ক্রীড়া ডেস্ক: সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে নামা। অথচ সুপার টুয়েলভ পর্বে তিন ম্যাচ খেলেও নেই কোনো জয়। এর মধ্যে দুটিতে আবার জেতা ম্যাচ হেরে গেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যাত্রাও তাই অন্যান্যাবারের মতো, হতাশায় মোড়ানো। পাল্লা ভারী ব্যর্থতার।
খাতা-কলমের হিসাবে এখনো সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও, খোদ বাংলাদেশ আর আশা দেখছে না। টাইগারদের জন্য শেষ দুটি ম্যাচ তাই নিয়মরক্ষার, মান বাঁচানোর। বাংলাদেশ তাই এই দুই ম্যাচ ভালো খেলতে চায়। চায়, ইতিবাচক কিছু নিয়ে দেশে ফিরতে।
আজ বিকাল ৪টায় আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যাদের বিপক্ষে টি-ফরম্যাটে কোনো জয়ই নেই টাইগারদের। দল হিসেবে খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও, এবারের দেখায় ইতিহাসটা বদলাতে চায় বাংলাদেশ।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো যেমন বলছিলেন, ‘ছেলেরা মুখিয়ে আছে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে। আমরা শ্রীলঙ্কার সাথে বেশ ভাল অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু এক-দুটি ভুলে ম্যাচ হাতছাড়া করে ফেলেছি। ছেলেরা জানে দেশে প্রত্যাশা প্রচুর, মিডিয়ার উৎসাহও অনেক বেশি। তারা জানে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তারা তাদের দেশের জন্য খেলবে এবং শতভাগ উজাড় করে দেয়ার চেষ্টা করবে।’
বাংলাদেশ শিবিরে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার শিবিরে চিত্রটা উল্টো। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচ জিতে প্রোটিয়ারা ফিরেছে সেমিফাইনালে নাম লেখানোর দৌড়ে। আজ বাংলাদেশকে হারালে অনেকখানি এগিয়ে যাবে গ্রুপ-‘১’ এর পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থাকা টেম্বা বাভুমার দল।
মানসিকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে অবশ্য হালকাভাবে নিতে নারাজ দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রোটিয়া অলরাউন্ডার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস বলেছেন, ‘আমরা জানি, আমাদের ভালো করে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং ভালো করার প্রচণ্ড ইচ্ছা নিয়ে পরের ম্যাচে মাঠে নামতে হবে। বাংলাদেশ ভালো একটি দল। একটি শক্তিশালী দল, এই কন্ডিশনে খুব ভয়ংকর দল। তাদের হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
দক্ষিণ আফ্রিকা হালকা করে না নিলেও, টালমাটাল বাংলাদেশ শিবির। শুরু থেকেই বিতর্ককে সঙ্গী করা চলা দল আরও বিপদে পড়েছে দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে সাকিবের বিশ্বকাপ শেষ। বাংলাদেশের চিন্তার কারণ আছে আরও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে চোটে পড়া নুরুল হাসান সোহানও খেলতে পারছেন না দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
নুরুল হাসান সোহানের পরিবর্তে বিশ্বকাপে আজ অভিষেক হবে শামিম হোসেন পাটোয়ারীর। বড় শট খেলার সক্ষমতা থাকলেও এনরিখ নর্টজে, কাগিসো রাবাদাদের সামনে হঠাৎ মাঠে নেমে শামিম দারুণ কিছু করে দেখাতে পারবে কি-না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশ্নটা উঠছে বাকিদের ব্যর্থতার কারণেই।
ওপেনার নাঈম শেখ এবারের টুর্নামেন্টে দুটি ফিফটি করলেও, অধারাবাহিক। নাঈম অধারাবাহিক হলে, লিটন দাস-সৌম্য সরকার তার চেয়েও একধাপ এগিয়ে। তাদের ব্যাটে সহসাই মেলে না রানের দেখা। যার ওপর অনেক আশা বাংলাদেশি সমর্থকদের, সেই মুশফিকুর রহিম তো প্রতি ম্যাচেই দিচ্ছেন আত্মাহুতি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আফিফ হোসেন ধ্রুবও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। পারছেন না, ইনিংসের দারুণ সমাপ্তি টানতে।
মোস্তাফিজুর রহমান বাদে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট নিয়ে অভিযোগ কম। তবে ফিল্ডিংয়ে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বাজে দল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে ৯টি ক্যাচ ফিল্ডারদের হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে। তাতে মারাত্মক ভুগেছে দল। শুধু ম্যাচ হারের বৃত্ত থেকে নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আজ তাই লড়তে হবে এসব ব্যর্থতাকে ঢাকতেও।
জয়ের সঙ্গে ‘আড়ি পাতা’ বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ইতিহাস বদলাতে পারবে কি-না, সময়ই তা বলে দিবে। তবে ম্যাচের আগে টাইগার সমর্থকদের একটাই চাওয়া, খেলোয়াড়রা এবার অন্তত মাঠে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে নিজেদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দিক।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
নাইম শেখ, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন, শামিম হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাব্য একাদশ
কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিক্স, রাশি ফন ডার ডুসেন, টেম্বা বাভুমা, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলারম ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, কেশব মহারাজ, এনরিখ নর্তজে, তাব্রিজ শামসি