ঢাকা ০৭:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায়: ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের

ফাইল ফটো

স্টাফ রিপোর্টারঃ  প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে বন্ধ রয়েছে দেশের সুপার মার্কেট, মার্কেট ও দোকানসমূহ।

আর এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। যাদের প্রতিষ্ঠানে ০১ থেকে ১৫ জনের নিচে কর্মচারী রয়েছে। দেশে এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৬ লাখ।

এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা লোকসানের শিকার হচ্ছেন তারা। এ হিসাবে গত ৩০ দিনে (২৫ মার্চ থেকে) মোট ৩৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে এসব ব্যবসায়ীদের।

অন্যদিকে বন্ধের মধ্যে পহেলা বৈশাখের বাজারও হাতছাড়া হয় ব্যবসায়ীদের। শুধু পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে শতভাগ দেশের বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে এমন ব্যবসায়ীদের লোকসানের পরিমাণ  আরও ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বৈশাখের বাজার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টতা সূত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব সুপার মার্কেট।

মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিও। এর আগে চার দফায় সময় বাড়ানো হয়, তবে সার্বিক পরিবেশ এখনও অনুকূলে না আসায় আরও সময় বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলছে, করোনা ভাইরাসের কারণে মার্কেটসমূহে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়া এবং মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে প্রথমে সাত দিনের বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

তবে পরিবেশ এখনও পুরোপুরি ইতিবাচক না হওয়ায় সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে মোট চার দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।

দোকান বন্ধ থাকায় এসব ব্যবসায়ীদের ঘরেই দিন কাটলেও অনেকেরই সঞ্চয় শেষের দিকে। অন্যদিকে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন নিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে পথে বসতে হবে এমন আশঙ্কা অনেক ব্যবসায়ীদের।

নান্নু খিলগাঁও বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী। নিজের দোকানে কাজের পাশাপাশি আরও দুইজনের কর্মসংস্থান তার দোকান থেকে। তিনি বলেন, গত ২৫ মার্চ থেকে আমার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।

এখন দোকান খুলতে পারছি না, বেতন-ভাড়া, পরিবারের খরচ মেটানো কষ্টকর। এভাবে চললে পথে বসতে হবে আমাদের।
নান্নুর মতো আরও লাখো ব্যবসায়ীর চিত্রও একই।

অন্যদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলছে, সারা দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৬ লাখ। এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে, যা গত ৩০ দিনে (২৫ মার্চ থেকে) লোকসানের পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

শুধু পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে মাটিরহাড়ি, মিষ্টি, পোশাকসহ শতভাগ দেশের বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে এমন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ আরও ৬ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন  বলেন, সারাদেশে একজনের অধিক ও ১৫ জনের নিচে কর্মচারী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৬ লাখ।

এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা করে লোকসানে পড়ছেন। তারা দোকান ভাড়া, কর্মচারির বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ বিপুল পরিমাণ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবশ্যই সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। যেভাবেই হোক এটা নিয়ে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তবে কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ঔষধের দোকান এবং নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রয়েছে।

ট্যাগস

করোনায়: ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের

আপডেট সময় ০২:০০:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২০

স্টাফ রিপোর্টারঃ  প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে বন্ধ রয়েছে দেশের সুপার মার্কেট, মার্কেট ও দোকানসমূহ।

আর এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। যাদের প্রতিষ্ঠানে ০১ থেকে ১৫ জনের নিচে কর্মচারী রয়েছে। দেশে এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৬ লাখ।

এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা লোকসানের শিকার হচ্ছেন তারা। এ হিসাবে গত ৩০ দিনে (২৫ মার্চ থেকে) মোট ৩৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে এসব ব্যবসায়ীদের।

অন্যদিকে বন্ধের মধ্যে পহেলা বৈশাখের বাজারও হাতছাড়া হয় ব্যবসায়ীদের। শুধু পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে শতভাগ দেশের বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে এমন ব্যবসায়ীদের লোকসানের পরিমাণ  আরও ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বৈশাখের বাজার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টতা সূত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব সুপার মার্কেট।

মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিও। এর আগে চার দফায় সময় বাড়ানো হয়, তবে সার্বিক পরিবেশ এখনও অনুকূলে না আসায় আরও সময় বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলছে, করোনা ভাইরাসের কারণে মার্কেটসমূহে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়া এবং মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে প্রথমে সাত দিনের বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

তবে পরিবেশ এখনও পুরোপুরি ইতিবাচক না হওয়ায় সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে মোট চার দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।

দোকান বন্ধ থাকায় এসব ব্যবসায়ীদের ঘরেই দিন কাটলেও অনেকেরই সঞ্চয় শেষের দিকে। অন্যদিকে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন নিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে পথে বসতে হবে এমন আশঙ্কা অনেক ব্যবসায়ীদের।

নান্নু খিলগাঁও বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী। নিজের দোকানে কাজের পাশাপাশি আরও দুইজনের কর্মসংস্থান তার দোকান থেকে। তিনি বলেন, গত ২৫ মার্চ থেকে আমার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।

এখন দোকান খুলতে পারছি না, বেতন-ভাড়া, পরিবারের খরচ মেটানো কষ্টকর। এভাবে চললে পথে বসতে হবে আমাদের।
নান্নুর মতো আরও লাখো ব্যবসায়ীর চিত্রও একই।

অন্যদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলছে, সারা দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৬ লাখ। এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে, যা গত ৩০ দিনে (২৫ মার্চ থেকে) লোকসানের পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

শুধু পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে মাটিরহাড়ি, মিষ্টি, পোশাকসহ শতভাগ দেশের বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে এমন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ আরও ৬ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন  বলেন, সারাদেশে একজনের অধিক ও ১৫ জনের নিচে কর্মচারী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৬ লাখ।

এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা করে লোকসানে পড়ছেন। তারা দোকান ভাড়া, কর্মচারির বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ বিপুল পরিমাণ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবশ্যই সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। যেভাবেই হোক এটা নিয়ে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সরকারের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তবে কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ঔষধের দোকান এবং নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রয়েছে।