ঢাকা ১২:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :

নদী গর্ভে বিলীনের পথে নওগাঁয় ৩শ বছরের পুরনো বিদ্যালয়

আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ  ১৭৫৭সালে স্থাপিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে ছোট যমুনা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হবার পথে।

নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ভাঙ্গছে কিছু না কিছু অংশ। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ চলে গেছে নদীগর্ভে।

৩শ বছর আগের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক এই বিদ্যাপীঠটিকে রক্ষার জন্য দ্রুত সরকারকে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

১৭৫৭ সালে আটগ্রামের তৎকালীন জমিদার অনগ্রসর এই বিল এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে স্থাপন করেন এই বিদ্যালয়টি।

বিদ্যাপিঠটির এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী ও আরেক পাশ দিয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। বিদ্যালয়টি মূলত ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত।

বর্তমানে নদী ও বিলে আবৃত ৫টি গ্রামের প্রায় ২শত শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যাপীঠে পাঠ গ্রহণ করে। কিন্তু আটগ্রাম মানুষের শিক্ষার উন্নয়ন-

 

ঘটলেও পিছু ছাড়েনি তাদের দুর্ভোগ এবং রাস্তা-ঘাট বিহীন চলাফেরাসহ নদী ভাঙ্গন। উন্নয়নের কোন ছোঁয়াই এই মানুষদের স্পর্শ করেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাথে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কালিকাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম আটগ্রাম।

গ্রামের পূর্বদিকে ছোট যমুনা নদী দক্ষিণে আত্রাই নদী এবং পশ্চিমে রয়েছে বিরাট আকারের বিল। বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামের মানুষের এপাড়া থেকে ওপাড়ায় যাতায়াতে একমাত্র ভরসা নৌকা।

ছোট যমুনা নদীর তীরেই অবস্থিত আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয়ে ৬টি কক্ষ বিশিষ্ট ভঙ্গুর ২টি ভবন রয়েছে।

বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের অধিকাংশ অংশ, স্থানীয় ভাবে নির্মাণ করা সুরক্ষা প্রাচীর ইতিমধ্যেই চলে গেছে নদীগর্ভে। আর বিদ্যালয়ের দক্ষিণে রয়েছে বড় একটি ভাঙ্গন।

ভাঙ্গনটি ক্রমান্বয়ে বিদ্যালয় ভবনের দিকে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে ভাঙ্গন ভবনের কাছাকাছি আসায় বিদ্যালয় রক্ষা করা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা।

এছাড়াও বিদ্যাপীঠটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিদ্যাপীঠটি ঐতিহাসিক হলেও এখনো নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। এক কথায় বলা যায় আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই এখনো স্পর্শ করেনি বিদ্যালয়টিকে।

নদী ভাঙ্গনের পর যে খেলার মাঠটি অবশিষ্ট রয়েছে সেটাও ব্যবহারের যোগ্য নয়। কক্ষ সংকটের কারণে ৬টি ভঙ্গুর শ্রেণীকক্ষের মধ্যে ৫টি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।

নেই একটি ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। নেই সুরক্ষা প্রাচীর। এই প্রাচীর না থাকার কারণে যে কোন সময় শিক্ষার্থীরা সবার অজান্তে নদীতে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক খেলার উপকরণগুলো থাকার কথা থাকলেও নেই এই বিদ্যাপীঠে। নিরানন্দ শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় অবহেলিত এই অ লের শিশুদের।

কিন্তু এই সব সমস্যাগুলো দূর করার কোন সুদৃষ্টি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষরা শুধু আসে আর বস্তাভরা আশ্বাস দিয়ে যায়। আশ্বাসগুলো কখনই বাস্তবতার আলো দেখতে পায় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল উদ্দিন জানান, ১একর ২৪ শতক জমির উপর ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের সময় ১৭৫৭সালে বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিতা করেন তৎকালীন জমিদার।

বিদ্যালয়টি পিছিয়ে পড়া এলাকার শিশুদের মাঝে এখনোও যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে সেবা দিয়ে আসছে। তিনি আরও জানান বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ৮/১০শতক জমির অংশ নদীতে চলে গেছে।

পানির স্রোত এতো বেশি যে ভাঙ্গন ক্রমেই বেড়ে এগিয়ে আসছে বিদ্যালয়ের প্রধান ভবনের দিকে। ভাঙ্গনের কারণে বর্তমানে ভবনটি ধসে পড়ার আশংকার মুখে রয়েছে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা নদীর পাড়ে বনজ গাছ রোপণ করে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারছি না।

এছাড়াও নানা সমস্যায় বিদ্যালয়টি জর্জরিত হলেও এখন এটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরী ভাবে উত্তর ও পূর্ব পাশ দিয়ে স্থায়ী ভাবে নদীর তীরে-

প্যালাসাইট, গাইড ওয়াল ও ব্লক দিয়ে সুরক্ষা প্রাচীর দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। তা না হলে ভাঙ্গনে বিদ্যালয়টি যে কোন সময়ে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির আগামী সভায় বিদ্যালয় ভাঙ্গনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন এই বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থার উপর একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনটি অনুমোদন পেয়ে অর্থ বরাদ্দ দিলেই ঐতিহাসিক এই বিদ্যাপীঠটিকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা করার কাজ শুরু করা হবে।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

