ঢাকা ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন সংকটে পুতিনের লাভ-ক্ষতি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ইস্যুতে এগিয়ে আছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু সংকটের অবসান হয়েছে দাবি করলে তাতে বেশ তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে।

সংঘাত কেটে গেলেও পরিস্থিতি নতুন ঠাণ্ডা যুদ্ধে রূপ নেওয়ার শঙ্কায় আছে।

প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত থেকে সেনা স্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার মস্কোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, সীমান্তে সেনা আরও বাড়াচ্ছে রাশিয়া। যে কোনো সময় হামলার প্রস্তুতি দেশটির আছে। যদিও মস্কো তা অস্বীকার করে আসছে।

রাশিয়ার দাবি, পশ্চিমারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা দাবিগুলো অগ্রাহ্য করছে—পাত্তা দিচ্ছে না।

এরইমধ্যে সোমবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক চেষ্টা চালাতে আরও সময়ে চেয়েছেন দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক সের্গেই লাভরভ। জবাবে আলোচনার নামে জটিলতায় জড়াতে চাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন পুতিন।

ইতিমধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সলজ ও দুই ব্রিটিশ মন্ত্রীসহ বহু কূটনীতিক রাশিয়ার সফরে গেছেন। সংকট-সুরাহায় তারা জোর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। এতে মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগ বৈশ্বিক এজেন্ডায় রূপ নিয়েছে—যা পুতিনের বড় অর্জন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠ থিংকট্যাংক আরআইএসির প্রধান অ্যান্ড্রে কুর্টোনভ বলেন, পুতিনের সবচয়ে বড় সফলতা—তিনি পশ্চিমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। রাশিয়ার অবস্থান ও বিবরণ নিয়ে তারা সজাগ ও সতর্ক হচ্ছেন। যা মস্কোর অর্জনের তালিকা আরও শক্তিশালী করেছে।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা এখন দেখতে হবে। নেতিবাচক কিছুও ঘটতে পারে।

মস্কোর অনেকগুলো নিরাপত্তা দাবিকে অদ্ভুত বলে উড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যার মধ্যে ১৯৯৭ সালের রেখায় ন্যাটোকে তার অবকাঠামো সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ন্যাটোর জোট সম্প্রসারণের অবসান ও ইউক্রেনকে সদস্যভুক্ত করার ক্ষেত্রে ভেটো দেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে।

কিছু কিছু বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইউরোপে একটি নিরাপত্তা পরিবেশ তৈরি করতে বাস্তবোচিত আলোচনা টেবিলে আছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতা ও কৌশলগত স্থিতিশীলতাসহ আরও অনেক পদক্ষেপ রয়েছে।

অ্যান্ড্রে কুর্টোনভ বলেন, রাশিয়ার চাওয়া বাইডেনের বক্তব্যে পুরোপুরি আসেনি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন, রাশিয়ার প্রত্যাশার মধ্যে তা বাস্তবসম্মতভাবেই যুক্ত হতে পারে।

বাইডেনের হিসাবে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া দেড় লাখের বেশি সেনা জমায়েত করেছে। মস্কোর এমন পদক্ষেপের যৌক্তিক খেসারত তো রয়েছেই। এতে ন্যাটো আরও উদ্দীপ্ত হবে। জোটটি নিজেদের শক্তিমত্তা বাড়াতে সচেষ্ট হয়ে ওঠবে। ইউক্রেনও ইতিমধ্যে ব্যাপক সামরিক সহায়তা পেয়েছে।

পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা হুমকিতে রাশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ ও মুদ্রা রুবলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, ইস্তোনিয়ায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ন্যাটো। ইউরোপের দক্ষিণপূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে নতুন নতুন সেনা ইউনিট পাঠানোরও পরিকল্পনা করেছে এই সামরিক জোট।

চাথাম হাউসের গবেষক কেই গিলেস বলেন, অধিকাংশ সময়েই সামরিক ভীতিপ্রদর্শনে হীতে বিপরীত ফল আসে। রাশিয়ার হুমকি থেকে ইউরোপকে সুরক্ষার কথাই পশ্চিমা মানসিকতায় বেশি জোর দেওয়া হয়। এতে ন্যাটোর ঐক্য আরও শক্তিশালী হবে।

বৃহস্পতিবার পশ্চিম ইউরোপে অস্ত্রবিরতি রেখায় পরস্পরের বিরুদ্ধে গোলাবিনিময়ের অভিযোগ করেছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীরা। এতে উত্তেজনা ফের চরম রূপ নিয়েছে। ব্রিটেনের দাবি, ইউক্রেন হামলার অজুহাত খুঁজছে রাশিয়া।

সংকট নতুন ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহকে চূড়ান্ত মুহূর্ত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের উত্তরে বেলারুশে ব্যাপক সামরিক মহড়া রোববার শেষ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ থেকে সেনাপ্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো।

