সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢালে সুনামগঞ্জে গত চার দিন ধরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে পড়েছেন সুনামগঞ্জবাসী।
উজানের ঢালের পানিতে সুনামগঞ্জ শহরসহ ১২টি উপজেলা প্লাবিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি ৫ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে শহরের সরকারি, বেসরকারি প্রতিটি অফিসসহ অলিগলি, পাড়া মহল্লা, দোকানপাট, ফার্মেসি ও রেস্তোরাঁ। বিদ্যুৎ, গ্যাস এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই টানা তিনদিন ধরে।
এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে খাবারের জন্য হাহাকার। বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাবারের সন্ধানে ছোট নৌকা ও হেঁটেই বের হচ্ছেন অসহায় মানুষগুলো। অনেকে বাজারে কোনো খাবার না পেয়ে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে দ্বিগুণ দামে কলা-বিস্কিট কিনে রাস্তায় বসে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
এদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মানুষ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের উদ্ধার করতে সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনী ৩০টি রেসকিউ বোট নিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সুনামগঞ্জের ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যারা পানিবন্দি অবস্থায় আছেন তাদের উদ্ধার করে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছি। আমাদের সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩০টি রেসকিউ বোট নিয়ে সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজ চালাবে।
পানিবন্দি মানুষরা জানান, বাজারে প্রতিটি দোকান পানির নিচে। এরমধ্যে বাজারে কোনো খাবার নেই। ছেলে মেয়ের পেটের ক্ষুধা মেটাতে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালীপুর এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন জানান, দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি ছেলে-মেয়ে নিয়ে। এখন পানি পার হয়ে বাজারে এসেছি খাবার নেওয়ার জন্য, কিন্তু কোনো খাবার পাইনি। অবশেষে একটি কাঁঠাল নিয়ে যাচ্ছি ছেলে-মেয়ের জন্য।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালীপুর এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন জানান, অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে। কোনো খাবার নেই। তাই ১০ টাকা দামের বিস্কিট কিনে নিয়ে যাচ্ছি ছেলে মেয়ের জন্য।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, ঘরের ভেতরে পানি। ছেলে মেয়েকে নিয়ে পানির ওপরে মাঁচা বেঁধে আছি। খাবারের সন্ধানে আমি পানি ভেঙে সুনামগঞ্জে এসেছি, কিন্তু পাইনি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বন্যার্ত মানুষের পাশে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। রান্না করা খাবার বিতরণ করছি। যারা পানবন্দি তাদের উদ্ধারচেষ্টা অব্যাহত আছে।