মুন্সিগন্জ প্রতিনিধি: সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে ১২ বছর আগে ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুদফা দরপত্রে সেন্টারের ভবন নির্মাণে মোট সময় লাগে ৯ বছর। এরপর তিন বছর ধরে পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ হলেও সুফল পাচ্ছেন না সেবাগ্রহীতারা। উল্টো রক্ষণাবেক্ষণ আর পরিচর্যার অভাবে কার্যক্রমহীন ভবনটি এরই মধ্যে স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ভূতের বাড়ি নামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘরে নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টার ভবন।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে প্রথম দফা দরপত্র আহ্বান করা হলে ভবন নির্মাণে কাজ পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুস সাত্তার। ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে ১২ মাস মেয়াদে ভবন নির্মাণের কথা থাকলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে তা বাতিল হয় ২০১৫ সালে। একই বছর দুদফা দরপত্রে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে অপর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করে। শেষ করে ২০১৮ সালে। পূর্ণাঙ্গ ভবন নির্মাণ হলেও উদ্বোধন হয়নি এখনো।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা সেবা দূরে থাক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটির অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে উঠে গেছে আস্তরণ, মেঝেতে জমেছে শেওলা ও আগাছা আর লোহার কাঠামোগুলোতে ধরেছে মরিচা। দেখে পরিত্যক্ত ভবন মনে হয়। মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামও ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে এখানে ওখানে। নষ্ট হতে থাকা অবকাঠামো, বন্য গাছ লতায় ভরে ওঠা ভবনটির অভ্যন্তরে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। এসব সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে ভবনের কার্যক্রম চালু করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের দাবি স্থানীয়দের।
লায়লা বেগম স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, কতো দুর্ঘটনা হয়, কারও হাত ভাঙে, কারও পা ভাঙে। ঢাকা নিয়া যাইতে হয়, পঙ্গু হাসপাতালে যাইতে যাইতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। মারা যায়। যদি এই হাসপাতালটা চালু হতো তাহলে তো সবাই চিকিৎসা পাইতো।
সাইদুর ভূঁইয়া বলেন, কিসের হাসপাতাল। এমনি পড়ে আছে। কেউ আসেও না যায়ও না। দেখলে মনে হয় ভূতের বাড়ি।
শ্রীনগর প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম ইসলাম বলেন, সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের পর যদি ভবন কাজেই না আসে তাহলে সব টাকা তো জলে ফেলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টিতে নজর দেওয়া।
এ বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রনব কুমার ঘোষ বলে , সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকসহ আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি যেন দ্রুত ট্রমা সেন্টারটি চালু করার। আমাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগির এটি উদ্বোধন হবে এবং মানুষ এর সেবা পাবে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে নতুন সিভিল সার্জন আসা মাত্রই তাকে অবহিত করা হবে। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।