কিয়েভভিত্তিক পেন্টা থিংকট্যাংকের প্রধান ভ্লোদিমির ফেসেনকো বলেন, যদি সেনাপ্রত্যাহার হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পাই, তবে বলতে পারব—সংকট শেষ হয়ে গেছে। কাজেই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের সাবেক প্রধান স্যার জন সিউয়ারস বলেন, সংকট একটি সন্ধিক্ষণে চলে যেতে পারে। যদিও পুতিনের জন্য ইউক্রেনে বিভিন্ন সামরিক বিকল্প আছে। কোনো কোনো দিক থেকে পুতিন এগিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা উদ্বেগের ক্ষেত্রে মস্কোর অগ্রগতি হয়েছে, ইউক্রেনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ইউরোপ যে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল—সে বিষয়টিতে বেশি আলোকপাত করা হচ্ছে।

ইউক্রেনকে চাপে রাখতে চলতি সপ্তাহে পুতিন নতুন একটি হাতিয়ার পেয়েছেন। ইচ্ছা করলেই তা তিনি লুফে নিতে পারেন: স্বাধীনতা চাওয়া ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রুশ আইনপ্রণেতারা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রকে রাশিয়া সমর্থন দিলে সংঘাত নিরসনে ২০১৪-২০১৫ সালের মিনসক চুক্তি কার্যকারিতা হারাবে। শান্তিপ্রক্রিয়াও ভিন্নখাতে চলে যাবে।

ভ্লোদিমির ফেসেনকো বলেন, সেনা সরিয়ে রাশিয়া যদি পরিস্থিতি সহজ করে দেয়, তবুও গত বসন্তের মতো দ্রুতই তাদের সেখানে ফিরিয়ে আনতে পারবে। এতে চারদিকে নতুন ঠাণ্ডাযুদ্ধকালীন দৃশ্যপট তৈরি হবে। উত্তেজনা ও রাজনৈতিক সংঘাত সুসংহত হবে—পরবর্তী সময়েও যা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এমন কিছু হওয়ার শঙ্কাই বেশি। নীতির বাইরে গিয়ে পুতিন পিছুহটতে পারবেন না। তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেখান থেকে সরে আসাও তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এই বিশ্লেষকের মতে, সীমান্তে সেনা থাকবে, রাজনৈতিক সংঘাতও অব্যাহতভাবে চলবে—কেবল সংখ্যা বেশি-কমে ওঠানামা করবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে আমরা যা দেখেছি, এবার তা থেকে সামান্য হেরফের হতে পারে। তবে, সংঘাত দীর্ঘসময় চলতে পারে।

ট্যাগস

ইউক্রেন সংকটে পুতিনের লাভ-ক্ষতি

আপডেট সময় ০৯:৫৮:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ইস্যুতে এগিয়ে আছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু সংকটের অবসান হয়েছে দাবি করলে তাতে বেশ তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে।

সংঘাত কেটে গেলেও পরিস্থিতি নতুন ঠাণ্ডা যুদ্ধে রূপ নেওয়ার শঙ্কায় আছে।

প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত থেকে সেনা স্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার মস্কোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, সীমান্তে সেনা আরও বাড়াচ্ছে রাশিয়া। যে কোনো সময় হামলার প্রস্তুতি দেশটির আছে। যদিও মস্কো তা অস্বীকার করে আসছে।

রাশিয়ার দাবি, পশ্চিমারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা দাবিগুলো অগ্রাহ্য করছে—পাত্তা দিচ্ছে না।

এরইমধ্যে সোমবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক চেষ্টা চালাতে আরও সময়ে চেয়েছেন দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক সের্গেই লাভরভ। জবাবে আলোচনার নামে জটিলতায় জড়াতে চাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন পুতিন।

ইতিমধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সলজ ও দুই ব্রিটিশ মন্ত্রীসহ বহু কূটনীতিক রাশিয়ার সফরে গেছেন। সংকট-সুরাহায় তারা জোর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। এতে মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগ বৈশ্বিক এজেন্ডায় রূপ নিয়েছে—যা পুতিনের বড় অর্জন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠ থিংকট্যাংক আরআইএসির প্রধান অ্যান্ড্রে কুর্টোনভ বলেন, পুতিনের সবচয়ে বড় সফলতা—তিনি পশ্চিমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। রাশিয়ার অবস্থান ও বিবরণ নিয়ে তারা সজাগ ও সতর্ক হচ্ছেন। যা মস্কোর অর্জনের তালিকা আরও শক্তিশালী করেছে।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা এখন দেখতে হবে। নেতিবাচক কিছুও ঘটতে পারে।

মস্কোর অনেকগুলো নিরাপত্তা দাবিকে অদ্ভুত বলে উড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যার মধ্যে ১৯৯৭ সালের রেখায় ন্যাটোকে তার অবকাঠামো সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ন্যাটোর জোট সম্প্রসারণের অবসান ও ইউক্রেনকে সদস্যভুক্ত করার ক্ষেত্রে ভেটো দেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে।

কিছু কিছু বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইউরোপে একটি নিরাপত্তা পরিবেশ তৈরি করতে বাস্তবোচিত আলোচনা টেবিলে আছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতা ও কৌশলগত স্থিতিশীলতাসহ আরও অনেক পদক্ষেপ রয়েছে।

অ্যান্ড্রে কুর্টোনভ বলেন, রাশিয়ার চাওয়া বাইডেনের বক্তব্যে পুরোপুরি আসেনি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন, রাশিয়ার প্রত্যাশার মধ্যে তা বাস্তবসম্মতভাবেই যুক্ত হতে পারে।

বাইডেনের হিসাবে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া দেড় লাখের বেশি সেনা জমায়েত করেছে। মস্কোর এমন পদক্ষেপের যৌক্তিক খেসারত তো রয়েছেই। এতে ন্যাটো আরও উদ্দীপ্ত হবে। জোটটি নিজেদের শক্তিমত্তা বাড়াতে সচেষ্ট হয়ে ওঠবে। ইউক্রেনও ইতিমধ্যে ব্যাপক সামরিক সহায়তা পেয়েছে।

পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা হুমকিতে রাশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ ও মুদ্রা রুবলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, ইস্তোনিয়ায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ন্যাটো। ইউরোপের দক্ষিণপূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে নতুন নতুন সেনা ইউনিট পাঠানোরও পরিকল্পনা করেছে এই সামরিক জোট।

চাথাম হাউসের গবেষক কেই গিলেস বলেন, অধিকাংশ সময়েই সামরিক ভীতিপ্রদর্শনে হীতে বিপরীত ফল আসে। রাশিয়ার হুমকি থেকে ইউরোপকে সুরক্ষার কথাই পশ্চিমা মানসিকতায় বেশি জোর দেওয়া হয়। এতে ন্যাটোর ঐক্য আরও শক্তিশালী হবে।

বৃহস্পতিবার পশ্চিম ইউরোপে অস্ত্রবিরতি রেখায় পরস্পরের বিরুদ্ধে গোলাবিনিময়ের অভিযোগ করেছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীরা। এতে উত্তেজনা ফের চরম রূপ নিয়েছে। ব্রিটেনের দাবি, ইউক্রেন হামলার অজুহাত খুঁজছে রাশিয়া।

সংকট নতুন ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহকে চূড়ান্ত মুহূর্ত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের উত্তরে বেলারুশে ব্যাপক সামরিক মহড়া রোববার শেষ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ থেকে সেনাপ্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো।

কিয়েভভিত্তিক পেন্টা থিংকট্যাংকের প্রধান ভ্লোদিমির ফেসেনকো বলেন, যদি সেনাপ্রত্যাহার হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পাই, তবে বলতে পারব—সংকট শেষ হয়ে গেছে। কাজেই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের সাবেক প্রধান স্যার জন সিউয়ারস বলেন, সংকট একটি সন্ধিক্ষণে চলে যেতে পারে। যদিও পুতিনের জন্য ইউক্রেনে বিভিন্ন সামরিক বিকল্প আছে। কোনো কোনো দিক থেকে পুতিন এগিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা উদ্বেগের ক্ষেত্রে মস্কোর অগ্রগতি হয়েছে, ইউক্রেনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ইউরোপ যে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল—সে বিষয়টিতে বেশি আলোকপাত করা হচ্ছে।

ইউক্রেনকে চাপে রাখতে চলতি সপ্তাহে পুতিন নতুন একটি হাতিয়ার পেয়েছেন। ইচ্ছা করলেই তা তিনি লুফে নিতে পারেন: স্বাধীনতা চাওয়া ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রুশ আইনপ্রণেতারা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রকে রাশিয়া সমর্থন দিলে সংঘাত নিরসনে ২০১৪-২০১৫ সালের মিনসক চুক্তি কার্যকারিতা হারাবে। শান্তিপ্রক্রিয়াও ভিন্নখাতে চলে যাবে।

ভ্লোদিমির ফেসেনকো বলেন, সেনা সরিয়ে রাশিয়া যদি পরিস্থিতি সহজ করে দেয়, তবুও গত বসন্তের মতো দ্রুতই তাদের সেখানে ফিরিয়ে আনতে পারবে। এতে চারদিকে নতুন ঠাণ্ডাযুদ্ধকালীন দৃশ্যপট তৈরি হবে। উত্তেজনা ও রাজনৈতিক সংঘাত সুসংহত হবে—পরবর্তী সময়েও যা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এমন কিছু হওয়ার শঙ্কাই বেশি। নীতির বাইরে গিয়ে পুতিন পিছুহটতে পারবেন না। তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেখান থেকে সরে আসাও তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এই বিশ্লেষকের মতে, সীমান্তে সেনা থাকবে, রাজনৈতিক সংঘাতও অব্যাহতভাবে চলবে—কেবল সংখ্যা বেশি-কমে ওঠানামা করবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে আমরা যা দেখেছি, এবার তা থেকে সামান্য হেরফের হতে পারে। তবে, সংঘাত দীর্ঘসময় চলতে পারে।