যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক নীতির কঠোর বাস্তবায়নে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। একদিনে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা এই দেশের অভিবাসন প্রশাসনের ইতিহাসে এক বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপ মূলত হোয়াইট হাউসের চাপ ও অভিবাসন নীতির প্রয়োগের গতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) একদিনে ২২০০’রও বেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এটি সংস্থার ইতিহাসে সর্বোচ্চ একদিনের গ্রেপ্তারের রেকর্ড। এই গ্রেপ্তার অভিযান দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে চালানো হয় হোয়াইট হাউসের অনুপ্রেরণায়। সূত্রের খবর, গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই আইসিই-এর ‘আটকের বিকল্প’ (এটিডি) প্রোগ্রামের আওতায় ছিলেন, যা সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে নজরদারি করে।
আইসিই কর্তৃপক্ষের নতুন কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এটিডি প্রোগ্রামে থাকা অভিবাসীদের একটি গণ বার্তা পাঠিয়ে নির্ধারিত সময়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা হাজির হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আইনজীবীরা বলছেন, অনেকের চূড়ান্ত নির্বাসন আদেশ না থাকলেও এই গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে। এনবিসি নিউজের কাছে আইসিই-এর পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয় হোয়াইট হাউসের উপ-প্রধান স্টিফেন মিলারের চাপের পর। গত মাসে তিনি আইসিই কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, প্রতিদিন অন্তত ৩,০০০ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করতে হবে, না হলে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ঘোষণা দিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ অভিবাসীকে নির্বাসিত করা হবে এবং সীমান্ত নীতির অধীনে ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক’ অভিবাসীদের টার্গেট করা হবে।
তবে সাবেক আইসিই কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় এবং শুধুমাত্র অপরাধমূলক অতীত থাকা ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে কাজ করলে সংস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। আইসিই তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের শেষ নাগাদ ২০,০০০-এরও বেশি অভিবাসী গোড়ালি মনিটর ব্যবহার করছিলেন এবং ৯৮.৫% তাদের সাক্ষাতে উপস্থিত থাকেন, যার ফলে তারা গ্রেপ্তারের জন্য সহজ টার্গেট হয়ে উঠেছেন।
অবশেষে, এই ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হচ্ছে। তবে আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের পদক্ষেপের বাস্তবতা এবং মানবিক দিক বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন। আগামী দিনে অভিবাসন নীতির সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং মানবাধিকারের সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।