আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠলো না পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার রানের চাপায় শেষ হলো পাকিস্তানের রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জেতার স্বপ্ন। অজি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও পাকিস্তানি ব্যাটারদের উইকেট ছুড়ে ফেলে আসার দিনে পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারালো অস্ট্রেলিয়া। অথচ শুরুটা দারুণ করেছিল পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হক। ১২৭ বলে ১৩৪ রান তুলে দিয়েছেন আবদুল্লাহ শফিক আর ইমাম উল হক। অবশেষে শফিকের আউটে ভেঙেছে এই জুটি।
মার্কাস স্টয়নিস বল হাতে নিয়েই পেয়েছেন সাফল্য। তাকে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন শফিক। ৬১ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে ৭টি চার আর ২টি ছক্কা হাঁকান পাকিস্তানি ওপেনার।মার্কাস স্টয়নিস বল হাতে নিয়েই পেয়েছেন সাফল্য। তাকে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন শফিক। ৬১ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে ৭টি চার আর ২টি ছক্কা হাঁকান পাকিস্তানি ওপেনার।
আরেক ওপেনার ইমাম উল হককেও শিকার করেছেন স্টয়নিস। ৭১ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ইমাম করেন ৭০। দুই সেট ব্যাটার ফেরার পর বাবর আজমের ওপর ভরসা ছিল। কিন্তু অ্যাডাম জাম্পার নিচু হয়ে যাওয়া বল পুল খেলতে গিয়ে কামিন্সের দারুণ এক ক্যাচ হয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। বাবর আজমের আউটের পর পরস্থিতি কিছুটা সামাল দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল। ৪৮ বলে ৫৭ রানের একটি জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। যখন মনে হচ্ছিল উইকেটে টিকে গেছেন তারা ঠিক তখনই আঘাত হানেন প্যাট কামিন্স। কামিন্সের একটি বাউন্সার পুল করতে গিয়ে স্টয়নিসের হাতে ধরা পড়েন এই বা হাতি ব্যাটসম্যান। ২৩২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন ইফতিখার আহমেদ।
৩৭ তম ওভারে কামিন্সের এক ওভারে ২টি ছক্কা হাকান এই ইফতিখার। ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করা ইফতিখারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন জাম্পা। ৩৯তম ওভারের ৫ম বলে জাম্পার বল পায়ে লাগলে আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান্ত দেন। অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নিলে দেখা যায়, বল আগে প্যাডে লেগে ব্যাটে লেগেছে এবং স্ট্যাম্পেই আঘাত হেনেছে। ৩ ছক্কা মেরে ২০ বলে ২৬ রানে করে দলকে ২৬৯ রানে রেখেই বিদায় নেন ইফতিখার। আরেক প্রান্তে আগলে ছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু তিনিও ইফতিখারের আউটের পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি। ৪১তম ওভারের ৫ম বলে সেই জাম্পার একটি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন। ৫টি চারের সহায়তায় ৪০ বলে ৪৬ রান করেছিলেন রিজওয়ান। কার্যত তখনই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ম্যাচে ফেরার কিঞ্চিত সম্ভাবনাটুকুও।
মোহাম্মদ নাওয়াজের ১৬ বলে ১৪ রান কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে পাকিস্তানের। তিনিও জাম্পার বলে স্টাম্পড আউট হন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি পাকিস্তান। ৪৫.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান করে পাকিস্তান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জাম্পা ৪টি, স্টয়নিস ও কামিন্স ২টি, হাজেলউড ও স্টার্ক ১টি করে উইকেট পান। বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর মিচেল মার্শ। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৬৭ রানের বড় পুঁজি গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানানোই যেন কাল হয়েছে পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজমের। এক ওপেনিং জুটি ভাঙতেই ঘাম ঝরেছে পাকিস্তানি বোলারদের। ওপেনিংয়ে ৩৩.৪ ওভারে ২৫৯ রান। মারকুটে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে জোড়া সেঞ্চুরিও তুলে নেন মিচেল মার্শ আর ডেভিড ওয়ার্নার। একটি উইকেটের জন্য রীতিমত হাহাকার করছিল পাকিস্তান।
অবশেষে ম্যারাথন ওপেনিং জুটিটি ভাঙেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। শর্ট ফাইন লেগে উসামা মীরের হাতে ক্যাচ দেন মার্শ। ১০৮ বলে ১২১ রানের ইনিংসে ১০টি বাউন্ডারি আর ৯টি ছক্কা হাঁকান মার্শ। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসও।
বিধ্বংসী ওপেনিং জুটি ভাঙার পরের বলে আরও একটি উইকেট তুলে নেন শাহিন আফ্রিদি। মিডঅনে তুলে মারতে গিয়ে বাবর আজমের ক্যাচ হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১ বলে ০) শেষের দিকে দুর্দান্ত বোলিং পাকিস্তানের, তবু অস্ট্রেলিয়ার ৩৬৭ অস্ট্রেলিয়ার আরেক ব্যাটিং স্তম্ভ স্টিভেন স্মিথকেও থিতু হতে দেননি উসামা মীর। লেগস্পিন বলে ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ডানহাতি এই ব্যাটারকে (৭)। অল্প সময়ের মধ্যে ৩টি উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ওয়ার্নার তার ইনিংসটি বড় করেছেন বেশ। ৪৩তম ওভারে এসে অবশেষে এই বিধ্বংসী ব্যাটারকে সাজঘরের পথ দেখান হারিস রউফ।
তবে ওয়ার্নার ততক্ষণে দেড়শ পেরিয়ে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহকে নিয়ে গেছেন ১৬৩ রানে। ১২৪ বলের মারকুটে ইনিংসে ১৪ বাউন্ডারির সঙ্গে ৯টি ছক্কা হাঁকান এই ওপেনার। তবে এটিই ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারসেরা নয়। তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটি ১৭৯ রানের। পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে একাই নেন ৫টি উইকেট। ৩ উইকেট শিকার হারিস রউফের।