স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ নওগাঁর রানীনগরে কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে আতাইকুলা গ্রামের বিশ্ববাঁধের তজের মোড় থেকে বিলমনছুর মাঠের বড়ধর খাল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা শুরু করেছেন।
রানীনগর উপজেলার সবচেয়ে বড় মাঠ ‘বিলমনছুর’। এ মাঠে আবাদি জমি রয়েছে প্রায় দুই হাজার বিঘা। কিন্তু মাঠ থেকে ফসল ঘরে নিয়ে আসার মতো কোনো রাস্তা নাই। এতে করে মাঠ থেকে ফসল বাড়ি নিয়ে আসতে কৃষকদের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি উৎপাদন খরচও হয় বেশি।
এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন মহলে বছরের পর বছর ঘুরেছেন কৃষকরা। অবশেষে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছেন তারা। এতে অংশ নিয়েছে উপজেলার আতাইকুলাসহ আশেপাশের গ্রামের শতশত কৃষক।
এই মাঠে আতাইকুলা, হরিশপুর, নয়া হরিশপুর ও কুনুজ গ্রামের কৃষকদের প্রায় দুই হাজার বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। কাগজে কলমে এখানে রাস্তা থাকলেও বাস্তবে তা নেই।
এ মাঠের জমি বছরের প্রায় ছয়মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। কৃষকরা প্রধান ফসল হিসেবে এখানে ইরি-বোরো ধান চাষ করে থাকেন। এছাড়া মাঠের উঁচু কিছু জমিতে বিভিন্ন রবি ফসলও চাষ করে থাকেন তারা।
মাঠে যাওয়ার কোন রাস্তা না থাকায় কৃষকদের আসা-যাওয়া করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। তেমনি মাঠ থেকে ফসল কেটে ঘরে নিয়ে আসতেও বেশি মজুরি গুনতে হতো।
রাস্তাটি নির্মাণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আশার বাণী শুনালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে এ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে এবং নকশার রাস্তাটি বাস্তবে রুপ দিতে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় বাসিন্দারা।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে কৃষকরা নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা শুরু করেছেন।
বর্ষা মৌসুম আসার আগেই রাস্তার দুই পাশে ব্লক দিয়ে পাঁকা না করলে এটি আবার নষ্ট হয়ে যাবে। রাস্তাটি স্থায়ীভাবে ব্লক দিয়ে রক্ষা করার দাবি জানান তারা।
আতাইকুলা গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন ও রনজিত সাহা বলেন, নকশায় রাস্তা থাকলেও বাস্তবে ছিল না। জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।
দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে আমরা নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে তৈরি করেছি। রাস্তা যেহেতু তৈরি করা হয়েছে তা রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি। সরকার থেকে একটা বরাদ্দ দিলে রাস্তাটি সংস্কারসহ রক্ষা করা সম্ভব।
গ্রামবাসীরা নিজ উদ্যোগে রাস্তাটি তৈরি করার প্রশংসা করেন রানীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, রাস্তাটিকে স্থায়ী করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের রানীনগরের প্রকৌশলী শাহ মো. শহীদুল হক বলেন, ইতোমধ্যে রাস্তাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। রাস্তাটি দ্রুত নিবন্ধন করে পাকা করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।