হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার হৈবতপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।
শিক্ষার অভাবে বিপথগামী হচ্ছে শিশু-কিশোর ও যুবসমাজ। প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের নিকট এ বিষয়ে আবেদন করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের হৈবতপুর, লস্করপুরসহ আশপাশের দুই/তিনটি গ্রামে গ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে শিশু রয়েছে প্রায় চার শতাধিক। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এসব গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হয়নি।
স্কুল স্থাপনের জন্য ওই এলাকার বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধিসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে বার বার ধরনা দিয়েছেন, আকুতি জানিয়েছেন। একাধিকবার করেছেন আবেদনও। কিন্তু বারবার শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
গ্রামগুলোর চার শতাধিক শিশুকে দূরবর্তী অন্য গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করতে হয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে অকালেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়ার এ হার দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে।
এলাকাবাসী জানান, গ্রামবাসী বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের কাছেই ধরনা দিয়েছেন। তবুও একটি স্কুল স্থাপনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। কেউই কোনো উদ্যোগ নেননি।
স্কুল না থাকার কারণে তাদের সন্তানরা পড়ালেখা করতে পারছে না। তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অল্প বয়সেই তারা ঝরে যায়। কাজে জড়িয়ে পড়ে। পাশের একটি গ্রামে স্কুল থাকলেও সেখানে ওই গ্রামের শিশুদের ভর্তি করা হয় না। বেশ দূরে ফুটারমাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের ভর্তি হতে হয়। কিন্তু বিদ্যালয়টি দূরে হওয়ায় শিশুরা সেখানে যেতে চায় না।
তাছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো নয়। মাটির রাস্তা হওয়ায় বৃষ্টির দিনে কাঁদা মাড়িয়ে যেতে হয়। তাই তারা শিশু বয়স থেকেই কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী চান এলাকায় একটি বিদ্যালয় দ্রুত স্থাপন করা হোক। তারা যেন দেখে যেতে পারেন তাদের সন্তানরা লেখাপড়া করছে। ইতোমধ্যে তারা একটি বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা খাতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনামাফিক কাজ করা হচ্ছে। যেসব গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে হৈবতপুর গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন তাদের গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। সরকারি বিধিবিধানের আলোকে কীভাবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’