কলকাতায় পুজো উদ্বোধন নিয়ে বিতর্ক লেগে আছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। মুসলিম হয়ে পুজো উদ্বোধন করা নিয়ে চটেছেন নেটিজেনরা।
সামাজিক যোগাযোগের দেয়াল লিখনীতে ভাসছে সাকিবকে নিয়ে নানা সমালোচনা। আবার পুজো উদ্বোধনের পরই তার জন্য ক্ষমাও চাইলেন সাকিব, তাতে একদিকে রক্ষা কিছুটা হলেও অন্যদিকে শুরু হয়েছে পাল্টা বিতর্ক।
হিন্দুত্ববাদীরা এবার প্রশ্ন তুলছেন, যদি ক্ষমাই চাইতে হলো তাহলে কেন আসলেন মণ্ডপে। সাকিবের এসব সমালোচনার মূলে যে ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে সে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এমএলএ পরেশ পাল। অনেকেই বলছেন, যদি না পরেশ পাল আমন্ত্রণ না জানাতো তাহলে সাকিবের পুজো উদ্বোধনের প্রসঙ্গই আসতো না।
কেউ কেউ পরেশ পালকেও ছুড়ে দিয়েছেন, পাল্টা যুক্তির প্রশ্ন? যদি তাকে কোরবানির ঈদে গরু জবাইয়ের আমন্ত্রণ করা হয় তাহলে কি করবেন পরেশ পাল? এমন প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন পরেশ। আর উত্তর দিতে গিয়ে জানিয়েছেন তিনি আদি বাংলাদেশি। বরিশালে তার পিতৃভিটা রয়েছে আর জন্ম হয়েছে বাগেরহাট মামা বাড়ি। আর কোরবানির গরু কিনতে মুসলিম বন্ধুদের হাটে গিয়ে সাহায্য করতেও রাজি এই তৃণমূল নেতা।
জানা যায়, দেশ ভাগের এক বছর আগে জন্ম নেন পরেশ পাল। আর দেশ ভাগের সময় তার পরিবার উদ্বাস্তু হিসেবে জন্মভিটা বরিশাল ছেড়ে চলে যান কলকাতায়। সেই থেকেই পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় তাদের বসবাস। বেড়ে ওঠা, রাজনীতি – সবকিছুই ওই এলাকা ঘিরেই। পরে কংগ্রেসি ঘরানার রাজনীতি করলেও একেবারে ছোটবেলা থেকে তিনি বড় হয়েছেন বামপন্থী দল আরএসপি-র নেতা মাখন পালের কাছে।
আর মাখন পালকে তার রাজনৈতিক গুরু মানেন পরেশ পাল। স্থানীয়দের কাছে মাখন পালেই হচ্ছে পরেশ পালের রাজনৈতিক পিতা এমনটা বলছেন কলকাতার জেষ্ঠ্য সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী।
জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, দেশভাগের সময় নিজের বোনকে হারানোর দুঃখ এখনও বয়ে বেড়ান পরেশ পাল। আর সে দুঃখ ভুলতেই অসহায় মেয়েদের গণবিয়ের আয়োজন করছেন গত ৪০ বছর থেকে। সামাজিক এই কর্মকাণ্ডের বাইরে সুভাষ চন্দ্রকে নিয়ে মাস ব্যাপি সুভাষ মেলার আয়োজকও পরেশ পাল। আর গত এক দশক ধরে আয়োজন করছে ইলিশ উৎসব। আর বড় করে কালীপুজো আয়োজন করছেন বহুদিন থেকেই।
কাঁকুড়গাছি-বেলেঘাটা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, পরেশ পালের উদ্যোগে হওয়া ওই বাৎসরিক গণবিবাহের ইতিবাচক একটা দিক থাকলেও বেশ কিছু বর-কনেকে দেখা যায় প্রতিবছরই ওই বিবাহ অনুষ্ঠানে বিয়ে করতে। গণবিবাহের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য এটা করা হয় বলে এলাকার ওই বাসিন্দাদের ধারণা।
“এলাকার রিকশাচালক, বিধবা নারীদের নিয়ে গিয়ে ওই অনুষ্ঠানে বিয়ে দেয়া হয়। তাদের সারাদিনের খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক বিয়েই তিন থেকে চার দিনের বেশী টেঁকে না, এমন অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়দের।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুখেন্দু শেখর রায়ও মনে করেন, রাজনীতি হোক বা সামাজিক কাজকর্ম, চমক দেওয়াটাই পরেশের স্বভাব। এই যে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বিতর্ক, সেখানেও ও চমকই দিতে চেয়েছিল বোধহয়। অন্য অনেক পুজো কমিটি ভারতের ক্রিকেটারদের দিয়ে উদ্বোধন করায়, ওর মাথায় কাজ করেছে আমি ভারতের ক্রিকেটার কেন আনব, বাংলাদেশের স্টার ক্রিকেটার নিয়ে আসব। ও এরকমই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা