অর্থনীতি ডেস্কঃ চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) বাংলাদেশের চালের উৎপাদন ৩ কোটি ৬০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্যশস্যটি উৎপাদনে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ছিল চতুর্থ। চীন ও ভারতের পরেই তৃতীয় স্থানটি ছিল ইন্দোনেশিয়ার। তবে এবার ইন্দোনেশিয়াকে সরিয়ে সেই অবস্থানে উঠে আসছে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য নিয়ে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় হওয়ার এ পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)।
প্রতিবেদনে বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি কৃষি পণ্যের উৎপাদনের তুলনা করা হয়েছে।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সারা বিশ্বে ৫০ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়াতে পারে চালের উৎপাদন। যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি।
চীন সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন করবে। দেশটি চলতি অর্থবছরে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদনের মাধ্যমে শীর্ষ অবস্থান করবে।
চীনের পরই আছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। দেশটির চাল উৎপাদন দাঁড়াবে ১১ কোটি ৮০ লাখ টনে। এরপরই ৩ কোটি ৬০ লাখ টন উৎপাদন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসবে বাংলাদেশ।
আর দীর্ঘদিন ধরেই তিন নম্বরে থাকা ইন্দোনেশিয়া এবার চতুর্থ অবস্থানে নেমে যাবে। দেশটিতে চালের উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টন।
জানা গেছে, দেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে চালের উৎপাদন। চলতি অর্থবছরে আমন মৌসুমেও রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। আবার গত আউশ মৌসুমে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশে উৎপাদিত চালের ৫৫ শতাংশের বেশি আসে বোরো ধান থেকে। বাকিটা আসে আউশ ও আমন থেকে। দেশের জমিগুলোতে বছরে একই জমিতে তিন বার ধান উৎপাদন করা হয়।
বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা ধান আবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। এ অঞ্চলের উপযোগী ধানের জাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে হাওর এলাকায় ধানের বাম্পার ফলনের মাধ্যমে দেশের চালের উৎপাদনের একটি বড় পরিবর্তন আসতে পারে। সর্বশেষ চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ টন বাড়তে পারে চালের উৎপাদন।
তিন মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির সম্মিলিতি ফলাফলই বাংলাদেশ শীর্ষ তিনে চলে আসার প্রকৃত কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউএসডিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার চাল উৎপাদনে শীর্ষ ১২টি দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পরই থাকছে ভিয়েতনাম। দেশটিতে এবার উৎপাদন দাঁড়াবে ২ কোটি ৭৫ লাখ টন।
এছাড়া থাইল্যান্ডে ২ কোটি ৪ লাখ টন। মিয়ানমারে এক কোটি ৩১ লাখ টন, ফিলিপাইনে ১ কোটি ১০ লাখ টন। জাপানে ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টন, পাকিস্তানে ৭৫ লাখ টন, ব্রাজিলে ৬৯ লাখ ও কম্বোডিয়ার প্রায় ৫৮ লাখ টন চাল উৎপাদন হবে।
ইন্দোনেশিয়া চলতি বছর খারাপ পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন ধরে রাখতে পারেনি। তবে সামনের বছরে দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তখন বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় স্থান ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, কয়েক বছর ধরেই দেশে চালের উৎপাদনে একটা ধারাবাহিকতা আছে। সেটার কারণেই বাংরাদেশের উল্লম্ফনটা এসেছে।
তবে সেটা ধরে রাখতে হলে কৃষি খাতে গবেষণা যেমন বাড়াতে হবে তেমনি সম্প্রসারণেও গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নত মানের বীজ সরবরাহ বাড়াতে হবে, কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে।
শুধু জাত উদ্ভাবনেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। সেগুলোকে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করতে হবে। ধানের স্টোরেজ ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন।
বিপণন ব্যবস্থায় কৃষক ও সরকারকে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে। উৎপাদনে কৃষকের খরচ কমিয়ে আনা এবং বিপণন ব্যবস্থায় আরও পদক্ষেপ নিলেই ধরে রাখা যাবে এ অবস্থান।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে জানান, দেশের কৃষকরাই এ অর্জনের প্রধান দাবিদার। এর সঙ্গে এ খাতে নিয়োজিত সম্প্রসারণকর্মী, বিজ্ঞানী, গবেষক ও বেসরকারি খাতের অবদান রয়েছে।
তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শুধু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপকরণ, আর্থিক ও নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের সরকার প্রধান কৃষি ও কৃষকদের জন্য অন্তঃপ্রাণ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের চাল উৎপাদনে বৈশ্বিক এ সফলতা এসেছে।
প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও চাল উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে দেশে। ঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে তা আবাদে লবণাক্ত, খরা ও হাওর অঞ্চলের কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ফলে এসব এলাকায় এখন একটির পরিবর্তে দুটি ধানের আবাদ হচ্ছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি ধান করা যায় কিনা, সেটি নিয়েও ভাবছি আমরা।
এবার হাওরে ধান কাটায় সফলতার জন্য যান্ত্রিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কৃষকের জন্য আর্থিক প্রণোদনা থেকে শুরু করে বিপণন, সরবরাহ ও উপকরণের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের খাদ্যশস্যের চাহিদা নিজেদের উৎপাদনের মাধ্যমেই পূরণ করতে হবে।