ঢাকা ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক হাসপাতালে রোগীর ৪ বেলা খাবারে বরাদ্দ ১০৬ টাকা

 পাবনা প্রতিনিধি:  হোটেলে একবেলা পেটপুরে খেতে ১০৬ টাকায় কিছুই হয় না। তবে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ১০৬ টাকায় একেক জন রোগীকে চারবেলা খাবার দেওয়া হয়। সরকারি বরাদ্দ না বাড়ায় রোগীদের অল্প টাকায় মানসম্মত খাবার দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

শনিবার (৯ অক্টোবর) হাসপাতালে ঢুকতে প্রধান ফটক পেরিয়ে অনেকখানি পথ পেরুতে হলো। বিশাল মাঠ কিন্তু অরক্ষিত। গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ। পুরোনো ও ভাঙাচোরা ভবনগুলোতে স্থানীয় কেউ কেউ গরু-ছাগল পালন করেন। ভাঙাচোরা ভবনগুলো আশির দশকে করা হয়েছিল। তখন পাবনা মেডিকেল কলেজ মানসিক হাসপাতাল চত্বরে ছিল।

কিছুদিন চলার পর সরকার পাবনা মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকেই ভবনগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। দুবৃর্ত্তরা ভবনের জিনিসপত্র, দরজা-জানালা ও টিন খুলে নিয়ে যান। এখন এসব ভবনগুলো ভেঙে সেখানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভেতরে রাস্তার দু’পাশে পরিত্যক্ত ভবন, বহির্বিভাগ পেরিয়ে ঈদগাহ, খেলার মাঠের একপাশে হাসপাতালের প্রধান ভবন। এটিই দেশে মানসিক চিকিৎসার সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। সেসব আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভেতরে ঢুকতেই একপাশে প্রশাসনিক বিভাগ অন্যপাশে পুরুষ ওয়ার্ড। পাশের ভবনে নারী ওয়ার্ড রয়েছে।

পুরুষ ওয়ার্ডে যারা চিকিৎসায় বেশ সুস্থতার দিকে তাদের এক ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখানে তারা বেশ দল বেধে বন্ধুর মতোই থাকেন। সকালের নাস্তা সেরে যাদের ইচ্ছা বিনোদনের জন্য নির্ধারিত অডিটোরিয়ামে যান।

হাসপাতালের এক সিনেমা অপারেটর জানান, রোগীদের মানসিক বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।

 সেবাদানকারীরা জানান, দুপুর ১টায় তাদের জন্য ঘণ্টা বাজে। বড় ছয়টি পাত্রে মানসিক রোগীদের জন্য রান্না করেন বাবুর্চিরা। খাবার নিয়ে যেতেও অপেক্ষারত সুস্থ রোগীরা সহায়তা করেন। স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসার জন্যই মূলত তাদের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। তারা খাবার ঘরে ঢোকেন বেশ শৃঙ্খলার সঙ্গে। খাওয়ার পর বেশিরভাগ রোগী তাদের প্লেটটিও সুন্দর করে পরিষ্কার করে রাখেন।

খাবারের বিষয়ে কথা হলে হাসপাতালের সেবা কাজের সঙ্গে নিয়োজিত কর্মচারীরা জানান, রোগীদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা একে অপরের খোঁজখবর নেন। ভালো-মন্দ দেখভাল করেন। খাবারের পর তারা বিশ্রাম নেন। রসিকতা ও খোসগল্পেও মেতে ওঠেন তারা।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী আহসান হাবিব বলেন, মোট চারবেলা খাবার দেওয়া হয় রোগীদের। সকাল আটটায় রুটি, সুজি ও ডিম। দুপুরে মাছ/মাংস, ডাল, সবজি ও ভাত। রাতের খাবারটা সন্ধ্যার আগেই দেওয়া হয়। ঠিক দুপুরের মতো। রাত নয়টার দিকে আবার কলা ও বিস্কুট খেয়ে রোগীরা ঘুমাতে যান।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক ছাড়াও এখানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও খুবই প্রয়োজন। রোগীদের গোসল, খাওয়া দাওয়া, পায়খানা প্রসাব পরিষ্কার করার কাজে পর্যাপ্ত কর্মচারী-সুইপার নেই।

ডা. আবুল বাশার জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালে জনপ্রতি রোগীর খাদ্য বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকা। এই টাকার ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে দাঁড়ায় ১০৬ টাকা ২৫ পয়সায়। তার মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারের লাভ ইত্যাদি। এসব ব্যয় বাদে যে টাকা থাকে তা দিয়ে রোগীদের তিন বেলা খাবার এবং বিকেলে নাস্তা দেওয়া হয়।

তিনি জানান, স্বল্প বাজেটের মধ্যেও রোগীদের যতদূর সম্ভব ভালো খাবার দেওয়া হয়। খাবার পরিবেশনও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা হয়। তবে বাজারদর অনুযায়ী এ অল্প টাকায় মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়া অনেক কঠিন বলে তিনি স্বীকার করেন।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

