ঢাকা ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ধর্মঘটে অচল ভারত

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতজুড়ে। নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে এবার ধর্মঘট শুরু করেছেন দেশটির চিকিৎসকরা।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ডাকে শনিবার সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

আইএমএর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে, হাসপাতালগুলোতে বিমানবন্দরের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে নারী চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইএমএ বলেছে, ‘চিকিৎসক, বিশেষ করে নারীরা পেশার প্রকৃতির কারণে সহিংসতার শিকার হন। হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসের ভেতরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব।’

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছ, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের এই ধরনের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি। কিন্তু আরজি করের ঘটনার পর দেশের চিকিৎসক সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় চিকিৎসকদের সবচেয় বড় সংগঠন আইএমএর অন্তত চার লাখ সদস্য শনিবার কর্মবিরতি পালন করবেন। আইএমএ ছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি একাধিক মেডিকেল ইউনিয়ন এই ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। মূলত অস্ত্রপচার (ওপিডি) এবং বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। তবে এ সময় জরুরি পরিষেবাগুলো চালু রাখা হবে।

দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএমএ) জানিয়েছে, তারাও শনিবারের কর্মবিরতিতে যোগ দেবে। ডিএমএ-র তরফে জানানো হয়েছে, আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে জরুরি পরিষেবাও বন্ধ রাখা হবে।

এর আগে গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

এদিকে চিকিৎসকদের দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালনের মধ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করেছে।

এতে বলা হয়, দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে অভিযোগ দায়ের না করা হয় তা হলে সংস্থার প্রধান দায়ী থাকবেন।

নির্দেশিকায় আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে। তারা মৌখিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগী বা তার আত্মীয়রা এই সহিংসতা করছে।

উল্লেখ্য, মৌমিতা দেবনাথ নামে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রথমে কলকাতায় আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন শুরু করলেও ক্রমেই এতে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। এরপরই রাস্তায় নামে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল বিরোধী বিজেপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।

এ ঘটনায় শুরু থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএম থেকে বিজেপি সবাই একসুরেই তোপ দেগেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের বাঁচানোর অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ চেয়ে ধরনায় বসেছেন বিজেপি বিধায়করা।

অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন বিরোধী দলগুলো তার সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ধর্মঘটে অচল ভারত

আপডেট সময় ০৬:২৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতজুড়ে। নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে এবার ধর্মঘট শুরু করেছেন দেশটির চিকিৎসকরা।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ডাকে শনিবার সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

আইএমএর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে, হাসপাতালগুলোতে বিমানবন্দরের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে নারী চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইএমএ বলেছে, ‘চিকিৎসক, বিশেষ করে নারীরা পেশার প্রকৃতির কারণে সহিংসতার শিকার হন। হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসের ভেতরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব।’

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছ, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের এই ধরনের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি। কিন্তু আরজি করের ঘটনার পর দেশের চিকিৎসক সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় চিকিৎসকদের সবচেয় বড় সংগঠন আইএমএর অন্তত চার লাখ সদস্য শনিবার কর্মবিরতি পালন করবেন। আইএমএ ছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি একাধিক মেডিকেল ইউনিয়ন এই ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। মূলত অস্ত্রপচার (ওপিডি) এবং বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। তবে এ সময় জরুরি পরিষেবাগুলো চালু রাখা হবে।

দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএমএ) জানিয়েছে, তারাও শনিবারের কর্মবিরতিতে যোগ দেবে। ডিএমএ-র তরফে জানানো হয়েছে, আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে জরুরি পরিষেবাও বন্ধ রাখা হবে।

এর আগে গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

এদিকে চিকিৎসকদের দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালনের মধ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করেছে।

এতে বলা হয়, দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে অভিযোগ দায়ের না করা হয় তা হলে সংস্থার প্রধান দায়ী থাকবেন।

নির্দেশিকায় আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে। তারা মৌখিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগী বা তার আত্মীয়রা এই সহিংসতা করছে।

উল্লেখ্য, মৌমিতা দেবনাথ নামে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রথমে কলকাতায় আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন শুরু করলেও ক্রমেই এতে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। এরপরই রাস্তায় নামে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল বিরোধী বিজেপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।

এ ঘটনায় শুরু থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএম থেকে বিজেপি সবাই একসুরেই তোপ দেগেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের বাঁচানোর অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ চেয়ে ধরনায় বসেছেন বিজেপি বিধায়করা।

অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন বিরোধী দলগুলো তার সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে।