দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিট, বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
নওগাঁ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) খালেকুজ্জামান আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁর রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা খালেকুজ্জামান অভিযোগ করেন, ‘শুধু ট্রাক প্রতীকের নির্বাচন করার কারণে নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর, হাজিনগর, ভাবিচা ও রসুলপুরে ইউনিয়নে অন্তত ৮০টি গভীর নলকূপে (ডিপ টিউবওয়েল) তালা মেরে দিয়েছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা। এত দিন এসব গভীর নলকূপ বৈধভাবে পরিচালনা করতেন তাঁরা সবাই আমার কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
চন্দননগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর ও করমজাই গ্রামে দুটি পুকুর সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মাছ করে আসছিলেন। কিন্তু ভোটের পর দিন ওই পুকুর দুটিতে নৌকার সমর্থকেরা বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ ভেসে উঠলে বেড়জালে মাছ ধরে প্রকাশ্যে ভুরিভোজ খায়। দুটি পুকুর থেকে প্রায় ৬০ মণ মাছ ধরা হয়েছে। এতে মৎস্যজীবীদের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নৌকার প্রার্থীর অনুসারী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আমার কর্মী-সমর্থকদের মারধর, আমার ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের এসব অন্যায়-অত্যাচারের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু নির্বাচনের পরে নৌকার প্রার্থীরা সমর্থকেরা ভোটের পর দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে আমার কর্মী-সমর্থকদের মারধর, তাঁদেরকে মারধর করে গ্রামছাড়া করা, আমার কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি পরিচালিত গভীর নলকূপগুলোতে তালা মেরে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, জোর করে পুকুরের মাছ মেরে ভুরিভোজ (বনভোজন) খাওয়া এবং দোকনপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা এলাকায় এসব নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। নিরন্তর আমার নেতাকর্মীদের ভয়ভীতির মধ্যে রেখেছে। ট্রাকে ভোট দেওয়ার কারণে অনেক নেতাকর্মী বাড়িছাড়া। আমি নিজে এবং ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করার পরেও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় এলাকায় একটা আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।’
নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতার জন্য দায়ী সন্ত্রাসী অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক হামলা, মারধর, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করার তালিকা দেন খালেকুজ্জামান।
নির্বাচনপরবর্তী নৈরাজ্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে খালেকুজ্জামান বলেন, ‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জনগণের ভোটে চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি।
এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেননি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মনোনয়নবঞ্চিততের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিলে নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনে আমি ৭৬ হাজার ১৯৩ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী সাধন চন্দ্র মজুমদারের কাছে পরাজিত হয়। আমি বিশ্বাস করি, যাঁরা ট্রাক ও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। আমার সমর্থকদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করা মানে আওয়ামী লীগের ওপর অন্যায়-অত্যাচার। নির্বাচন পরবর্তী নৈরাজ্য বন্ধের জন্য অচিরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
#