কক্সবাজার প্রতিনিধি: রোহিঙ্গা ক্যাম্প জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। সর্বশেষ ৯৪৭ রোহিঙ্গার ডেঙ্গু সনাক্ত হওয়ার খবরে সচেতন মহলে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
আক্রান্তের মধ্যে গেলো এক মাসে শিশুসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা ও মশা থেকে নিজেদের রক্ষা না করায় ক্যাম্পে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়দের সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণার পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং এনজিও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়সহ জেলায় ১০৮৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রোহিঙ্গা ছাড়াও সনাক্ত হওয়া স্থানীয় ১৪২ রোগীর মধ্যে উখিয়ায় ৬০, টেকনাফে ৬৭, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৬, মহেশখালীতে ১, চকরিয়া-১, রামু-৩ এবং অন্যান্য উপজেলায় ৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৫০১ জন সুস্থ হয়ে ফিরলেও মৃতুবরণ করেছেন শিশুসহ তিন রোহিঙ্গা।
গত দু’মাসে এর প্রকোপ বেড়েছে। তারা হলেন, ছুফিয়া খাতুন (৫০), ছয় বছরের শিশু নুরুল হক এবং তাহমিদা (২৬)। তিনজনই ১৬ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে মারা যান।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্র জানায়, রোববার (১২ ডিসেম্বর) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন ১১ জন। তাদের সিংহভাগই রোহিঙ্গা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গা কবির আহম্মদের স্ত্রী বেদু (৪৫) বলেন, জ্বর আর ব্যথা নিয়ে আইওএম হাসপাতাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১২ দিন ধরে সেবা নিচ্ছি। কিছুটা পরিবর্তন হলেও কবে সুস্থ হবো জানি না।
ক্যাম্প-২ এর বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের মেয়ে তসলিমা (১৯) বলেন, জ্বর আসার পর প্রথমে কুতুপালংয়ের জিকা হাসপাতালে গেলে তারা আইওএম হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে একদিন সেবা নেওয়ার পর কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। শরীর আগের চেয়ে একটু ভালো।
ক্যাম্পে কর্মরত ‘জাগরণ নারী ফাউন্ডেশনের’ কর্মকর্তা স্মৃতি কণা তালুকদার বলেন, চাকরিরত অবস্থায় গায়ে জ্বর এলে আমি হাসপাতালে আসি। টেস্ট করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, স্বল্প জমিতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের বসবাস করার ফলে দ্রুত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। যদি এখনই প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে এ রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের অজ্ঞতা আর মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বল ব্যবস্থার কারণেও জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত চাকরিজীবীদের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝেও ক্রমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রনজয় বড়ুয়া রাজন জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সন্দেহজনক জ্বরের রোগীকে স্ক্রিনিংয়ের (রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া) আওতায় আনতে হবে। আবশ্যিকভাবে ডেঙ্গু বিস্তারকারী বাহক (এডিস মশা) নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া দরকার।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, স্থানীয়রা সচেতন না হলে শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচেষ্টায় সুফল আসবে না। তাই বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে হবে।
ঢাকা থেকে এ রোগ কক্সবাজারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করে কক্সবাজার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের সচেতন করার পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, দিনেই এডিশ মশা কামড়ায়। তাই দিনে মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিবারেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।