নদী গর্ভে বিলীনের পথে নওগাঁয় ৩শ বছরের পুরনো বিদ্যালয়

আপডেট সময় ০২:২৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই ২০২০

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ  ১৭৫৭সালে স্থাপিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে ছোট যমুনা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হবার পথে।

নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ভাঙ্গছে কিছু না কিছু অংশ। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ চলে গেছে নদীগর্ভে।

৩শ বছর আগের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক এই বিদ্যাপীঠটিকে রক্ষার জন্য দ্রুত সরকারকে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

১৭৫৭ সালে আটগ্রামের তৎকালীন জমিদার অনগ্রসর এই বিল এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে স্থাপন করেন এই বিদ্যালয়টি।

বিদ্যাপিঠটির এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী ও আরেক পাশ দিয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। বিদ্যালয়টি মূলত ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত।

বর্তমানে নদী ও বিলে আবৃত ৫টি গ্রামের প্রায় ২শত শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যাপীঠে পাঠ গ্রহণ করে। কিন্তু আটগ্রাম মানুষের শিক্ষার উন্নয়ন-

 

ঘটলেও পিছু ছাড়েনি তাদের দুর্ভোগ এবং রাস্তা-ঘাট বিহীন চলাফেরাসহ নদী ভাঙ্গন। উন্নয়নের কোন ছোঁয়াই এই মানুষদের স্পর্শ করেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাথে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কালিকাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম আটগ্রাম।

গ্রামের পূর্বদিকে ছোট যমুনা নদী দক্ষিণে আত্রাই নদী এবং পশ্চিমে রয়েছে বিরাট আকারের বিল। বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামের মানুষের এপাড়া থেকে ওপাড়ায় যাতায়াতে একমাত্র ভরসা নৌকা।

ছোট যমুনা নদীর তীরেই অবস্থিত আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয়ে ৬টি কক্ষ বিশিষ্ট ভঙ্গুর ২টি ভবন রয়েছে।

বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের অধিকাংশ অংশ, স্থানীয় ভাবে নির্মাণ করা সুরক্ষা প্রাচীর ইতিমধ্যেই চলে গেছে নদীগর্ভে। আর বিদ্যালয়ের দক্ষিণে রয়েছে বড় একটি ভাঙ্গন।

ভাঙ্গনটি ক্রমান্বয়ে বিদ্যালয় ভবনের দিকে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে ভাঙ্গন ভবনের কাছাকাছি আসায় বিদ্যালয় রক্ষা করা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা।

এছাড়াও বিদ্যাপীঠটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিদ্যাপীঠটি ঐতিহাসিক হলেও এখনো নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। এক কথায় বলা যায় আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই এখনো স্পর্শ করেনি বিদ্যালয়টিকে।

নদী ভাঙ্গনের পর যে খেলার মাঠটি অবশিষ্ট রয়েছে সেটাও ব্যবহারের যোগ্য নয়। কক্ষ সংকটের কারণে ৬টি ভঙ্গুর শ্রেণীকক্ষের মধ্যে ৫টি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।

নেই একটি ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। নেই সুরক্ষা প্রাচীর। এই প্রাচীর না থাকার কারণে যে কোন সময় শিক্ষার্থীরা সবার অজান্তে নদীতে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক খেলার উপকরণগুলো থাকার কথা থাকলেও নেই এই বিদ্যাপীঠে। নিরানন্দ শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় অবহেলিত এই অ লের শিশুদের।

কিন্তু এই সব সমস্যাগুলো দূর করার কোন সুদৃষ্টি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষরা শুধু আসে আর বস্তাভরা আশ্বাস দিয়ে যায়। আশ্বাসগুলো কখনই বাস্তবতার আলো দেখতে পায় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল উদ্দিন জানান, ১একর ২৪ শতক জমির উপর ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের সময় ১৭৫৭সালে বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিতা করেন তৎকালীন জমিদার।

বিদ্যালয়টি পিছিয়ে পড়া এলাকার শিশুদের মাঝে এখনোও যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে সেবা দিয়ে আসছে। তিনি আরও জানান বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ৮/১০শতক জমির অংশ নদীতে চলে গেছে।

পানির স্রোত এতো বেশি যে ভাঙ্গন ক্রমেই বেড়ে এগিয়ে আসছে বিদ্যালয়ের প্রধান ভবনের দিকে। ভাঙ্গনের কারণে বর্তমানে ভবনটি ধসে পড়ার আশংকার মুখে রয়েছে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা নদীর পাড়ে বনজ গাছ রোপণ করে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারছি না।

এছাড়াও নানা সমস্যায় বিদ্যালয়টি জর্জরিত হলেও এখন এটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরী ভাবে উত্তর ও পূর্ব পাশ দিয়ে স্থায়ী ভাবে নদীর তীরে-

প্যালাসাইট, গাইড ওয়াল ও ব্লক দিয়ে সুরক্ষা প্রাচীর দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। তা না হলে ভাঙ্গনে বিদ্যালয়টি যে কোন সময়ে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির আগামী সভায় বিদ্যালয় ভাঙ্গনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন এই বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থার উপর একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনটি অনুমোদন পেয়ে অর্থ বরাদ্দ দিলেই ঐতিহাসিক এই বিদ্যাপীঠটিকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা করার কাজ শুরু করা হবে।