ঢাকা ০৮:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :

ঝুকি জেনেও বিভক্ত করা হলো মহাদেবপুরের বালুমহাল

মহাদেবপুর, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ  হানাহানির আশঙ্কা মেনে নিয়েই নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর বালু মহাল দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দুই অংশই।

বালু ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি এলাকার এমপি’র ডিও লেটারকে কোনই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রশাসন বলছেন জনস্বার্থে এটা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫০ বছর ধরে উপজেলার আত্রাই নদীর বালু মহাল একটি অংশ হিসেবেই ইজারা দেয়া হয়।

বর্তমানে এই বালুমহালের আয়তন ৩২৭ দশমিক ৮৮ একর। মোট মৌজা ১৬ টি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দেয়া তালিকা অনুযায়ী গত ১৬ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় মহাদেবপুর বালুমহালকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এতে উজান অংশে রাখা হয় ১৫৯ দশমিক ৩০ একর ও ভাটি অংশে ১৬৮ দশমিক ৫৮ একর। উভয় অংশে ৮ করে মৌজা ধরা হয়। উজান অংশে নুরপুর, কুমিরদহ, বৃন্দারামপুর, শ্রীরামপুর, হোসেনপুর, ব্রাম্মণপাড়া, এনায়েতপুর ও চকহরিবল্লভ এবং ভাটি অংশে শিবপুর, মহাদেবপুর, দোহালী, দরিয়াপুর, শিবগঞ্জ, সুলতানপুর, চকশ্যামপুর, হামিদপুর ও মথুরকৃষ্ণপুর রাখা হয়।

সভার রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয় যে, বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই বালুমহাল এককভাবে পরিচালনায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই এটাকে দুইভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া সময়মত এগুলো ইজারা দিতে না পারলে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। তাই সরকারী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার লক্ষে বিভক্ত অংশ দ্রুত অনুমোদনের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়।

বিষয়টি জানার পর নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের এমপি আলহাজ¦ মো: ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ২৪ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের নিকট মহাদেবপুরের বালুমহাল দুই অংশে বিভক্ত না করে আগের মত একটিই রাখার জন্য একটি আধাসরকারী পত্র (ডিও লেটার) প্রেরণ করেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘মহাদেবপুরের বালুমহাল দুইভাগে বিভক্ত করলে সহিংসতা ও হানাহানি বেড়ে যাবে-যা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’

পরদিন একই বিষয়ে মহাদেবপুর বালুমহালের বর্তমান ইজারাদার সাঈদ হাসান নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘এমনিতেই এই বালুমহাল নিয়ে একটি গ্রুপে অনেক মারামারি ও বিশৃঙ্খলা ঘটে-যা অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আর যদি দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে সহিংসতা ও মারামারি আরও বেড়ে যাবে-যা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে।’

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে একটি অংশ রেখেই ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সভার রেজুলেশন বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি অনুমোদন না হওয়ায় গত ২১ মার্চ দুটি অংশ হিসেবেই ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে দরপত্র খোলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৬ এপ্রিল।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গত ২৮ মার্চ মহাদেবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মুহা: মাহবুবুর রহমান ধলু এলাকার জনস্বার্থে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বালুমহালটি দুটি অংশে বিভক্তের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগের মত একটি অংশে ইজারা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনপত্র দাখিল করেন। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘দুটি অংশে ভাগ করা হলে বালুমহাল নিয়ে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাবে।’ এদিন এলাকার বিশিষ্ট বালু ব্যবসায়ী হাজী মোয়াজ্জেম হোসেনও একই ধরনের আবেদন করেন।

এলাকার বালু ব্যবসায়ীরা জানান, এই বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই গ্রুপে গ্রুপে মারামারি হয়। গতবছর এনিয়ে মামলা মোকদ্দমার উদ্ভব হয়। আগের বছর সহিংসতায় একজন সাংবাদিকের হাত ভেঙ্গে যায়। দুটি অংশে বিভক্ত হলে কোনদিক থেকেই সুবিধা হবেনা বলে তারা জানান।

তাছাড়া জেলার অন্য ১০ টি বালুমহালের কোনটিই ভাগ করার উদ্যোগ নেয়া না হলেও শুধু মহাদেবপুরেরটি কেন ভাগ করা হচ্ছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অবিলম্বে তারা চলতি টেন্ডার বাতিল করে একটি অংশে টেন্ডার আহ্বানের দাবী জানান।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, জনস্বার্থে মহাদেবপুরের বিশাল বালুমহালকে দুই ভাগ বিভক্ত করা হয়েছে।

ট্যাগস

সর্বাধিক পঠিত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের ডাক বিজেপি নেতার

ঝুকি জেনেও বিভক্ত করা হলো মহাদেবপুরের বালুমহাল

আপডেট সময় ০৭:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১

মহাদেবপুর, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ  হানাহানির আশঙ্কা মেনে নিয়েই নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর বালু মহাল দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দুই অংশই।

বালু ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি এলাকার এমপি’র ডিও লেটারকে কোনই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রশাসন বলছেন জনস্বার্থে এটা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫০ বছর ধরে উপজেলার আত্রাই নদীর বালু মহাল একটি অংশ হিসেবেই ইজারা দেয়া হয়।

বর্তমানে এই বালুমহালের আয়তন ৩২৭ দশমিক ৮৮ একর। মোট মৌজা ১৬ টি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দেয়া তালিকা অনুযায়ী গত ১৬ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় মহাদেবপুর বালুমহালকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এতে উজান অংশে রাখা হয় ১৫৯ দশমিক ৩০ একর ও ভাটি অংশে ১৬৮ দশমিক ৫৮ একর। উভয় অংশে ৮ করে মৌজা ধরা হয়। উজান অংশে নুরপুর, কুমিরদহ, বৃন্দারামপুর, শ্রীরামপুর, হোসেনপুর, ব্রাম্মণপাড়া, এনায়েতপুর ও চকহরিবল্লভ এবং ভাটি অংশে শিবপুর, মহাদেবপুর, দোহালী, দরিয়াপুর, শিবগঞ্জ, সুলতানপুর, চকশ্যামপুর, হামিদপুর ও মথুরকৃষ্ণপুর রাখা হয়।

সভার রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয় যে, বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই বালুমহাল এককভাবে পরিচালনায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই এটাকে দুইভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া সময়মত এগুলো ইজারা দিতে না পারলে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। তাই সরকারী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার লক্ষে বিভক্ত অংশ দ্রুত অনুমোদনের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়।

বিষয়টি জানার পর নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের এমপি আলহাজ¦ মো: ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ২৪ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের নিকট মহাদেবপুরের বালুমহাল দুই অংশে বিভক্ত না করে আগের মত একটিই রাখার জন্য একটি আধাসরকারী পত্র (ডিও লেটার) প্রেরণ করেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘মহাদেবপুরের বালুমহাল দুইভাগে বিভক্ত করলে সহিংসতা ও হানাহানি বেড়ে যাবে-যা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’

পরদিন একই বিষয়ে মহাদেবপুর বালুমহালের বর্তমান ইজারাদার সাঈদ হাসান নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘এমনিতেই এই বালুমহাল নিয়ে একটি গ্রুপে অনেক মারামারি ও বিশৃঙ্খলা ঘটে-যা অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আর যদি দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে সহিংসতা ও মারামারি আরও বেড়ে যাবে-যা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে।’

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে একটি অংশ রেখেই ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সভার রেজুলেশন বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি অনুমোদন না হওয়ায় গত ২১ মার্চ দুটি অংশ হিসেবেই ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে দরপত্র খোলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৬ এপ্রিল।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গত ২৮ মার্চ মহাদেবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মুহা: মাহবুবুর রহমান ধলু এলাকার জনস্বার্থে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বালুমহালটি দুটি অংশে বিভক্তের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগের মত একটি অংশে ইজারা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনপত্র দাখিল করেন। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘দুটি অংশে ভাগ করা হলে বালুমহাল নিয়ে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাবে।’ এদিন এলাকার বিশিষ্ট বালু ব্যবসায়ী হাজী মোয়াজ্জেম হোসেনও একই ধরনের আবেদন করেন।

এলাকার বালু ব্যবসায়ীরা জানান, এই বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই গ্রুপে গ্রুপে মারামারি হয়। গতবছর এনিয়ে মামলা মোকদ্দমার উদ্ভব হয়। আগের বছর সহিংসতায় একজন সাংবাদিকের হাত ভেঙ্গে যায়। দুটি অংশে বিভক্ত হলে কোনদিক থেকেই সুবিধা হবেনা বলে তারা জানান।

তাছাড়া জেলার অন্য ১০ টি বালুমহালের কোনটিই ভাগ করার উদ্যোগ নেয়া না হলেও শুধু মহাদেবপুরেরটি কেন ভাগ করা হচ্ছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অবিলম্বে তারা চলতি টেন্ডার বাতিল করে একটি অংশে টেন্ডার আহ্বানের দাবী জানান।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, জনস্বার্থে মহাদেবপুরের বিশাল বালুমহালকে দুই ভাগ বিভক্ত করা হয়েছে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471