ঢাকা ০৮:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিরোজা বেগমের জন্মদিনে ডিজিটাল আর্কাইভ চালু

নজরুলের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল। ফিরোজা বেগম শুধু নামই করেননি, হয়ে উঠেছিলেন নজরুলসংগীতের এক প্রধান স্তম্ভ। সেই ফিরোজা বেগমের গান ও জীবন নিয়ে তৈরি হলো আর্কাইভ। গতকাল শিল্পীর ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হলো সেই আর্কাইভ।

নামের এই ডিজিটাল আর্কাইভে থাকছে তাঁর সংগীত, সাক্ষাৎকার, তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদনসহ দুর্লভ সব সংগ্রহ। ফিরোজা বেগমকে নিয়ে এই আর্কাইভ তৈরি করেছে এসিআই ফাউন্ডেশন।

গতকাল রাতে উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘ফিরোজা বেগম নজরুল–দর্শনকে শুধু আত্মস্থই করেননি, প্রচারও করেছেন। সারা বিশ্বে নজরুলের গানকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই উদ্যোগকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

ফিরোজা বেগমের সহোদর ও এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম. আনিস উদ দৌলার ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। অনুষ্ঠান সঞ্চালক সাদিয়া আফরিন মল্লিক তাঁর লিখিত বক্তৃতা পড়ে শোনান।

সেখানে বলা হয়, ‘শিল্পী ফিরোজা বেগমের ঐশ্বরিক কণ্ঠ এবং তাঁর একাগ্র সাধনায় নজরুলসংগীত এই উপমহাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ মহান শিল্পীর জীবন ও কর্মের অনেকটাই এই আর্কাইভে সংরক্ষিত করা হয়েছে। অনেক সময় সম্মানিত ব্যক্তির কাজ হারিয়ে যায়।

ফিরোজা বেগমের ক্ষেত্রে এটি হবে না।’ তাঁর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, ফিরোজা বেগম সংশ্লিষ্ট কোনো স্মৃতিচিহ্ন থাকলে যেন তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে অংশগ্রহণকারী অতিথিরা ওয়েবসাইটের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায়  সম্পাদক মতিউর রহমান ফিরোজা বেগমের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘১৯৬৯ সালে কোনো এক সময় তিনি থাকতেন হয় ভূতের গলি অথবা সেন্ট্রাল রোডে। তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম লং প্লের রেকর্ডে তাঁর অটোগ্রাফ নিতে। অপরিচিত ছিলাম। অনেক ভয়ে ভয়ে গেলাম। তিনি সানন্দে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি আমার জন্য অনেক আনন্দের।’

মতিউর রহমান বলেন, ২০১১ সালে তাঁর কাছে মেরিল থেকে আজীবন সম্মাননা জানানোর প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেদিন তাঁর বাসায় অনেক কথার মধ্যে তাঁর আত্মজীবনী তৈরি করার বিষয়েও কথা হয়েছিল।

মতিউর রহমান দুঃখ করে বলেন, ‘২০১১ সালের পর খুব বেশি দিন তিনি আর বেঁচে থাকেননি। কাজটাও আর হয়নি। তাঁর মতো একজন শিল্পীর জীবনকথা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সাংসদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমরা অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি, ফেলছি। ফিরোজা আপার মতো অসাধারণ শিল্পীর গান যদি হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি খুব দুঃখজনক হবে। এই কাজটি তাঁরা হাতে নিয়েছেন। তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ।’

শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ভারতীয় সংগীতের বিশেষ একটি অঙ্গ মিড়। সেই মিড়টা ফিরোজা বেগম বড় মোলায়েম করে মনের মধ্যে গেঁথে দিতেন। এ রকম ঐশ্বরিক একটা গুণ ছিল তাঁর মধ্যে।’

সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘তিনি শুধু একজন শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন সাধক। সাধনা করে সংগীতটাকে নিজের মজ্জার মধ্যে ঢুকিয়ে, তারপরে গাইতে শুরু করেছেন। এ কারণে মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে, মনে রাখবে।’

ফিরোজা বেগমের ভাই সাবেক সচিব ও গীতিকার মোহাম্মদ আসাফ উদ দৌলাহ্ বলেন, ‘যেসব শিল্পী অমর থাকেন, তাঁদের গান সংরক্ষণ না করলে শুনতে পারব না। লেখকের কাছে বই যা, শিল্পীর কাছে তা রেকর্ড। সংরক্ষণ থাকলে বোঝা যায়।’ শিল্পীর ঘরোয়াভাবে গাওয়া গানগুলো সংরক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মা ফিরোজা বেগমকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন শাফিন আহমেদ। বলেন, ‘মা ছিলেন পরিপূর্ণ শিল্পী। ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে নজরুলসংগীত এক ভিন্নমাত্রা অর্জন করেছিল। নজরুলের চেতনাকে ছুঁতে পারত দর্শক তাঁর গান শুনে।’

ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে শিল্পীর স্মৃতিচারণা করেন শিল্পী অনুপ ঘোষাল। ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান শিল্পী আরতি মুখার্জি, হৈমন্তী শুক্লা, শ্রীকান্ত আচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন দুই বাংলার সংগীতশিল্পীসহ ফিরোজা বেগমের সুহৃদেরা।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ফিরোজা বেগমকে নিয়ে সংগীত পরিচালক আজাদ রহমানের একটি ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়। মা অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি সুস্মিতা আনিস। তাঁর বক্তব্য পড়ে শোনান সঞ্চালক সাদিয়া আফরিন মল্লিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