মানসিক হাসপাতালে রোগীর ৪ বেলা খাবারে বরাদ্দ ১০৬ টাকা

আপডেট সময় ১২:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অক্টোবর ২০২১

 পাবনা প্রতিনিধি:  হোটেলে একবেলা পেটপুরে খেতে ১০৬ টাকায় কিছুই হয় না। তবে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ১০৬ টাকায় একেক জন রোগীকে চারবেলা খাবার দেওয়া হয়। সরকারি বরাদ্দ না বাড়ায় রোগীদের অল্প টাকায় মানসম্মত খাবার দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

শনিবার (৯ অক্টোবর) হাসপাতালে ঢুকতে প্রধান ফটক পেরিয়ে অনেকখানি পথ পেরুতে হলো। বিশাল মাঠ কিন্তু অরক্ষিত। গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ। পুরোনো ও ভাঙাচোরা ভবনগুলোতে স্থানীয় কেউ কেউ গরু-ছাগল পালন করেন। ভাঙাচোরা ভবনগুলো আশির দশকে করা হয়েছিল। তখন পাবনা মেডিকেল কলেজ মানসিক হাসপাতাল চত্বরে ছিল।

কিছুদিন চলার পর সরকার পাবনা মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকেই ভবনগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। দুবৃর্ত্তরা ভবনের জিনিসপত্র, দরজা-জানালা ও টিন খুলে নিয়ে যান। এখন এসব ভবনগুলো ভেঙে সেখানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভেতরে রাস্তার দু’পাশে পরিত্যক্ত ভবন, বহির্বিভাগ পেরিয়ে ঈদগাহ, খেলার মাঠের একপাশে হাসপাতালের প্রধান ভবন। এটিই দেশে মানসিক চিকিৎসার সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। সেসব আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভেতরে ঢুকতেই একপাশে প্রশাসনিক বিভাগ অন্যপাশে পুরুষ ওয়ার্ড। পাশের ভবনে নারী ওয়ার্ড রয়েছে।

পুরুষ ওয়ার্ডে যারা চিকিৎসায় বেশ সুস্থতার দিকে তাদের এক ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখানে তারা বেশ দল বেধে বন্ধুর মতোই থাকেন। সকালের নাস্তা সেরে যাদের ইচ্ছা বিনোদনের জন্য নির্ধারিত অডিটোরিয়ামে যান।

হাসপাতালের এক সিনেমা অপারেটর জানান, রোগীদের মানসিক বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।

 সেবাদানকারীরা জানান, দুপুর ১টায় তাদের জন্য ঘণ্টা বাজে। বড় ছয়টি পাত্রে মানসিক রোগীদের জন্য রান্না করেন বাবুর্চিরা। খাবার নিয়ে যেতেও অপেক্ষারত সুস্থ রোগীরা সহায়তা করেন। স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসার জন্যই মূলত তাদের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। তারা খাবার ঘরে ঢোকেন বেশ শৃঙ্খলার সঙ্গে। খাওয়ার পর বেশিরভাগ রোগী তাদের প্লেটটিও সুন্দর করে পরিষ্কার করে রাখেন।

খাবারের বিষয়ে কথা হলে হাসপাতালের সেবা কাজের সঙ্গে নিয়োজিত কর্মচারীরা জানান, রোগীদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা একে অপরের খোঁজখবর নেন। ভালো-মন্দ দেখভাল করেন। খাবারের পর তারা বিশ্রাম নেন। রসিকতা ও খোসগল্পেও মেতে ওঠেন তারা।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী আহসান হাবিব বলেন, মোট চারবেলা খাবার দেওয়া হয় রোগীদের। সকাল আটটায় রুটি, সুজি ও ডিম। দুপুরে মাছ/মাংস, ডাল, সবজি ও ভাত। রাতের খাবারটা সন্ধ্যার আগেই দেওয়া হয়। ঠিক দুপুরের মতো। রাত নয়টার দিকে আবার কলা ও বিস্কুট খেয়ে রোগীরা ঘুমাতে যান।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক ছাড়াও এখানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও খুবই প্রয়োজন। রোগীদের গোসল, খাওয়া দাওয়া, পায়খানা প্রসাব পরিষ্কার করার কাজে পর্যাপ্ত কর্মচারী-সুইপার নেই।

ডা. আবুল বাশার জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালে জনপ্রতি রোগীর খাদ্য বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকা। এই টাকার ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে দাঁড়ায় ১০৬ টাকা ২৫ পয়সায়। তার মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারের লাভ ইত্যাদি। এসব ব্যয় বাদে যে টাকা থাকে তা দিয়ে রোগীদের তিন বেলা খাবার এবং বিকেলে নাস্তা দেওয়া হয়।

তিনি জানান, স্বল্প বাজেটের মধ্যেও রোগীদের যতদূর সম্ভব ভালো খাবার দেওয়া হয়। খাবার পরিবেশনও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা হয়। তবে বাজারদর অনুযায়ী এ অল্প টাকায় মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়া অনেক কঠিন বলে তিনি স্বীকার করেন।