স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি, হয় তেলের দাম কমাতে হবে, অন্যথায় পরিবহনে ভাড়া সমন্বয় করতে হবে।
ধর্মঘট শুরুর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পূর্বঘোষণা ছাড়াই দেওয়া ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না গাড়ি, পৌঁছানো যাচ্ছে না গন্তব্যে।
পরিবহন বন্ধ থাকায় করোনা মহামারি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো দেশের রপ্তানিখাত রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। শিল্প মালিকরা বলছেন, এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে বড় সংকট দেখা দিতে পারে দেশের পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখি সব খাতে।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি, কার্গো এবং কাভার্ডভ্যান।
ট্রাক, কার্গোভ্যান ও কাভার্ডভ্যান বন্ধ থাকায় পণ্য ডেলিভারিতে তৈরি হচ্ছে বড় বাধা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পোশাক শিল্পে। সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারলে ক্রেতারাও খুঁজবে বিকল্প পথ। এসব দিক বিবেচনায় অনতিবিলম্বে সরকারকে কাভার্ডভ্যান ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে বিষয়টির দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক শিল্পের দুই শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক সমন্বয় পরিষদ নেতারা বলছেন, হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। ভাড়া বাড়ানো না হলে তারা রাস্তায় পরিবহন নামাবেন না।
তাদের মতে, মালিক সমিতির সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই সরকার বঙ্গবন্ধু সেতু ও মোক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ থেকে হঠাৎ করে ৩০০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর একদিন যেতে না যেতে আবার বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। এসব সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা বলছেন, প্রায় দেড় বছর পর করোনার প্রভাব কাটিয়ে মাত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে পোশাকশিল্প। এখন কাজের অর্ডার চলছে ব্যাপকহারে, বায়ার আসছেন। অর্ডারের পণ্য যথাসময়ে সরবরাহও হচ্ছে। এ অবস্থায় হঠাৎ ট্রাক, কার্গোভ্যান এবং কাভার্ডভ্যান বন্ধ থাকলে পণ্য ডেলিভারিতে বড় বাধা তৈরি হবে।
সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হবেন। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে পোশাকশিল্প। পাশাপাশি পরিবহন বন্ধ থাকলে দূরের শ্রমিক কারখানায় আনা-নেওয়াতেও বাধা তৈরি হবে। তারা সময়মত কাজে যোগদান করতে পারবে না।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে মাত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে পোশাক খাত। এখন ক্রেতারা আমাদের দেশে আসছেন, কাজের অর্ডার হচ্ছে, সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোনো ধরনের ধর্মঘট রপ্তানি খাতকে বাধাগ্রস্ত করবে। পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য খাত যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয় এজন্য ট্রাক, কার্গোভ্যান এবং কাভার্ডভ্যান মালিকদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আলোচনা করে শিগগিরই সমস্যার সমাধান করা উচিত।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রোববার (৭ নভেম্বর) বিআরটিএ’র ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যম জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে।
এর আগে গত বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। যা কার্যকর হয় ওইদিন রাত ১২টা থেকে। এরপরই কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়া শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। গণপরিবহন না থাকায় বিকল্প মাধ্যমে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে। দিনের শুরুতেই অফিস-কর্মস্থলমুখী মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে।