বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করলেও গত তিনটি সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটে বিদেশি পর্যবেক্ষদের আগ্রহ বেশি রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩৮ জন ও দশমে মাত্র চারজন বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন।
এ ছাড়া বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ ৯১ জন পর্যবেক্ষণে থাকবেন। গত সংসদ নির্বাচনে ৮১টি দেশি সংস্থা পর্যবেক্ষণের অনুমতি পেলেও এবার ৯৬টি দেশি সংস্থার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব সংস্থার ২২ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত এবং অন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন।
এর বাইরে বাংলাদেশে বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা (বিদেশি) ছিলেন ৬৪ জন। বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ কর্মকর্তাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। অবশ্য ২০১৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ ও দশম সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। পরে এই দুটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল তারা। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের পরও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাত্র চারজন বিদেশি এবং স্থানীয় ৩৫টি সংস্থার আট হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি ছিল ২০০৮ সালে। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনে ৫৯৩ জন বিদেশি এবং এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন দেশি ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। এর আগে ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন ২২৫ জন বিদেশি এবং দুই লাখ ১৮ হাজার দেশি পর্যবেক্ষক।
১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার দেশি এবং ২৬৫ জন বিদেশি ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৩০ হাজার দেশি এবং ৫৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময় ছিল ৭ ডিসেম্বর। এরই মধ্যে আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাচ্ছে না ইইউ। তবে তাদের একটি বিশেষজ্ঞদল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। চার সদস্যের দলটি এরই মধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। আফ্রিকান ইলেকটোরাল অ্যালায়েন্স থেকে ১১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। তাঁদের সবাই উগান্ডার নাগরিক।
কমনওয়েলথ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটও (এনডিআই) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ঢাকায় অবস্থান করছে। ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। এবারও সে ধরনের আবেদন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ২৯ কর্মকর্তাকে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে অ্যাক্রেডিটেশন (অনুমতিপত্র) দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আবেদনগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্বিতীয় ধাপের কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনে বিলম্ব হওয়ায় আবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে যাঁরা ভোট দেখতে আসতে চাইছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ১৫৬ জন পর্যবেক্ষক ও ৯১ জন সাংবাদিক।