগে কথা বলি …।

ভুক্তভোগী তরুণী ও মামলার বাদী জানান, পাঁচ বছর আগে তার সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশকাটা গ্রামের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সোনার গহনা আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ দেয় তার পরিবার। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ইসমাইল পুলিশের চাকরি নিতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।

কিন্তু তার বাবা গরীব হওয়ায় এতে অস্বীকৃতি জানান তরুণী। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ৭ মে স্ত্রীকে মারধর করেন ইসমাইল। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসার পর বাসায় ফিরে আসেন। এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যস্থতায় তাদের এক খণ্ড জমি বিক্রি করে স্বামী ইসমাইল হোসেনকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

বাদী আরও জানান, কিছুদিন পর ইসমাইল এক নারী পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে ইসমাইল স্ত্রীর কাছে ফের মোটরসাইকেল কিনে দেওয়াসহ আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এক পর্যায়ে টাকার জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন ইসমাইল। এরপরও তিনি সংসার করে আসছিলেন। এরইমধ্যে গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

পাঁচমাসের গর্ভকালীন ইসমাইল আবারো ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। টাকা দেওয়ার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই জানালে স্বামী ইসমাইল তার পেটে অনবরত লাথি মারেন ও মারধর করেন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার গর্ভপাত হয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিমি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী কোনো খোঁজ না নেওয়ায় সুস্থ হয়ে বাবাবাড়ি চলে যান তিনি।

বাদী জানান, একপর্যায়ে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদাল-১ এ স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তরুণী। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রাণী রায়কে নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ পাঁচ মাস তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ধরনা দিলেও শেষে শিখা রাণী ঘুষ দাবি করলে তার দরিদ্র বাবা ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেন।

কিন্তু বুধবার (১৩ জুলাই) তার বিপক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন শিখা রানী। এদিন বিকেলে টাকা ফেরত নিতে উপজেলা পরিষদে গেলে শিখা রাণী ও তার অফিসের কর্মচারীরা বাবা এবং তরুণীর ভাই শাহিনকে বেধড়ক মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। আদালত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলেও তিনি গড়িমসি করতে থাকেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে চিকিৎসকের মতামতসহ তার কোনো বক্তব্য না নিয়েই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শিখা রানী।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানী বলেন, ‘টাকা পয়সা সংক্রান্ত কোনো কথা আমি বলিনি। আপনারা অডিওটি ভালো করে শুনবেন।’

রংপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি শোনার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস

ডিবিসির সাংবাদিক সাজুর উপর হামলাকারী কনক কে ১০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ

সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘুস দাবির অডিও ফাঁস

আপডেট সময় ০১:৩১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২

রংপুর প্রতিনিধি :নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার তদন্তের জন্য বাদীর কাছে ঘুস দাবির অভিযোগ উঠেছে রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

৪৪ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটি  =হাতে এসেছে। এতে একজন পুরুষ ভুক্তভোগীর পরিচয় দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট কবে দেবেন জানতে চান। অপরপাশে একজন নারীকণ্ঠে বলছেন, যত তাড়াতাড়ি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাবেন।

একই অডিওতে পুরুষ কণ্ঠে আবার বলা হয়, যে ১০ হাজার দিয়েছি, তা দিয়েই কাজটা করে দেন। তখন নারী কণ্ঠে বলা হয়, দেখি অফিসে গিয়ে আগে কথা বলি …।

ভুক্তভোগী তরুণী ও মামলার বাদী জানান, পাঁচ বছর আগে তার সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশকাটা গ্রামের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সোনার গহনা আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ দেয় তার পরিবার। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ইসমাইল পুলিশের চাকরি নিতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।

কিন্তু তার বাবা গরীব হওয়ায় এতে অস্বীকৃতি জানান তরুণী। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ৭ মে স্ত্রীকে মারধর করেন ইসমাইল। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসার পর বাসায় ফিরে আসেন। এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যস্থতায় তাদের এক খণ্ড জমি বিক্রি করে স্বামী ইসমাইল হোসেনকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

বাদী আরও জানান, কিছুদিন পর ইসমাইল এক নারী পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে ইসমাইল স্ত্রীর কাছে ফের মোটরসাইকেল কিনে দেওয়াসহ আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এক পর্যায়ে টাকার জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন ইসমাইল। এরপরও তিনি সংসার করে আসছিলেন। এরইমধ্যে গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

পাঁচমাসের গর্ভকালীন ইসমাইল আবারো ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। টাকা দেওয়ার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই জানালে স্বামী ইসমাইল তার পেটে অনবরত লাথি মারেন ও মারধর করেন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার গর্ভপাত হয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিমি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী কোনো খোঁজ না নেওয়ায় সুস্থ হয়ে বাবাবাড়ি চলে যান তিনি।

বাদী জানান, একপর্যায়ে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদাল-১ এ স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তরুণী। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রাণী রায়কে নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ পাঁচ মাস তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ধরনা দিলেও শেষে শিখা রাণী ঘুষ দাবি করলে তার দরিদ্র বাবা ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেন।

কিন্তু বুধবার (১৩ জুলাই) তার বিপক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন শিখা রানী। এদিন বিকেলে টাকা ফেরত নিতে উপজেলা পরিষদে গেলে শিখা রাণী ও তার অফিসের কর্মচারীরা বাবা এবং তরুণীর ভাই শাহিনকে বেধড়ক মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। আদালত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলেও তিনি গড়িমসি করতে থাকেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে চিকিৎসকের মতামতসহ তার কোনো বক্তব্য না নিয়েই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শিখা রানী।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানী বলেন, ‘টাকা পয়সা সংক্রান্ত কোনো কথা আমি বলিনি। আপনারা অডিওটি ভালো করে শুনবেন।’

রংপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি শোনার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471