নতুন জঙ্গি সংগঠনের কর্মী বাহিনীকে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে সহযোগিতা ছাড়াও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তাদের অর্থ সহায়তা দিতেন বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
এ কারণে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত থাকায় জামায়াত আমিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গত মাসে জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরে সিটিটিসি প্রধান বলেন, জামায়াতের আমিরকে বসুন্ধরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর তার ছেলে রাফাতসহ সহযোগীদের সিলেট থেকে গ্রেফতার করি। তার আগে আরও তিনজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। যারা নতুন জঙ্গির সদস্য। তারা সিলেট থেকে ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য হিজরত করেছিল। আমরা তাদের যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করি। তাদের দেওয়া তথ্যমতে পরে সিলেট এলাকার সমন্বয়ক ডা. রাফাতসহ অপর সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, সে আগে শিবির করত। তার সঙ্গে যারা গ্রেফতার হয়েছিল তারা সকলেই এই নতুন জঙ্গি সংগঠন শারকিয়ার ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্যই হিজরত করেছিল। সকলেই আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল। তারা ‘সাথী-পর্যায়ের’ নেতা ছিল। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি, রাফাত সিলেটে আগে শারকিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। পরে আনসার আল ইসলামে থাকাবস্থায় অনেক সমর্থকদের নিয়ে এই সংগঠনে যোগদান করতে সমর্থ হয়। সে অনুযায়ী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার দাওয়াত পেয়ে দলসহ তাতে যোগদান করে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা বলেন, রাফাতের নেতৃত্বে সিলেট থেকে সর্বপ্রথম পাহাড়ি এলাকার কুকিচিনের কাছে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য যুবকরা হিজরত করে এবং বান্দরবানে তারা কুকিচিনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। ২০২১ সালে তার বাবা ডা. শফিকুরের সঙ্গে কথা বলেই ফিরে আসে তারা। সে সময় চট্টগ্রাম থেকে দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে তাদের ঢাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে আসা হয়। যাতে তারা পুলিশের নজর এড়াতে পারে। গ্রেফতার এড়ানো যায়। তার বাবা ডা. শফিকুর রহমান, যিনি জামায়াতের আমির তার ব্যবস্থাপনায় সে সময় তাদের অনেকে ঢাকায় এবং কিছুসংখ্যক যুবক সিলেটে চলে যায়।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জামায়াত আমিরের ছেলের সিলেটের বাসা বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কাজ করত। এ বিষয়টি জামায়াতের আমির পুরোপুরি জানতেন এবং তার ছেলে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন। ডা. রাফাত যে হিজরত করেছেন এর পুরো ব্যয়ভার ডা. শফিকুর বহন করেছেন।
জামায়াত আমিদের দেওয়া খরচে যুবকদের বান্দরবানে কুকিচিনের ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংশ্লিষ্টতা পেয়ে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। এই ঘটনায় আরও একজন ডাক্তারকে আমরা গ্রেফতার করেছি, যার নাম শাকির। যারা ডা. রাফাতের সঙ্গে হিজরত করেছিল তাদের অধিকাংশজনই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এই কাজে শিবিরের সরাসরি কোনো সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল কি-না এ বিষয়টি জানার জন্য এবং এই মামলার জামায়াত আমিরের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে তাকে বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছি।