আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ লাদাখে তিনটি অঞ্চলেই গত তিন দিনে চীনা সেনার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ভারতের এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার উদ্ধৃত দিয়ে শুক্রবার প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব লাদাখে সঙ্ঘাতের তিনটি ক্ষেত্র থেকে বেশ কিছু সেনা সরিয়েছে চীন।
তবে তাদের নির্মাণ এবং আধা-স্থায়ী কাঠামোগুলো এখনও রয়েছে। সেখানে রয়েছে কিছু চীন সেনাও।
গালওয়ান উপত্যকার পাশাপাশি গোগরা হট স্প্রিং এবং প্যাংগং লেকের কাছে ফিঙ্গার এরিয়াতেও পিপলস লিবারেশন আর্মির সেনার সংখ্যা হ্রাসের খবর এসেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) উত্তেজনা কমাতে গত ২২ জুন দু’পক্ষের কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠক হয়েছিল।
এর পরেই চীনের পক্ষ থেকে সেনা কমানোর প্রক্রিয়া নজরে এসেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তার দাবি, ২২ জুনের বৈঠকে চীনা নির্মাণগুলো ভেঙে ফেলার বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
পরবর্তী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে। তিনি বলেন, ২২ জুনের বৈঠকে স্থির হয়েছে, ওই তিন অঞ্চলে সেনা টহলদারি হবে না।
সামরিক যানবাহন চলাচল করবে না। নতুন করে কোনও নির্মাণের কাজও হবে না। উত্তর লাদাখে দেপসাং এলাকায় দারবুক-দৌলত বেগ ওল্ডি সড়কের অদূরে এলএসি পেরিয়ে চীন সেনার কয়েক কিলোমিটার অনুপ্রবেশ-
এবং ঘাঁটি গেড়ে বসার ‘খবর’ও ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও কেন্দ্রের ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছু বলেননি।
সরকারি সূত্রে খবর, ভারতের ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (এনটিআরও)-কে লাদাখের উপগ্রহ চিত্রগুলো বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে দাবি করা হয়েছে, ১৫ জুনের সংঘর্ষের এক সপ্তাহ পর (২২ জুন) পর্যন্ত গালওয়ানে চীনের সেনা নজরদারি পোস্টসহ বিভিন্ন নির্মাণের কাজ চালিয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত তিনশোরও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ওই ছবিগুলো মূলত দ্বিমাত্রিক।
তা দেখে জমির পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। ছবি দেখে মনে হবে গালওয়ান নদী যেন সমতলের উপর দিয়েই বয়ে চলেছে। কিন্তু আদৌ তা নয়।
১৫ জুনের পরে নির্মাণের কিছু কাজ হলেও ২২ জুনের পরে তা বন্ধ হয়েছে। একটি হেলিপ্যাড দেখিয়ে বলা হচ্ছে, সেটা চীনের। কিন্তু কিছুদিন আগে আমরাই ওটা বানিয়েছি।
সম্প্রতি একটি বিদেশি সংস্থা প্রকাশিত ২১ মে তোলা উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, সে সময় গালওয়ান নদীর তীরে মাত্র একটি চীনা তাঁবু ছিল।
ওই সংস্থারই ২২ জুনের উপগ্রহ চিত্র দেখাচ্ছে, সেখানে পুরোদস্তুর কংক্রিটের কালভার্ট বানিয়েছে চীন। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মির তাঁবু ও অন্যান্য নির্মাণ, গাড়ি এবং সামরিক উপকরণ।
পাহাড়ের গায়ে চীনা সেনার থাকার ঘরও তৈরি। দারবুক-দৌলত বেগ ওল্ডি সড়কের মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে, ১৫ জুনের সংঘর্ষ স্থল পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-র অদূরে চীনা বাহিনীর এই অবস্থান।
এদিন প্রকাশিত খবরটিতে আরেক কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা সরাসরি লাদাখের এলএসি’র পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, চীন সেনার ১০টি মেকানাইজড এবং আর্মার্ড রেজিমেন্ট সেখানে রয়েছে। অন্তত ১৫টি জায়গায় চীনা আর্টিলারি রেজিমেন্টগুলো কামান বসিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ভারত এলএসি পার হয়ে স্থিতাবস্থা লঙ্ঘন করেনি।
কিন্তু তেমন ভূমিকা নেয়নি বলেই বারবার সঙ্ঘাত হচ্ছে। এই মন্তব্যে এলএসসি পার হয়ে চীনা সেনার ঢুকে পড়ার ঘটনা স্পষ্ট বলে কূটনৈতিক মহলের মত।
সেনা সূত্রের খবর, ১৫ জুন গালওয়ানের সংঘর্ষ আগে প্যাংগং লেকের উত্তরেও মুখোমুখি লড়াই বেধেছিল। দু’পক্ষের সেনার বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
সেখানে গত এপ্রিল পর্যন্ত ৪ থেকে ৮ ফিঙ্গার এরিয়া টহল দিয়েছে ভারতীয় সেনা। কিন্তু চীনা ফৌজ ফিঙ্গার এরিয়া ৮-এর কাছে এলএসি পেরিয়ে প্রায়-
আট কিলোমিটার ঢুকে এসেছে বলে অভিযোগ। সেখানে তারা বাঙ্কার এবং আর্টিলারি পজিশন বানিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। ফলে টহলদারি করতে পারছে না ভারতীয় সেনা।