ভালো বা খারাপ গন্ধ একটা রুচি বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার। কোনও কোনও গন্ধ হয়তো একজনের কাছে ভালো লাগে, অন্য আরেকজনের কাছে লাগে না। অনেকটাই তাই। তাছাড়া আমরা আমাদের চারপাশের জগৎকে যেভাবে উপলব্ধি করি তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে এই গন্ধ।
কিন্তু কীভাবে মানুষের মস্তিষ্ক এই গন্ধের অনুভূতি তৈরি করে, আর কীভাবেই বা একই গন্ধ একেকজনের নাকে একেকরকম লাগে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গন্ধের অনুভূতির সাথে মানুষের জিনগত গঠনের গভীর সম্পর্ক আছে।
কোনও দু’জন লোকের গন্ধের অনুভূতি এক রকম হয় না- যদি না তারা হুবহু একরকম দেখতে যমজ ভাই বা বোনের মতো জিনগত গঠনের দিক থেকে হুবহু একরকম হয়। যখন আপনি কোনও কিছুর গন্ধ নেন, তখন গন্ধের অনুভূতি সৃষ্টিকারী অণুগুলো আপনার নাকের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে ঢোকে।
আপনার নাকের ভেতরে যে গন্ধ-অনুভতি বহনকারী ‘রিসেপ্টর’ বা ‘গ্রাহক-কোষ’ আছে- তা ঢাকা থাকে একরকম আঠালো তরল দিয়ে- যাকে বলা হয় মিউকাস। সেই মিউকাসে গন্ধের অনুভূতি সৃষ্টিকারী অণুগুলো আটকে যায়।
নাকের ভেতরের রিসেপ্টরগুলো হচ্ছে একরকমের কোষ যা উদ্দীপ্ত হলে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক ‘সিগন্যাল’ পাঠায়। মানুষের নাকের ভেতর এরকম ৪০০ রিসেপ্টর আছে, তার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন গন্ধের জন্য আলাদা রিসেপ্টর আছে। তারা মস্তিষ্কের নিউরনের ভিন্ন ভিন্ন সাড়া সৃষ্টি করে, তৈরি হয় গন্ধের অনুভূতি। মানুষের মস্তিষ্ক বহু রকমের গন্ধ অনুভব করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের পক্ষে এক লাখ কোটি প্রকারের গন্ধ আলাদা আলাদাভাবে অনুভব করা সম্ভব। মানুষের জিনগত পার্থক্যের কারণে একেকটি গন্ধ কারো কাছে ভালো, কারো কাছে খারাপ মনে হয়। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে কি ‘ভালো’ গন্ধ আর ‘খারাপ’ গন্ধ বলে কিছু নেই?
এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দুই-ই হতে পারে।
গবেষকরা বলেন, গন্ধ জিনগত ব্যাপার, তবে আপনি বিশেষ কোনও গন্ধকে পছন্দ বা অপছন্দ করতে ‘শিখতে পারেন’। যদি কোনও গন্ধ সুন্দর কোনও স্মৃতির কথা আপনাকে মনে করিয়ে দেয়- তাহলে আপনার সেই বিশেষ গন্ধকে সুন্দর মনে হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, একটা গন্ধের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হয়ে গেলে তার ব্যাপারে মনোভাব বদলে যেতে পারে। কাজেই পনির বা পিঁয়াজ বা বিশেষ কোনও মসলার গন্ধ ভালো না খারাপ- এটা নির্ভর করবে আপনি পৃথিবীর কোন অংশে বাস করেন তার ওপর।
সূত্র: বিবিসি বাংলা