ফিরোজা বেগমের জন্মদিনে ডিজিটাল আর্কাইভ চালু

আপডেট সময় ১১:৫৪:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

নজরুলের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল। ফিরোজা বেগম শুধু নামই করেননি, হয়ে উঠেছিলেন নজরুলসংগীতের এক প্রধান স্তম্ভ। সেই ফিরোজা বেগমের গান ও জীবন নিয়ে তৈরি হলো আর্কাইভ। গতকাল শিল্পীর ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হলো সেই আর্কাইভ।

নামের এই ডিজিটাল আর্কাইভে থাকছে তাঁর সংগীত, সাক্ষাৎকার, তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদনসহ দুর্লভ সব সংগ্রহ। ফিরোজা বেগমকে নিয়ে এই আর্কাইভ তৈরি করেছে এসিআই ফাউন্ডেশন।

গতকাল রাতে উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘ফিরোজা বেগম নজরুল–দর্শনকে শুধু আত্মস্থই করেননি, প্রচারও করেছেন। সারা বিশ্বে নজরুলের গানকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই উদ্যোগকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

ফিরোজা বেগমের সহোদর ও এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম. আনিস উদ দৌলার ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। অনুষ্ঠান সঞ্চালক সাদিয়া আফরিন মল্লিক তাঁর লিখিত বক্তৃতা পড়ে শোনান।

সেখানে বলা হয়, ‘শিল্পী ফিরোজা বেগমের ঐশ্বরিক কণ্ঠ এবং তাঁর একাগ্র সাধনায় নজরুলসংগীত এই উপমহাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ মহান শিল্পীর জীবন ও কর্মের অনেকটাই এই আর্কাইভে সংরক্ষিত করা হয়েছে। অনেক সময় সম্মানিত ব্যক্তির কাজ হারিয়ে যায়।

ফিরোজা বেগমের ক্ষেত্রে এটি হবে না।’ তাঁর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, ফিরোজা বেগম সংশ্লিষ্ট কোনো স্মৃতিচিহ্ন থাকলে যেন তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে অংশগ্রহণকারী অতিথিরা ওয়েবসাইটের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায়  সম্পাদক মতিউর রহমান ফিরোজা বেগমের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘১৯৬৯ সালে কোনো এক সময় তিনি থাকতেন হয় ভূতের গলি অথবা সেন্ট্রাল রোডে। তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম লং প্লের রেকর্ডে তাঁর অটোগ্রাফ নিতে। অপরিচিত ছিলাম। অনেক ভয়ে ভয়ে গেলাম। তিনি সানন্দে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি আমার জন্য অনেক আনন্দের।’

মতিউর রহমান বলেন, ২০১১ সালে তাঁর কাছে মেরিল থেকে আজীবন সম্মাননা জানানোর প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেদিন তাঁর বাসায় অনেক কথার মধ্যে তাঁর আত্মজীবনী তৈরি করার বিষয়েও কথা হয়েছিল।

মতিউর রহমান দুঃখ করে বলেন, ‘২০১১ সালের পর খুব বেশি দিন তিনি আর বেঁচে থাকেননি। কাজটাও আর হয়নি। তাঁর মতো একজন শিল্পীর জীবনকথা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সাংসদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমরা অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি, ফেলছি। ফিরোজা আপার মতো অসাধারণ শিল্পীর গান যদি হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি খুব দুঃখজনক হবে। এই কাজটি তাঁরা হাতে নিয়েছেন। তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ।’

শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ভারতীয় সংগীতের বিশেষ একটি অঙ্গ মিড়। সেই মিড়টা ফিরোজা বেগম বড় মোলায়েম করে মনের মধ্যে গেঁথে দিতেন। এ রকম ঐশ্বরিক একটা গুণ ছিল তাঁর মধ্যে।’

সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘তিনি শুধু একজন শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন সাধক। সাধনা করে সংগীতটাকে নিজের মজ্জার মধ্যে ঢুকিয়ে, তারপরে গাইতে শুরু করেছেন। এ কারণে মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে, মনে রাখবে।’

ফিরোজা বেগমের ভাই সাবেক সচিব ও গীতিকার মোহাম্মদ আসাফ উদ দৌলাহ্ বলেন, ‘যেসব শিল্পী অমর থাকেন, তাঁদের গান সংরক্ষণ না করলে শুনতে পারব না। লেখকের কাছে বই যা, শিল্পীর কাছে তা রেকর্ড। সংরক্ষণ থাকলে বোঝা যায়।’ শিল্পীর ঘরোয়াভাবে গাওয়া গানগুলো সংরক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মা ফিরোজা বেগমকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন শাফিন আহমেদ। বলেন, ‘মা ছিলেন পরিপূর্ণ শিল্পী। ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে নজরুলসংগীত এক ভিন্নমাত্রা অর্জন করেছিল। নজরুলের চেতনাকে ছুঁতে পারত দর্শক তাঁর গান শুনে।’

ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে শিল্পীর স্মৃতিচারণা করেন শিল্পী অনুপ ঘোষাল। ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান শিল্পী আরতি মুখার্জি, হৈমন্তী শুক্লা, শ্রীকান্ত আচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন দুই বাংলার সংগীতশিল্পীসহ ফিরোজা বেগমের সুহৃদেরা।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ফিরোজা বেগমকে নিয়ে সংগীত পরিচালক আজাদ রহমানের একটি ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়। মা অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি সুস্মিতা আনিস। তাঁর বক্তব্য পড়ে শোনান সঞ্চালক সাদিয়া আফরিন মল্লিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।