ঢাকা ১০:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতারাতি সর্বস্ব হারিয়ে রহস্যজনকভাবে গৃহহীন চীনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী

attends a gala dinner hosted by Jaeger-LeCoultre celebrating The Rendez-Vous Collection at Arsenale during the 73rd Venice Film Festival on September 6, 2016 in Venice, Italy.

 বিনোদন ডেক্স : ঝাও ওয়েই। ভিকি ঝাও নামেও পরিচিত তিনি। চীনের প্রথম সারির ধনকুবেরদের সঙ্গে একই সারিতে উচ্চারিত হত এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর নাম। এখন নিজের জন্মভূমিতেই অস্তিত্বহীন হয়ে হয়ে গিয়েছেন ঝাও। রাতারাতি চীনে কাটানো তার ৪৫টি বছর মুছে গেছে।

চীনের নেটমাধ্যমে তার কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। চীনে ইন্টারনেটে হাজার খুঁজলেও তার সম্পর্কে কোনও তথ্য মিলবে না। এমনকি রাস্তায় রাস্তায় থাকা তার ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপনও রাতারাতি উধাও।

কী কারণে এভাবে রাতারাতি গায়েব করে দেওয়া হল ঝাওকে? কেনই বা গৃহহীন হতে হল তাকে? প্রশ্ন অনেকের। কিন্তু এসব প্রশ্নের কোনও ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

ঝাওয়ের জন্ম আনহুইয়ের উহুতে। বাবা ইঞ্জিনিয়ার। মা ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট থেকে নিজের পরিচিত বৃত্তের মধ্যে থেকেই বড় হয়েছেন ঝাও। উহুর স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন।

১৯৯৩ সালে স্কুলে পড়ার সময় পরিচালক হুয়াং শুকিন ‘এ সোল হন্টেড বাই পেন্টিং’ ছবির জন্য তাকে প্রস্তাব দেন। সেই থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় ঝাওয়ের। স্নাতক হওয়ার পর তাই স্কুলের নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে অভিনেত্রী হতে চলে যান।

সাংহাইয়ে একটি অভিনয় শেখানোর স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৯৭ সালে প্রযোজক শিয়াং ইয়াও-এর টিভি সিরিজ ‘মাই ফেয়ার প্রিন্সেস’-এ অভিনয়ের বদৌলতেই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে চীনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। চীনের প্রথম সারির ধনকুবেরও তিনি।

একাধিক ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি পরিচালনা, প্রযোজনার কাজও শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি একজন পপ গায়িকা এবং ব্যবসায়ীও। কিন্তু ২০০১ সাল থেকেই নানা বিতর্কে জড়াতে শুরু করে তার নাম। সূত্রপাত একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভার ছবি দিয়ে।

ওই বছর ওই ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভার ছবিতে প্রকাশিত তার পোশাক নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সেনা পতাকার মতো দেখতে ছিল ওই পোশাক। প্রথম একটি সংবাদপত্র তার সমালোচনা করে খবর প্রকাশ করে। পরে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও একই পথে হাঁটতে শুরু করে, যা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরে সংবাদপত্রে খোলা চিঠি লিখে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন ঝাও। টিভিতে সশরীরে হাজির হয়েও ক্ষমা চান।

২০০৪ সালে আরেক বিতর্ক দানা বাঁধে তাকে ঘিরে। তার ব্যবসার সঙ্গী ঝোও শুই তার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনেন। বেইজিংয়ে তাদের যৌথ পানশালা ছিল। এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষ পুরোপুরি ঝাওয়ের বিপক্ষে চলে যায়। ঝাওকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান উঠতে শুরু করে দেশজুড়ে। পরে যদিও ঝোও শুইয়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাননি ঝাও

২০১৬ সালে তার পরিচালনার একটি ছবি নিয়েও ব্যাপক হইচই পড়ে যায় চীনজুড়ে। ওই ছবি নিয়েও সমালোচিত হতে হয়েছিল তাকে। দেশদ্রোহী তকমা জুড়ে দেওয়া হয় তার নামের সঙ্গে। কেউ কেউ আবার তাকে আমেরিকার গুপ্তচর বলেও কটাক্ষ করেন। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে হাত মেলানোর একটি ছবি ভাইরাল করে দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ঝাও এবং তার স্বামীকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়। জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা ঝাও সারাদেশে ততদিনে ক্রমে সমস্ত খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছিলেন। অনুরাগীর সংখ্যাও প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছিল তার। কিন্তু তখনও অনেক চমক বাকি ছিল ঝাওয়ের জীবনে।

এর দু’বছর পর রাতারাতি যেন সব হারিয়ে ফেলেন ঝাও। ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট ঝাওয়ের অভিনীত সমস্ত ছবি এবং টেলিভিশন সিরিজ গায়েব হয়ে যায় ইন্টারনেট থেকে। তার অনুগামীদের তৈরি করা নেটমাধ্যমের সমস্ত পাতা মুছে ফেলা হয়। তার ওয়েইবো (চীনের অন্যতম জনপ্রিয় নেটমাধ্যম) অ্যাকাউন্টও মুছে যায়।

কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তার কোনও ব্যাখ্যা মেলে না। ঝাও-ও কখনও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে জানা যায় শুধু নেটমাধ্যম থেকেই নয়, চীন থেকেই তার অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। এমনকি গৃহহীনও হতে হয়েছে তাকে।

এই ঘটনার কিছু দিন পর ঝাও এবং তার স্বামীকে ফ্রান্সের বিমানবন্দরে দেখা গেছে বলে দাবি করে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ফ্রান্সে নাকি তাদের একটি খামারবাড়ি রয়েছে। সেখানেই থাকছেন তারা। সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালগ্লোবাল টাইমসব্লুমবার্গ

