ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাচিতে চলে বাবুল সরকারের জীবন

এক সংগ্রামী জীবনের উপাখ্যান নওগাঁর নিয়ামতপুর গ্রামের বাবুল সরকার । দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চুল দাড়িতে কাচি চালিয়ে আসছেন তিনি । ফুটপাতে জীবিকার এ আত্ব কাহিনী তুলে এনেছেন নাহিদ হাসান ।

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের খরাপ গ্রামের বাবুল সরকার। জীবনের ১২ বছর বয়স থেকেই দরিদ্রতার জন্য বেঁচে নিয়েছিলেন নাপিত এর ব্যবসা। মানুষের চুল,দাঁড়ি কাটাই তার একমাত্র পেশা।

প্রথম দিকে অন্যের সেলুনে চুল কাঁটার কর্ম করতেন বাবুল সরকার। সেইসময় মাসে বেতন পেতেন ১৫ টাকা। পরবর্তীতে নিজে একাই শুরু করেন এই পেশা। প্রায় ৪০ বছর পার করেছেন এই নাপিতের পেশায় বাবুল সরকার। নাপিতের ব্যবসা করেই বিয়ে দিয়েছেন ৩ কন্যা সন্তানকে। দামী রংচঙয়ের ভিআইপি কোনো সেলুনে না ফুটপাতেই ৪০ বছর ধরে মানুষের চুল,দাঁড়ি কাঁটার কাজ করছেন বাবুল সরকার। ১৯৭১ সালে বাবুল সরকার যুদ্ধের কারনে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতে। যুদ্ধ শেষ হলে আবার ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপরে পরিবারের অস্বছলতার কারনে কিশোর বয়সেই নেমে পড়েন বাস্তবতার জগতে। নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য বাবুল সরকার একজন গরীবের নাপিত।

মাসে একবার প্রায় সবাইকে যেতে হয় সেলুনে চুল,দাঁড়ি সাইজ করার জন্য।  বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকার ভেদে চুল,দাঁড়ি কাটতে সেলুনে সর্বনিম্ন খরচ হয় একশো থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। সেখানে এখনো ৩০ টাকার চুল এবং ২০ টাকায় দাঁড়ির সাইজ করা যায় বাবুল সরকারের গরীবের ফুটপাতের সেলুনে। সাপ্তাহিক বিভিন্ন বাজার গুলোতে একটা মোড়া  আর চিয়ার পেতেই কাযক্রম চালান বাবুল সরকার। বর্তমান দিন শেষে  ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয় বাবুল সরকারের। যা দিয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে হিমসিম খেতে হচ্ছে গরীবের নাপিত বাবুল সরকারকে।

বাবুল সরকারের মন্তব্যে প্রকাশ পায় একসময় নামি-দামি সেলুন যখন গ্রাম পর্যায়ে ছিলোনা, সেইসময় বাবুল সরকার খুব  সকালে বিভিন্ন সাপ্তাহিক বাজার গুলোতে আসতেন। দুপুরের খাবার সময় টা পেতেন না তিনি। কাজের চাপে কোনোকোনো দিন রাতে বাসায় গিয়েই দুপুর এবং রাতের খাবার খেতে হতো একসঙ্গে। সেইসময়ে ইনকাম ও ভালো হতো পরিবার নিয়ে সুখী ছিলেন বাবুল সরকার। কিন্তু বর্তমান রংচঙয়ের সেলুনের কারনে ভাটা পড়েছে তার ব্যবসায়। যাও বা রোজগার হয় তা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে হিমসিম খেতে হতে পরিবার নিয়ে।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বেনীপুর সাপ্তাহিক বাজারে খুর এবং কাঁচি হাতে বাবুল সরকারের দেখা মিলে। তার তথ্য মতে এই বাজারে দীর্ঘ ৩০ বছর খুর এবং কাঁচি নিয়ে ফুটপাতে নাপিতের ব্যবসা করছেন বাবুল সরকার। এই বাজারে তার অতিতের ব্যবসার কাযক্রমের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আপ্লুত হয় তিনি। বলেন বেশি না ১৫ বছর আগেও এই বাজারে তিনি রোজ শনিবারে আসতেন। কাজের চাপে দম ফেলার সময় পেতেন না তিনি। কিন্তু এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো কোনো সপ্তাহে ইজারাদারের খাজনা পযন্ত দিনে পারেন না তিনি। দিন শেষে কয়েকবার শূন্য পকেট নিয়েই বাসায় ফিরেছেন তিনি।

এই সময়  বাজারের ইজারাদারের সদস্য লতিফর রহমানের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, একসময় বাবুল সরকার অনেক সকালে আসতো। এখানে হোটেল দুপুরের খাবার কিনে খেতো। তার ইনকাম ভালো হতো। কিন্তু এখন আগের মতো ইনকাম হয়না। কোনো কোনো দিন আমাদের খাজনাও দিতে পারেনা, আমরাও জোর করিনা।

