ডেক্স রিপোর্ট :ঘুম ভাঙার পর এক কাপ চায়ের সুঘ্রাণ অনেকের কাছেই পরম তৃপ্তির। কারো চাওয়া সকালের নাশতার পর এক কাপ গরম চা। আড্ডা কিংবা গল্পের আসর চা ছাড়া যেন জমেই না।
পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে ভিড়, সেও যেন আমাদের চিরচেনা দৃশ্য। কারোর লেবু চা, কারোর লিকার চা, কারোর আবার চা-কফি-দুধ মেশানো চা। নিত্যদিনের জীবনে চায়ে জড়িয়ে থাকার এমন গল্প অনেক।
জাতীয় চা দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকীতে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশে প্রথমবারের মতো ৪ জুনকে ‘জাতীয় চা দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে।
প্রথম জাতীয় চা দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার।’
১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম কোনো বাঙালি হিসাবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্মৃতির কারণে স্বাধীনতার পরেও দেশ পুনর্গঠনের সময় চা শিল্প নিয়ে চিন্তা করেছেন তিনি। চা শ্রমিকদের শিক্ষা, রেশন, সুপেয় পানি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অনেক কিছু করেছেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুদীর্ঘ ১৮০ বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে চা শিল্প গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। দেশের সাধারণ মানুষের সামাজিকতা, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনের সাথে চা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় চা দিবস-২০২১’ উদযাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং তিনি চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন গত দশ বছরে প্রায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশে সর্বাধিক ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়।
চা রপ্তানির পুরাতন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সরকার এর উৎপাদনের পাশাপাশি বিপণনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে ২০২০ সালে ১৯টি দেশে চা রপ্তানি করে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। এবং আমরা চা আইন ২০১৬ প্রণয়ন করেছি।’
আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৪ জুন সকাল ১০টায় জাতীয় চা দিবসের উদ্বোধন করা হবে। সেখানে দিনব্যাপী চা প্রদর্শন করা হবে। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত চা প্রদর্শন করবে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু প্যভেলিয়ন এবং শ্রীমঙ্গলস্থ টি মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শন করা হবে।
চা বোর্ডের ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, ১৮০০ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। তারই ধারাবহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য ১৮২৮ সালে জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ বিলম্বিত হয়।
১৮৪০ সালে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা কুন্ডদের বাগান নামে পরিচিত। এই বাগানটিও প্রতিষ্ঠার পরপরই বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর ১৮৫৪ সালে মতান্তরে ১৮৪৭ সালে সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোডের কাছে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলতঃ মালনীছড়াই বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান।
দেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে শুধুমাত্র দুইটি জেলায় চা আবাদ করা হতো, একটি সিলেট জেলায় যা ‘সুরমা ভ্যালি’ নামে পরিচিত ছিল, আর অপরটি চট্টগ্রাম জেলায় যা ‘হালদা ভ্যালি’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা ভ্যালিকে ছয়টি ভ্যালিতে ভাগ করা হয়েছে যথাক্রমে: লস্করপুর ভ্যালি, বালিশিরা ভ্যালি, মনু-দলই ভ্যালি, লংলা ভ্যালি এবং নর্থ সিলেট ভ্যালি। হালদা ভ্যালিকে করা হয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যালি৷