নতুন শিক্ষাক্রমে বদলে যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। বন্ধ হচ্ছে পরীক্ষা। থাকছে না জিপিএ-নম্বর নিয়ে মাতামাতিও। মূল্যায়নে আসছে চিহ্ন বা সূচক, যা নিয়ে শঙ্কা, সংশয়ের শেষ নেই অভিভাবকদের। অভিযোগ-অনুযোগ রয়েছে শিক্ষকদেরও। এ শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন অভিভাবকরা। গণস্বাক্ষরের পর ঘোষণা দিয়েছেন মানববন্ধন কর্মসূচির। শিক্ষাবিদরাও কেউ কেউ বলছেন- রাজনৈতিক উত্তাপের বছরে সরকারকে বাড়তি চাপে ফেলতে পারে নতুন শিক্ষাক্রম।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন যে কারিকুলামটা তারা করছেন, যেভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করছেন, সেটি বিদেশি। অত্যন্ত অ্যাডভান্সড কান্ট্রি (অতি উন্নত দেশ) এটা ফলো করে। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষকদের পক্ষে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে, শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়’
অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: শিক্ষাক্রমের সব দেখছি-শুনছি। মূল কথাটা হলো- যিনি ভাত রাঁধতে জানেন না, যদি তাকেই কাচ্চি-বিরিয়ানি রান্না করতে দেওয়া হয় তাহলে সেটা তো কাচ্চি-বিরিয়ানি হবে না, সেগুলো সব জাউ হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের অবস্থাও তাই। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো—এটা (শিক্ষাক্রম) যারা করছেন, তারা লেজে-গোবরে করে ফেলছেন। সাফ-সুতরা করতে বহু সময় লাগবে। ভুগতেও হতে পারে।
অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: মোটেও না। আমি সব সময় ভালোটাকে গুরুত্ব দেই। সেটা যেই করুক। একই সঙ্গে সক্ষমতাকেও বিচার-বিশ্লেষণ করি। আপনাকে কারিকুলাম করতে হবে দেশ-জাতির জন্য উপযোগী করে। হ্যাঁ, আমার লক্ষ্য থাকবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। তবে আমার দেশের শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চিন্তা-ভাবনা মাথায় রেখে এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আমার এমন মতামত। বিদ্বেষ বা হিংসা থেকে নয়। বিশ্বের বহু দেশে জিপিএ বা গ্রেডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়ন সিস্টেম (পদ্ধতি) এখনো চালু রয়েছে। এটির মানোন্নয়ন করা যায়, সংস্কার করা যায়। হুট করে তুলে দেওয়া, বাতিল করে দেওয়া একটা বেকুবের মতো কাজ হবে’
২০১২ সালের কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) যেটা আমরা করে দিয়েছিলাম, সেটাতে কিছু নতুনত্ব আনা হয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে এ কারিকুলামটা চালু করা হয়। এখন পর্যন্ত সেটাই চলছে। ওই কারিকুলামের নতুনত্ব শিক্ষকরা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। দফায় দফায় ট্রেনিং (প্রশিক্ষণ) দিয়েও তাদের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এটাই বাস্তবতা।এখন যে শিক্ষকরা দেশের প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরে পড়াচ্ছেন, তাদের দিয়ে কোনো শিক্ষাক্রমই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্টেজে (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে) যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাদের ১৫-২০ শতাংশ যোগ্যতাসম্পন্ন। আর ৮০-৮৫ শতাংশ শিক্ষককে যতই ট্রেনিং দেন, তাদের দিয়ে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে পারা যাবে না’ উনি (নতুন শিক্ষাক্রম প্রণেতা অধ্যাপক মশিউজ্জামান) যেটা বলছেন, সেটাই কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা। আমি আবারও বলছি- উনি এ সম্পর্কে যে কথাটা বলছেন, গ্রেডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করাটা নির্বুদ্ধিতা ও কাণ্ডজ্ঞানহীন, ওনার এ মন্তব্যটাও কাণ্ডজ্ঞানহীন। বিশ্বের বহু উন্নত দেশে গ্রেডিং সিস্টেম চালু আছে এবং থাকবে।
অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: কাজ দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা ছাত্র-ছাত্রীদের বহন ক্ষমতা বা করার মতো সক্ষমতার মধ্যে দিতে হবে তো। কাজ দেওয়াটা আমি খারাপভাবে দেখি না। ২০১২ সালের যে কারিকুলাম আমরা করেছিলাম, সেটাতেও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নতুন কিছু কাজ রেখেছিলাম। শিক্ষকরা সেগুলো নিজেরা ভালোমতো বুঝে করাতে পারেননি। সব বিষয়ে কাজ দিয়ে রাখবেন, তার ঘুম নেই? খাওয়া-দাওয়া নেই? কেবল কাজই করো, কাজই করো—এটা তো হতে পারে না। মূল কথা হলো- নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখায় কোনো সমন্বয় নেই।
আমি স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলছি- বর্তমান সরকারকে তারা (শিক্ষাক্রম প্রণেতারা) চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আমি তো খুব স্পষ্টভাবে সরকারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে দেখছি। একই সঙ্গে এটা বলে রাখছি- নতুন এ শিক্ষাক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।