ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ নতুন অটোবাইক ছিনতাই করার জন্যই রোগী সেজে চার ঘাতক ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে অটোবাইক চালক ফারুক তালুকদারকে (৩৬)। এ হত্যার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার (২১ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান।
এ সময় পুলিশ সুপার জানান, গত ৬ মার্চ ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ফতেপুর শ্মশান ঘাট এলাকার নিকট অটোবাইক চালক ফারুকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরদিন ফারুকের ভাই হান্নান তালুকদার (৪৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার তদন্তের সূত্র ধরে গত শুক্রবার (২০ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিক রাজবাড়ী সদরের ব্রাকপাড়া এলাকা থেকে আনিছ মল্লিককে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া সূত্রে রাতেই ফরিদপুর সদরের গঙ্গাবর্দী গ্রামের আনিছের ছোট দুলাভাই মো. সাইফুদ্দিনের বাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া অটোবাইক উদ্ধার করা হয়।
ওই সময় মো. সাইফুদ্দিনকে আটক করা হয়। এছাড়া ওই অটোবাইকে ব্যবহার করা পাঁচটি ব্যাটারি আনিছের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ব্যাটারি গঙ্গাবর্দী থেকে অটোবাইক চালক দেলোয়ার আনিছের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল। এ ঘটনায় দেলোয়ারকেও আটক করা হয়।
আনিছ জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে তারা মোট চারজন অংশ নেন। তারা ৬ মার্চ রাত ৮টার দিকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে রোগী সেজে অটোবাইক চালক ফারুককে ভাড়া করে। পরে তাকে ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপাল ইউনিয়নের ফতেপুর এলাকায় নিয়ে এসে গলা কেটে হত্যা করে।
পুলিশ আনিছের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার বিকাল ৩টার দিকে রাজবাড়ী সদর এলাকা থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত শহীদ মিয়া (২২) নামে আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেন।
বিকালে আনিছ ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের বিচারিক হাকিম ওসমান গণির আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে তাকে (আনিছ) জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, নিহত ফারুক তালুকদার রাজবাড়ী সদরের পাচুড়িয়া ইউনিয়নের গোপ্তমানিক গ্রামের মৃত সিদ্দিক তালুকদারের ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং তিন মেয়ের বাবা। ফারুক আগে চা দোকান করতেন।
কিন্তু সংসারের অভাব মেটানোর জন্য ধার দেনা ও কিস্তি করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তিন মাস আগে লাল রঙের একটি ইজিবাইক কিনেছিলেন। ইজিবাইকের কিস্তির টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি।