ঢাকা ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ বছর ধরে মাসুদ রানার একমাত্র সঙ্গি হুইল চেয়ার

সালাউদ্দীন আহম্মেদ, পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ  মাসুদ রানা, বয়স তখন তার ১৪ থেকে ১৫বছর। ক্লাস নাইন এ পড়–য়া একজন স্কুলের ছাত্র। হঠাৎ তার বাবা আব্দুর রহিমের রোড এক্সিডেন্ট হয়।

পরিবারের একমাত্র উপার্যনকারী ব্যক্তি আব্দুর রহিম পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে যায়। রহিমের চিকিৎসা খরচ, সংসার চালানো অর্থ সম্বলহীন পরিবারে তখন মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ। বাদ্ধ হয়ে লেখা পড়া বাদ দিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সংসারের প্রয়োজনে হাল ধরতে হয় বাবার হাড়িপাতিল এর ব্যবসার।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরিওয়ালা হিসেবে ব্যবসার কাজে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। গ্রাম-গঞ্জে, আচাচে-কানাচে। আয় করেছেন দিনে অন্তত ৫শ থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত। একটানা ৫ বছর ব্যবসা করে নিজের উপার্যনে বাবা আব্দুর রহিমের চিকিৎসা খরচ যোগিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। বাবাকে বাইরে যেন বাইরে কোথাও কাজে যেতে না হয় সে কারণে চকবিষ্ণপুর বাজারে ছোট্ট একটি ফলের দোকান দিয়ে আয় করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মাসুদ রানা।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা সুস্থতা হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন মাসুদ রানা। বন্ধ হয়ে যায় তার হাড়ি পাতিলের ব্যবসা। একেবারে বন্ধ হয়ে যায় তার আয় রোজগার। এদিকে অসুস্থ ছেলে মাসুদ রানাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে তার পরিবার। দিনে পর দিন ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায় রহিমের একামাত্র আয়ের উৎস ফলের দোকানটিও। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছুটতে থাকেন দেশের নামি দামি হাসপাতাল গুলোতে। কয়েকবার উন্নত চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা করিয়েও কোন রোগ ধরা পড়েনি। ধীরে ধীরে একজন তরতাজা তরুণ যুবক বলহীন দেহে পরিণত হয়ে গেল।

মাসুদ রানার আসলে কি রোগ হয়েছে? কেন তিনি প্রতিবন্ধীর মতো হলহীণ হয়ে যাচ্ছেন? এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে একটানা ৪বছর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের স্মরণাপন্ন হন মাসুদ রানার পরিবার। কিন্তু এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারগণ ‘মেডিকেল বোর্ড’ বসিয়েও কোন ভালো ফল আসেনি। তবে অনেকেই মনে করছেন দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিলে হয়তো সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন মাসুদ রানা।

কিন্তু আব্দুর রহিমের অভাবে টানাপোড়নের সংসারে ছেলেকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া একেবারেই অসম্ভব বলে জানিয়েছেন পরিবার। আজ প্রায় ৭বছর যাবৎ বিচানায় পড়ে আছেন মাসুদ রানা। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি হুইল চেয়ার ছাড়া জোটেনি সরকারি কোন সাহায্য সহানুভূতি। মাসুদের চলাফেরার একমাত্র ভরসা এখন সেই ছোট্ট একটি হুইল চেয়ার। সেটিও তিনি একা ঠেলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। কোন রকমে ডান পায়ে সে কিছু শক্তি পেলেও বাম পা পুরোপুরি অকেজ হয়ে গেছে। মাসুদ রানা পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের চকবিষ্ণপুর বেলপুকুর গ্রামের মোঃ আব্দুর রহিমের ছেলে।

এমতাবস্থায় আব্দুর রহিম জানান, জানিনা আর কত দিন এভাবে জীবনের সাথে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হবে। সেও স্বপ্ন দেখছে সুস্থ হয়ে উঠার। একজন অসুস্থ, বিকলাঙ্গ, বিছানারত যুবক ছেলেকে লালনপালন করা যে কতটা কষ্টের তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ওর মা সুফিয়া বেগম সব সময় তাকে দেখা শুনা করে যাচ্ছেন জানিয়ে আব্দুর রহিম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি বিদেশে নিয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।

আপনারাও মাসুদ রানার চিকিৎসার জন্য সাহায্য করুন এই নম্বরে (বিকাশ ০১৯৫৩-১২৩৯৬৩ মাসুদ রানা)।

 

