ঢাকা ০১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নওগাঁ পৌরবাসী

নওগাঁ প্রতিনিধি : প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্বেও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নওগাঁ পৌরবাসী। বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার উপদ্রবে রক্ষা পাচ্ছেন না কেউই।

কয়েল, স্প্রে সবকিছুই যেন মশার উপদ্রবের কাছে হার মানছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও যেন রেহাই নেই। মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন পৌরবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ- যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রমের অভাবে পৌরসভাজুড়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে।

নওগাঁ পৌরসভার হিসাব শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডেঙ্গু ও মশানিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিন কিস্তিতে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রতি কিস্তির বরাদ্দ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চতুর্থ কিস্তির আরও ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আসবে। এ টাকার মধ্যে সচেতনতামূলক পোস্টার বিতরণ ও ব্যানার তৈরি করা হয়। এছাড়া তিনটি ফগার মেশিনের জ্বালানি ও হ্যান্ড স্প্রের কীটনাশক কেনায় ব্যয় করা হয়। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১২ জন কাউন্সিলরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিডিউল অনুযায়ী মশানিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

১৯৬৩ সালে ৭ ডিসেম্বর ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পৌরসভাটির যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। বর্তমানে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে পৌরসভার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬১৬ জন।

পৌরবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, শুধু কাগজে-কলমে এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পৌরসভার নালা-নর্দমায় অপরিষ্কার পানি জমে থাকে। এছাড়া নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে সম্প্রতি মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। এছাড়া পৌরসভার মশকনিধন কার্যক্রমের অভাবে মশার বিস্তার চরম আকার ধারণ করেছে বলেও দাবি তাদের।

শহরের চকদেবপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, মশার অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিন-রাত সমানতালে মশা কামড়ায়। কয়েল দিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। বাচ্চারা ঠিকমতো পড়াশুনাও করতে পারে না। মশকনিধনে পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

শহরের চকদেব ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা ও দশম শ্রেণির ছাত্র ইকবাল হাসান জানায়, সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। কয়েল দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ঠিকমতো পড়াশুনা করা যায় না। মশা যেখানে কামড় দেয় সেখানে ফুলে জ্বালা করে। ঘরে কয়েল দিয়ে রাখলে আবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। এজন্য মশারির ভেতরে পড়াশুনা করতে হয়। আর মশারি টাঙানো ছাড়া তো ঘুমানোর কথা ভাবাই যায় না।

পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মধ্য-দুর্গাপুরের বাসিন্দা সাইফুল ওয়াদুদ বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে একেবারে নাজুক অবস্থা। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেনে ময়লা জমে স্তূপ হয়ে গেছে। আবার কিছু ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। ময়লা জমে থাকায় সেখানে মশা ডিম দিয়ে বংশবিস্তার করে। এতে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় পৌরবাসীও অতিষ্ঠ। এ থেকে রক্ষা পেতে অভিযোগ করা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়া মশার বিষয়ে সচেতনতামূলক কোনোকিছু চোখেও পড়েনি।

পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের খাস-নওগাঁর বাসিন্দা আরাফাত হোসেন হিমেল বলেন, পৌরসভার প্রধান রাস্তার আশপাশে ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় মশকনিধন করতে দেখা গেছে। বাকি এলাকায় দেখা যায় না। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় কোথাও বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। ঝাঁক বেঁধে মশা কামড়াতে আসে। দায় এড়ানোর মতো কাজ না করে যদি পুরো পৌর এলাকার ময়লা ও ড্রেন পরিষ্কারসহ ঝোপঝাড়ে মশানিধনের কার্যক্রম করা হয় তাহলে কিছুটা হলেও উপদ্রব কমবে।

মশার উপদ্রব আছে জানিয়ে ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার তানজিম সম্রাট বলেন, এ পর্যন্ত পৌরসভা থেকে একবার মশকনিধন কার্যক্রম করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার এলাকায় নিয়মিত মশা নিধনে স্প্রে করিয়ে থাকি।

জানতে চাইলে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে এবং পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বড় ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়। পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে ড্রেনে মশার ডিম বা লাভা জন্মাতে পারে না। এতে করে মশার বংশবিস্তার না হওয়ায় উপদ্রবও কমে যায়।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি ফগার মেশিনের সাহায্যে মশানিধনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিয়মিত মশকনিধনের কার্যক্রম করা হয়। পাশাপাশি হ্যান্ড মেশিনের সাহায্যেও মশকনিধনে কীটনাশক স্প্রে করা হয়।

মেয়র আরও বলেন, যদিও পৌরবাসী মশার উপদ্রবের বিষয়ে অভিযোগ করছেন। তারপরও মশানিধনের জন্য সময় লাগবে। আমি আশাবাদী মশার সমস্যা থাকবে না।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নওগাঁ পৌরবাসী

আপডেট সময় ০৬:১৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি : প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্বেও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নওগাঁ পৌরবাসী। বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার উপদ্রবে রক্ষা পাচ্ছেন না কেউই।

কয়েল, স্প্রে সবকিছুই যেন মশার উপদ্রবের কাছে হার মানছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও যেন রেহাই নেই। মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন পৌরবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ- যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রমের অভাবে পৌরসভাজুড়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে।

নওগাঁ পৌরসভার হিসাব শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডেঙ্গু ও মশানিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিন কিস্তিতে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রতি কিস্তির বরাদ্দ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চতুর্থ কিস্তির আরও ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আসবে। এ টাকার মধ্যে সচেতনতামূলক পোস্টার বিতরণ ও ব্যানার তৈরি করা হয়। এছাড়া তিনটি ফগার মেশিনের জ্বালানি ও হ্যান্ড স্প্রের কীটনাশক কেনায় ব্যয় করা হয়। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১২ জন কাউন্সিলরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিডিউল অনুযায়ী মশানিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

১৯৬৩ সালে ৭ ডিসেম্বর ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পৌরসভাটির যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। বর্তমানে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে পৌরসভার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬১৬ জন।

পৌরবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, শুধু কাগজে-কলমে এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পৌরসভার নালা-নর্দমায় অপরিষ্কার পানি জমে থাকে। এছাড়া নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে সম্প্রতি মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। এছাড়া পৌরসভার মশকনিধন কার্যক্রমের অভাবে মশার বিস্তার চরম আকার ধারণ করেছে বলেও দাবি তাদের।

শহরের চকদেবপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, মশার অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিন-রাত সমানতালে মশা কামড়ায়। কয়েল দিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। বাচ্চারা ঠিকমতো পড়াশুনাও করতে পারে না। মশকনিধনে পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

শহরের চকদেব ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা ও দশম শ্রেণির ছাত্র ইকবাল হাসান জানায়, সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। কয়েল দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ঠিকমতো পড়াশুনা করা যায় না। মশা যেখানে কামড় দেয় সেখানে ফুলে জ্বালা করে। ঘরে কয়েল দিয়ে রাখলে আবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। এজন্য মশারির ভেতরে পড়াশুনা করতে হয়। আর মশারি টাঙানো ছাড়া তো ঘুমানোর কথা ভাবাই যায় না।

পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মধ্য-দুর্গাপুরের বাসিন্দা সাইফুল ওয়াদুদ বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে একেবারে নাজুক অবস্থা। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেনে ময়লা জমে স্তূপ হয়ে গেছে। আবার কিছু ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। ময়লা জমে থাকায় সেখানে মশা ডিম দিয়ে বংশবিস্তার করে। এতে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় পৌরবাসীও অতিষ্ঠ। এ থেকে রক্ষা পেতে অভিযোগ করা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়া মশার বিষয়ে সচেতনতামূলক কোনোকিছু চোখেও পড়েনি।

পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের খাস-নওগাঁর বাসিন্দা আরাফাত হোসেন হিমেল বলেন, পৌরসভার প্রধান রাস্তার আশপাশে ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় মশকনিধন করতে দেখা গেছে। বাকি এলাকায় দেখা যায় না। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় কোথাও বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। ঝাঁক বেঁধে মশা কামড়াতে আসে। দায় এড়ানোর মতো কাজ না করে যদি পুরো পৌর এলাকার ময়লা ও ড্রেন পরিষ্কারসহ ঝোপঝাড়ে মশানিধনের কার্যক্রম করা হয় তাহলে কিছুটা হলেও উপদ্রব কমবে।

মশার উপদ্রব আছে জানিয়ে ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার তানজিম সম্রাট বলেন, এ পর্যন্ত পৌরসভা থেকে একবার মশকনিধন কার্যক্রম করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার এলাকায় নিয়মিত মশা নিধনে স্প্রে করিয়ে থাকি।

জানতে চাইলে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে এবং পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বড় ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়। পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে ড্রেনে মশার ডিম বা লাভা জন্মাতে পারে না। এতে করে মশার বংশবিস্তার না হওয়ায় উপদ্রবও কমে যায়।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি ফগার মেশিনের সাহায্যে মশানিধনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিয়মিত মশকনিধনের কার্যক্রম করা হয়। পাশাপাশি হ্যান্ড মেশিনের সাহায্যেও মশকনিধনে কীটনাশক স্প্রে করা হয়।

মেয়র আরও বলেন, যদিও পৌরবাসী মশার উপদ্রবের বিষয়ে অভিযোগ করছেন। তারপরও মশানিধনের জন্য সময় লাগবে। আমি আশাবাদী মশার সমস্যা থাকবে না।