ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান ও সিনিয়র মিলিটারি কমান্ডার অরুণ প্রকাশ সতর্ক করেছেন। বলেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থি হিন্দুদের গণহত্যার আহ্বানের বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ জন্য ভারত গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে। এ ইস্যুতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের নীরবতাকে তিনি অশুভ বলে মন্তব্য করেছেন। দ্য ওয়্যার’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তানি সংস্করণ এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
উল্লেখ্য, ১৭ থেকে ১৯ শে ডিসেম্বর হরিদ্বারে কট্টরপন্থি হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘সাফারি অভিযান’ বা জাতি নিধনের আহ্বান জানান। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অবশেষে বিষয়টি শুনানিতে নেয়ার কথা বলেছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা।
এ ইস্যুতে দ্য ওয়্যারকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন অরুণ প্রকাশ।
ওই সাক্ষাৎকারে অরুণ প্রকাশ বলেন, এই ইস্যুতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কারণ এই ধারা চলতে থাকলে পাল্টা ব্যবস্থাও আসবে। এর ফলে পরবর্তীতে অনিবার্যভাবে দেখা দেবে সংঘাত। এ সময় সঞ্চালক তার কাছে জানতে চান, তাহলে কি ভারত একটি গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে? জবাবে সাবেক অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ বলেন, অবশ্যই।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিনিধনের আহ্বানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে গত ৩১ ডিসেম্বর খোলা চিঠি লিখেছেন অরুণ প্রকাশ ও নৌবাহিনীর সাবেক তিনজন প্রধান ও বিমান বাহিনীর একজন সাবেক প্রধান। এসব চিঠির কোনো জবাব পেয়েছেন কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি। এমন উত্তর আশা করাও বৃথা।
এ সময় অরুণ প্রকাশ বলেন, আমাদের এই চিঠিতে ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক কোনো প্রধানও স্বাক্ষর করতে রাজি হননি। হতে পারে তারা হয়তো গণহত্যা বা জাতি নিধনের আহ্বানে একমত। অথবা এমন চিঠিতে স্বাক্ষর করলে পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে তারা ভীত।
অরুণ প্রকাশ বলেন, ভারতের সশস্ত্রবাহিনীগুলোতে সকল ধর্মের সৈন্যরাই কাজ করছে। এ ইস্যুতে একজন সৈনিকের মনে কী ধরনের প্রভাব ফেলে ধারণা করুন। এই ধরনের কথাবার্তা সশস্ত্র বাহিনীর কাছে গভীর উদ্বেগের বার্তা পাঠাবে বলে মনে করেন অরুণ।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে হরিদ্বারে তিনদিনব্যাপী ধর্ম সংসদে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আহ্বান জানায় কট্টরপন্থি হিন্দুরা। রুদ্ধদ্বার সে বৈঠকে বলা হয়, ২০২৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলিম। যেভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে এবং আমাদের জনসংখ্যা কমছে, সাত-আট বছরের মধ্যে কেবল মুসলমানদের রাস্তায় দেখা যাবে।
আরেক বক্তা বলেন, মুসলমানদের হত্যাই একমাত্র বিকল্প। তিনি এই কাজটি অর্জনের জন্য সৈন্য নিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনি যদি তাদের শেষ করতে চান, তাহলে তাদের হত্যা করুন। আমাদের ১০০ জন সৈন্য দরকার যারা তাদের মধ্যে ২০ লাখকে পরাজিত করতে পারে।
মুসলমানদের নিধন করতে মিয়ানমারের মতো পন্থা অবলম্বন করা উচিত দাবি করে হিন্দু রক্ষা সেনার নেতা প্রবোধানন্দ গিরি বলেন, ভারতের প্রতিটি হিন্দুকে দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা উচিত। মিয়ানমারের মতো, আমাদের পুলিশ, আমাদের রাজনীতিবিদ, আমাদের সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি হিন্দুকে অস্ত্র তুলে নিতে হবে এবং একটি নির্মূল সাফাই অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অন্য কোনো বিকল্প অবশিষ্ট নেই।
তাদের এ ধরনের আলোচনার ভিডিও প্রকাশ্যে চলে এলে শুধু মুসলমানরা নন, ভারতের সুশীল সমাজ, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনও এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এমনকি বিষয়টি শুনানিতে নেয়ার কথা বলেছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা।