যে ট্রফির জন্য এতো এতো লড়াই । অবশেষে বিশ্ব জয়ী খেলোয়ারের হাতে সেই ট্রফি । কোটি ভক্তদের আশা পুরণ করে হাতে তুলে নিলেন কাংখিত সেই ট্রফি । হ্যাঁ যোগ্য উত্তরাধিকারের হাতে উঠেছে ট্রফি ।
একটু পরেই ট্রফিটা হাতে তুলে নেবেন। কিন্তু তাকে ছোঁয়ার যেন আর তর সইছে না মেসির। এগিয়ে গেলেন। বেদির ওপর রাখা ট্রফিটা আলতো করে ধরে চুমু খেলেন। এরপর পরম মমতায় তার মাথায় (ট্রফির ওপর বলের মত চকচকে অংশটা) একটু হাত বুলালেন। যেন স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘আর কয়েক মিনিটই তো। এরপর তো তোমাকে নিয়েই উল্লাসে মেতে উঠবো।’ ট্রফিটাও যেন মেসির কথা শুনলো এবং শুনে আস্বস্ত হলো।
এরপর বিজয়ের পদক গলায় পরার পালা। সোনার পদক প্রতিটি কোচ এবং ফুটবলারের গলায় পরানো হলো। সবাই পোডিয়ামের সামনে গিয়ে বিজয় মঞ্চে সমবেত হচ্ছিল। তার আগে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছিল বিশ্বকাপ ট্রফিটিকে। ট্রফিটিও যেন কাঙ্খিত স্পর্শ পেয়ে খুব প্রসন্ন।
এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শিরোপা তুলে দেয়ার আগে মেসিকে পরিয়ে দেয়া হলো ঐতিহ্যবাহী কাতারি আলখেল্লা। কাতারের আমির নিজ হাতে মেসির গায়ে পরিয়ে দিলেন সোনালি পাড় এবং কালো রঙয়ে হালকা কাপড়ের আলখেল্লাটি। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো এগিয়ে এসে শিরোপাটা তুলে দিলেন বিজয়ী দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসির হাতে। ট্রফিটা হাতে নিয়ে একটা চুমু খেলেন মেসি।
এক্ষণে যেন একটু নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হলো। মেসি যেন ট্রফি নিয়ে সতীর্থদের দিকে এগিয়ে আসতেই চাইছেন না। ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফ্যান্তিনো আর কাতারের আমির অনেকটা জোর করেই যেন মেসিকে ঠেলে নিয়ে এলেন তার সতীর্থদের কাছে।
নাটকীয়তার তখনও বাকি। সতীর্থদের কাছকাছি চলে এলেন মেসি ট্রফিটা নিয়ে। এবার নতুন দৃশ্য। মেসি ট্রফিটা হাতে নিয়ে একটু নিচু হলেন। শরীরটা হালকা বাকিয়ে নাচের ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন সতীর্থদের মাঝে।
এরপর সেই চিরাচরিত দৃশ্য। বিজয়ী অধিনায়ক শিরোপাটায় একটু চুমু খেয়ে মাথার ওপর তুলে ধরে যে উল্লাসে মেতে ওঠেন, মেসিও সেটা করলেন। ডি মারিয়া, আলভারেজ, মার্টিনেজ, ফার্নান্দেজ থেকে শুরু করে সবাই- মেতে উঠলেন বিজয়ের উল্লাসে, বিজয়ের আনন্দে।
বিশ্বকাপ ট্রফিটারও যেন দীর্ঘদিনের একটা আক্ষেপ ঘুচলো। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের হাতে যেতে পেরে যেন ট্রফিটাও স্বস্তিবোধ করলো। যেন তার মাঝে বিশ্বসেরার যে গৌরবের প্রতীক লুকিয়ে আছে, তার যেন সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটলো মেসির হাতে উঠতে পেরে। বিশ্বসেরার ট্রফি তো বিশ্বসেরা ফুটবলারের হাতেই মানায়।
পেলে-ম্যারাডোনা কালজয়ী, শতাব্দীর সেরা ফুটবলার। মেসি যে এবার তাদেরও ছাড়িয়ে গেলেন। সোনালি ট্রফিটা হাতে তুলে নিয়ে মেসি যেমন নিজেকে পূর্ণ করলেন, তেমনি ট্রফিটাও যেন নিজেকে পূর্ণ করলো, গৌরবান্বিত করলো মেসির হাতে উঠতে পেরে।
২০১৪ মারাকানা স্টেডিয়ামের সেই দৃশ্যটা হয়তো সারা জীবনেও ভুলতে পারবেন মেসি। ফ্রান্সকে হারিয়ে আজ যে বিশ্বকাপ ট্রফিটা জিততে পারলেন, তাতেও কী সেই দুঃখ ভোলা যাবে? বিশ্বকাপের ট্রফিটা এত কাছে এসেও সেদিন ধরা দিল না। সোনালি ট্রফিটার পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছেন মেসি, গত ৮টি বছর এই ছবি কেবল আফসোসই বাড়িয়েছে।