দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার জানিয়েছেন বিদেশিদের চাপে গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগগুলোর কোনো তদন্ত করবে না পাকিস্তান সরকার ।
পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সরকারপ্রধানের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল।
জবাবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান কি যুক্তরাষ্ট্রকে ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার তদন্ত করতে বলেছিল? তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না।
তার দাবি, অন্যান্য দেশ এবং আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে মতামত দিয়েছে। কাকার বলেন, যদি কোনো অভিযোগ থাকে, আমরা আমাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী সেগুলো খতিয়ে দেখবো, অন্য দেশের দাবির প্রেক্ষিতে নয়।
সম্প্রতি পাকিস্তানের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা। এসব অভিযোগের তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিতে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক কাকার বলেন, এদের কথাকে ‘পবিত্র’ বা অকাট্য সত্য মনে করা উচিত নয়। কারণ তারা সরকারের পক্ষে কথা বলছেন না।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তদন্তে কোনো কমিশন গঠন করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি আগামীতে নির্বাচিত সরকারের ওপর নির্ভর করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে গোপন চাপ থাকার বিষয়টি অনুমান মাত্র। প্রতিটি রাজনৈতিক শক্তিই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেয়েছে।
তিনি বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সবচেয়ে বেশি সৈন্য মোতায়েন ছিল। আর সেখানেই (ইমরান খান সমর্থিত) স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিজয়ী হয়েছেন।
আনোয়ারুল হক কাকার জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেছিল এবং সে কারণেই জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
এসময় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) পক্ষ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসিপি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা তা সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, আমি ইসিপি’কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সঠিক এবং তাদের রক্ষা করা আমার নৈতিক দায়িত্ব।
নির্বাচনের ফল ঘোষণায় বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সময় লেগেছিল প্রায় ৬৬ ঘণ্টা।
পাকিস্তানি সরকারপ্রধান আরও দাবি করেন, সুইডেনে এ ধরনের কাজে ১০ থেকে ১১ দিন সময় লাগে। আর ইন্দোনেশিয়া ফলাফল ঘোষণায় লেগেছিল প্রায় এক মাস।
ইন্টারনেট-মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে কাকার জানান, সরকার নিরাপত্তা হুমকির কারণে ভোটের দিন মোবাইল ফোন সেবা বন্ধ রেখেছিল। তার কথায়, আমরা ফলাফল ঘোষণার বিলম্ব সহ্য করতে পারি, কিন্তু কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে দিতে পারি না।