ট্যাগস

সর্বাধিক পঠিত

৭ বছর ধরে মাসুদ রানার একমাত্র সঙ্গি হুইল চেয়ার

আপডেট সময় ০৪:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

সালাউদ্দীন আহম্মেদ, পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ  মাসুদ রানা, বয়স তখন তার ১৪ থেকে ১৫বছর। ক্লাস নাইন এ পড়–য়া একজন স্কুলের ছাত্র। হঠাৎ তার বাবা আব্দুর রহিমের রোড এক্সিডেন্ট হয়।

পরিবারের একমাত্র উপার্যনকারী ব্যক্তি আব্দুর রহিম পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে যায়। রহিমের চিকিৎসা খরচ, সংসার চালানো অর্থ সম্বলহীন পরিবারে তখন মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ। বাদ্ধ হয়ে লেখা পড়া বাদ দিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সংসারের প্রয়োজনে হাল ধরতে হয় বাবার হাড়িপাতিল এর ব্যবসার।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরিওয়ালা হিসেবে ব্যবসার কাজে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। গ্রাম-গঞ্জে, আচাচে-কানাচে। আয় করেছেন দিনে অন্তত ৫শ থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত। একটানা ৫ বছর ব্যবসা করে নিজের উপার্যনে বাবা আব্দুর রহিমের চিকিৎসা খরচ যোগিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। বাবাকে বাইরে যেন বাইরে কোথাও কাজে যেতে না হয় সে কারণে চকবিষ্ণপুর বাজারে ছোট্ট একটি ফলের দোকান দিয়ে আয় করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মাসুদ রানা।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা সুস্থতা হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন মাসুদ রানা। বন্ধ হয়ে যায় তার হাড়ি পাতিলের ব্যবসা। একেবারে বন্ধ হয়ে যায় তার আয় রোজগার। এদিকে অসুস্থ ছেলে মাসুদ রানাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে তার পরিবার। দিনে পর দিন ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায় রহিমের একামাত্র আয়ের উৎস ফলের দোকানটিও। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছুটতে থাকেন দেশের নামি দামি হাসপাতাল গুলোতে। কয়েকবার উন্নত চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা করিয়েও কোন রোগ ধরা পড়েনি। ধীরে ধীরে একজন তরতাজা তরুণ যুবক বলহীন দেহে পরিণত হয়ে গেল।

মাসুদ রানার আসলে কি রোগ হয়েছে? কেন তিনি প্রতিবন্ধীর মতো হলহীণ হয়ে যাচ্ছেন? এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে একটানা ৪বছর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের স্মরণাপন্ন হন মাসুদ রানার পরিবার। কিন্তু এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারগণ ‘মেডিকেল বোর্ড’ বসিয়েও কোন ভালো ফল আসেনি। তবে অনেকেই মনে করছেন দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিলে হয়তো সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন মাসুদ রানা।

কিন্তু আব্দুর রহিমের অভাবে টানাপোড়নের সংসারে ছেলেকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া একেবারেই অসম্ভব বলে জানিয়েছেন পরিবার। আজ প্রায় ৭বছর যাবৎ বিচানায় পড়ে আছেন মাসুদ রানা। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি হুইল চেয়ার ছাড়া জোটেনি সরকারি কোন সাহায্য সহানুভূতি। মাসুদের চলাফেরার একমাত্র ভরসা এখন সেই ছোট্ট একটি হুইল চেয়ার। সেটিও তিনি একা ঠেলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। কোন রকমে ডান পায়ে সে কিছু শক্তি পেলেও বাম পা পুরোপুরি অকেজ হয়ে গেছে। মাসুদ রানা পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের চকবিষ্ণপুর বেলপুকুর গ্রামের মোঃ আব্দুর রহিমের ছেলে।

এমতাবস্থায় আব্দুর রহিম জানান, জানিনা আর কত দিন এভাবে জীবনের সাথে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হবে। সেও স্বপ্ন দেখছে সুস্থ হয়ে উঠার। একজন অসুস্থ, বিকলাঙ্গ, বিছানারত যুবক ছেলেকে লালনপালন করা যে কতটা কষ্টের তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ওর মা সুফিয়া বেগম সব সময় তাকে দেখা শুনা করে যাচ্ছেন জানিয়ে আব্দুর রহিম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি বিদেশে নিয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।

আপনারাও মাসুদ রানার চিকিৎসার জন্য সাহায্য করুন এই নম্বরে (বিকাশ ০১৯৫৩-১২৩৯৬৩ মাসুদ রানা)।

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471