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

রাতারাতি সর্বস্ব হারিয়ে রহস্যজনকভাবে গৃহহীন চীনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী

আপডেট সময় ০১:২১:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

 বিনোদন ডেক্স : ঝাও ওয়েই। ভিকি ঝাও নামেও পরিচিত তিনি। চীনের প্রথম সারির ধনকুবেরদের সঙ্গে একই সারিতে উচ্চারিত হত এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর নাম। এখন নিজের জন্মভূমিতেই অস্তিত্বহীন হয়ে হয়ে গিয়েছেন ঝাও। রাতারাতি চীনে কাটানো তার ৪৫টি বছর মুছে গেছে।

চীনের নেটমাধ্যমে তার কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। চীনে ইন্টারনেটে হাজার খুঁজলেও তার সম্পর্কে কোনও তথ্য মিলবে না। এমনকি রাস্তায় রাস্তায় থাকা তার ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপনও রাতারাতি উধাও।

কী কারণে এভাবে রাতারাতি গায়েব করে দেওয়া হল ঝাওকে? কেনই বা গৃহহীন হতে হল তাকে? প্রশ্ন অনেকের। কিন্তু এসব প্রশ্নের কোনও ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

ঝাওয়ের জন্ম আনহুইয়ের উহুতে। বাবা ইঞ্জিনিয়ার। মা ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট থেকে নিজের পরিচিত বৃত্তের মধ্যে থেকেই বড় হয়েছেন ঝাও। উহুর স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন।

১৯৯৩ সালে স্কুলে পড়ার সময় পরিচালক হুয়াং শুকিন ‘এ সোল হন্টেড বাই পেন্টিং’ ছবির জন্য তাকে প্রস্তাব দেন। সেই থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় ঝাওয়ের। স্নাতক হওয়ার পর তাই স্কুলের নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে অভিনেত্রী হতে চলে যান।

সাংহাইয়ে একটি অভিনয় শেখানোর স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৯৭ সালে প্রযোজক শিয়াং ইয়াও-এর টিভি সিরিজ ‘মাই ফেয়ার প্রিন্সেস’-এ অভিনয়ের বদৌলতেই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে চীনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। চীনের প্রথম সারির ধনকুবেরও তিনি।

একাধিক ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি পরিচালনা, প্রযোজনার কাজও শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি একজন পপ গায়িকা এবং ব্যবসায়ীও। কিন্তু ২০০১ সাল থেকেই নানা বিতর্কে জড়াতে শুরু করে তার নাম। সূত্রপাত একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভার ছবি দিয়ে।

ওই বছর ওই ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভার ছবিতে প্রকাশিত তার পোশাক নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সেনা পতাকার মতো দেখতে ছিল ওই পোশাক। প্রথম একটি সংবাদপত্র তার সমালোচনা করে খবর প্রকাশ করে। পরে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও একই পথে হাঁটতে শুরু করে, যা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরে সংবাদপত্রে খোলা চিঠি লিখে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন ঝাও। টিভিতে সশরীরে হাজির হয়েও ক্ষমা চান।

২০০৪ সালে আরেক বিতর্ক দানা বাঁধে তাকে ঘিরে। তার ব্যবসার সঙ্গী ঝোও শুই তার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনেন। বেইজিংয়ে তাদের যৌথ পানশালা ছিল। এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষ পুরোপুরি ঝাওয়ের বিপক্ষে চলে যায়। ঝাওকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান উঠতে শুরু করে দেশজুড়ে। পরে যদিও ঝোও শুইয়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাননি ঝাও

২০১৬ সালে তার পরিচালনার একটি ছবি নিয়েও ব্যাপক হইচই পড়ে যায় চীনজুড়ে। ওই ছবি নিয়েও সমালোচিত হতে হয়েছিল তাকে। দেশদ্রোহী তকমা জুড়ে দেওয়া হয় তার নামের সঙ্গে। কেউ কেউ আবার তাকে আমেরিকার গুপ্তচর বলেও কটাক্ষ করেন। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে হাত মেলানোর একটি ছবি ভাইরাল করে দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ঝাও এবং তার স্বামীকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়। জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা ঝাও সারাদেশে ততদিনে ক্রমে সমস্ত খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছিলেন। অনুরাগীর সংখ্যাও প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছিল তার। কিন্তু তখনও অনেক চমক বাকি ছিল ঝাওয়ের জীবনে।

এর দু’বছর পর রাতারাতি যেন সব হারিয়ে ফেলেন ঝাও। ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট ঝাওয়ের অভিনীত সমস্ত ছবি এবং টেলিভিশন সিরিজ গায়েব হয়ে যায় ইন্টারনেট থেকে। তার অনুগামীদের তৈরি করা নেটমাধ্যমের সমস্ত পাতা মুছে ফেলা হয়। তার ওয়েইবো (চীনের অন্যতম জনপ্রিয় নেটমাধ্যম) অ্যাকাউন্টও মুছে যায়।

কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তার কোনও ব্যাখ্যা মেলে না। ঝাও-ও কখনও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে জানা যায় শুধু নেটমাধ্যম থেকেই নয়, চীন থেকেই তার অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। এমনকি গৃহহীনও হতে হয়েছে তাকে।

এই ঘটনার কিছু দিন পর ঝাও এবং তার স্বামীকে ফ্রান্সের বিমানবন্দরে দেখা গেছে বলে দাবি করে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ফ্রান্সে নাকি তাদের একটি খামারবাড়ি রয়েছে। সেখানেই থাকছেন তারা। সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালগ্লোবাল টাইমসব্লুমবার্গ