ট্যাগস

কাচিতে চলে বাবুল সরকারের জীবন

আপডেট সময় ১০:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

এক সংগ্রামী জীবনের উপাখ্যান নওগাঁর নিয়ামতপুর গ্রামের বাবুল সরকার । দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চুল দাড়িতে কাচি চালিয়ে আসছেন তিনি । ফুটপাতে জীবিকার এ আত্ব কাহিনী তুলে এনেছেন নাহিদ হাসান ।

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের খরাপ গ্রামের বাবুল সরকার। জীবনের ১২ বছর বয়স থেকেই দরিদ্রতার জন্য বেঁচে নিয়েছিলেন নাপিত এর ব্যবসা। মানুষের চুল,দাঁড়ি কাটাই তার একমাত্র পেশা।

প্রথম দিকে অন্যের সেলুনে চুল কাঁটার কর্ম করতেন বাবুল সরকার। সেইসময় মাসে বেতন পেতেন ১৫ টাকা। পরবর্তীতে নিজে একাই শুরু করেন এই পেশা। প্রায় ৪০ বছর পার করেছেন এই নাপিতের পেশায় বাবুল সরকার। নাপিতের ব্যবসা করেই বিয়ে দিয়েছেন ৩ কন্যা সন্তানকে। দামী রংচঙয়ের ভিআইপি কোনো সেলুনে না ফুটপাতেই ৪০ বছর ধরে মানুষের চুল,দাঁড়ি কাঁটার কাজ করছেন বাবুল সরকার। ১৯৭১ সালে বাবুল সরকার যুদ্ধের কারনে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতে। যুদ্ধ শেষ হলে আবার ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপরে পরিবারের অস্বছলতার কারনে কিশোর বয়সেই নেমে পড়েন বাস্তবতার জগতে। নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য বাবুল সরকার একজন গরীবের নাপিত।

মাসে একবার প্রায় সবাইকে যেতে হয় সেলুনে চুল,দাঁড়ি সাইজ করার জন্য।  বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকার ভেদে চুল,দাঁড়ি কাটতে সেলুনে সর্বনিম্ন খরচ হয় একশো থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। সেখানে এখনো ৩০ টাকার চুল এবং ২০ টাকায় দাঁড়ির সাইজ করা যায় বাবুল সরকারের গরীবের ফুটপাতের সেলুনে। সাপ্তাহিক বিভিন্ন বাজার গুলোতে একটা মোড়া  আর চিয়ার পেতেই কাযক্রম চালান বাবুল সরকার। বর্তমান দিন শেষে  ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয় বাবুল সরকারের। যা দিয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে হিমসিম খেতে হচ্ছে গরীবের নাপিত বাবুল সরকারকে।

বাবুল সরকারের মন্তব্যে প্রকাশ পায় একসময় নামি-দামি সেলুন যখন গ্রাম পর্যায়ে ছিলোনা, সেইসময় বাবুল সরকার খুব  সকালে বিভিন্ন সাপ্তাহিক বাজার গুলোতে আসতেন। দুপুরের খাবার সময় টা পেতেন না তিনি। কাজের চাপে কোনোকোনো দিন রাতে বাসায় গিয়েই দুপুর এবং রাতের খাবার খেতে হতো একসঙ্গে। সেইসময়ে ইনকাম ও ভালো হতো পরিবার নিয়ে সুখী ছিলেন বাবুল সরকার। কিন্তু বর্তমান রংচঙয়ের সেলুনের কারনে ভাটা পড়েছে তার ব্যবসায়। যাও বা রোজগার হয় তা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে হিমসিম খেতে হতে পরিবার নিয়ে।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বেনীপুর সাপ্তাহিক বাজারে খুর এবং কাঁচি হাতে বাবুল সরকারের দেখা মিলে। তার তথ্য মতে এই বাজারে দীর্ঘ ৩০ বছর খুর এবং কাঁচি নিয়ে ফুটপাতে নাপিতের ব্যবসা করছেন বাবুল সরকার। এই বাজারে তার অতিতের ব্যবসার কাযক্রমের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আপ্লুত হয় তিনি। বলেন বেশি না ১৫ বছর আগেও এই বাজারে তিনি রোজ শনিবারে আসতেন। কাজের চাপে দম ফেলার সময় পেতেন না তিনি। কিন্তু এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো কোনো সপ্তাহে ইজারাদারের খাজনা পযন্ত দিনে পারেন না তিনি। দিন শেষে কয়েকবার শূন্য পকেট নিয়েই বাসায় ফিরেছেন তিনি।

এই সময়  বাজারের ইজারাদারের সদস্য লতিফর রহমানের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, একসময় বাবুল সরকার অনেক সকালে আসতো। এখানে হোটেল দুপুরের খাবার কিনে খেতো। তার ইনকাম ভালো হতো। কিন্তু এখন আগের মতো ইনকাম হয়না। কোনো কোনো দিন আমাদের খাজনাও দিতে পারেনা, আমরাও জোর করিনা।