ক্রীড়া ডেস্ক : কোপা আমেরিকার ফায়সালা শেষ। এবার ফায়সালা হবে ইউরোর। ১১টি শহর আর ২৪টি দেশ ঘুরে এখন ইউরো এসে দাঁড়িয়েছে একেবারে শেষ প্রান্তে। বাকি আছে দুটি দেশ। শেষ লড়াই হবে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। শিরোপার জন্য লড়বে ইংল্যান্ড এবং ইতালি।
১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলো ইংল্যান্ড। আর বারবার ইউরোর ইউরোর ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারা ইতালি। কে জিতবে এবারের ইউরো টুর্নামেন্ট। ওয়েম্বলিতে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায় শুরু হবে এই মেগা ফাইনাল।
এই প্রথম ইউরো কাপের ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ১৯৬৬’র বিশ্বকাপ জয়ের পর আবারও কোনো বড় ট্রফি ঘরে তুলবে।
অন্যদিকে ইতালি ১৯৬৮ সালে প্রথমবার এবং এযাবতবালে একবারই ইউরোর শিরোপা জিততে পেরেছে। এরপর আরও দু’বার বিশ্বকাপ জিততে পারলেও ইউরো জেতা সম্ভব হয়নি আজ্জুরিদের। ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ এবং ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে ইতালি। এছাড়াও ২০০২ ও ২০১২ সালে ইউরোর এবং ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল তারা।
এবারের টুর্নামেন্টে ইতালি প্রমাণ করেছে, তারা দুর্দান্ত একেটি দল। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই নিজেদের সেভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে ইতালিয়ানরা। যদিও সেমিফাইনালে স্পেনের সামনে অনেকটা ফ্যাকাশে মনে হয়েছিল তাদের। কিন্তু টাইব্রেকারে ভাগ্যের চাকাটা তাদের দিকেই ঘুরেছে। স্পেনকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইতালি।
অন্যদিকে বিতর্কিত সেমিইনাল শেষে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইংল্যান্ড। ডেনমার্কের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, পেনাল্টি দেয়ার মত কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অথচ রেফারি পেনাল্টির আদেশ দেন। ভিএআর দেখেও তিনি আদেশ থেকে সরে আসেননি।
অন্যদিকে ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন যখন স্পট কিক নিতে যান, তখন ডেনমার্ক গোলরক্ষকের চোখের ওপর লেজার রশ্মি ফেলা হয়। তবুও গোলরক্ষক শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ফিরতি বলে গোল করেন কেইন নিজেই।
অতীত চিন্তা করেও ইতালি আজকের ফাইনালে উজ্জীবিত থাকতে পারে। কারণ, এর আগে বড় টুর্নামেন্টে চারবার ইংলিশদের মুখোমুখি হয়েছিল আজ্জুরিরা। চারবারই জিতেছে তারা।
১৯৮০ ইউরোয় প্রথমবার মুখোমুখি হয় দুই দল। সেবার ছিল গ্রুপ পর্বের লড়াই। বেশ কিছু বিশ্বমানের ফুটবলার ছিল সেবার ইংল্যান্ড দলে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না ইংলিশদের। ১১ মিনিটে মার্কো তারদেল্লির খুব কাছ থেকে নেয়া শটে গোল করে ইতালিকে জয় এনে দেন।
১০ বছর পর ১৯৯০ বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আবারও দেখা হয় ইতালি এবং ইংল্যান্ডের। দুই দলই পেনাল্টি শ্যুট-আউটে বিদায় নেয় সেমির লড়াই থেকে। রবার্তো ব্যাজিও শুরুতেই গোল করে এগিয়ে দেয় ইতালিকে। তবুও পরে ডেভিড প্লাট গোল করে সমতায় ফেরায় ইংল্যান্ডকে। শেষ পর্যন্ত সালভাতোর এসচিলাচির পেনাল্টি গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইতালি।
২২ বছর পর আবারও দেখা দু’দলের। ২০১২ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে। কিয়েভে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ১২০ মিনিটের খেলায় ইতালিকে প্রায় বিদায় কর দিয়েছিল। কিন্তু টাইব্রেকারে গিয়েই ভাগ্য পোড়ে ইংল্যান্ডের। আন্দ্রে পিরলোর সেই বিখ্যাত আলতো করে নেয়া পেনাল্টি শটে পরাস্ত হন ইংলিশ গোলরক্ষক জো হার্ট।
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে সর্বশেষ দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হয়। সেটা গ্রুপ পর্বে। এই ম্যাচেও ব্যর্থতার গল্প লেখা হয় ইংলিশদের। ক্লদিও মার্চিসিওর গোলে ইতালি এগিয়ে গেলেও প্রথমার্ধে ড্যানিয়েল স্টারিজ সমতায় ফেরান ইংলিশদের। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মারিও বালেতোল্লির হেড জয় এনে দেয় ইতালিকেই।
তবে ফুটবলে অতীত ইতিহাস কখনোই বর্তমানে কাজে লাগে না। ওয়েম্বলিতে আজ সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই ম্যাচে যে দল টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারবে, চাপ সহ্য করতে পারবে, সেই দলের হাতেই উঠবে শিরোপা। আপাতত অপেক্ষা সে পর্যন্ত।